ই-পেপার | শনিবার , ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গবন্ধু টানেল : দক্ষিণ চট্টগ্রামে সহজ যোগাযোগ ও শিল্পায়নের অবারিত সুযোগের হাতছানি

আবদুল হাকিম রানা, পটিয়া :

 

দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম কর্ণফূলীতে বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ চট্রগ্রামের মধ্যে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে অবারিত সম্ভাবনার স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করে তা তা আজ (২৮ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন দূয়ার খূলবে। এ নিয়ে দক্ষিণ চট্রগ্রামের পটিয়া, কর্ণফূলী, আনোয়ারা, চন্দনাইশ বাঁশখালী সহ ৮ টি উপজেলার মানুষের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

 

বিশেষ করে দক্ষিণ চট্রগ্রাম ও পর্যটন নগরী কক্সবাজার এবং পাহাড়ী কন্যা বান্দরবান এর পর্যটক ও সাধারণ মানুষ কে চট্টগ্রাম বিমান বন্দর এলাকায় যাতায়তে এ টানেল সহজ যোগাযোগ ও অনেক সময় সাশ্রয় করবে বলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান।তিনি বলেন এ অঞ্চলের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরগামী যাত্রীদের এতদিন নগরীর প্রায় ১৫/২০ কিলোমিটার পথ

 

পাড়ি দিতে গন্তব্য পৌঁছাতে হতো। এখন তারা টানেল দিয়ে কর্ণফূলীপার হলেই ঢুকতে পারবে বিমান বন্দরে। এতে তাদের সময় ও অর্থ দুই সাশ্রয় হবে। পাশপাশিএখানে বানিজ্যিক ক্ষেত্রে ও নব দিগন্ত সূচিত হবে।যে কোন পন্য সহজেই শহরে পৌঁছান যেমন যাবে তেমনি শহর থেকে ও যে কোন পন্য সহজে দক্ষিণ চট্রগ্রামের উপজেলা গুলোতে ব্যবসায়ীরা অনায়াসে নিয়ে আসতে পারবে।বিশেষ করে কৃষি, মৎস, দুগ্ব খামার ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে এ টানেল এখন এ অঞ্চলের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিকে পরিণত হয়েছে বলে উপকারভোগীরা মনে করছে।

 

পটিয়ার টিটন কুমার দে, বলেন, টানেল হওয়ায় মানুষের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। যাতায়তে সময় ও অর্থ দই বাচবে। আমরা পটিয়া থেকে বঙ্গবন্ধু সড়ক হয়ে ২০/২৫ মিনিটেই এখন শহরে যাতায়ত করতে পারবো। পটিয়ার পল্লী চিকিৎসক ডাঃ খোরশেদ বলেন, টানেল এর কারণে আমাদের সম্মান ও আভিজাত্য বাড়লে ও নিম্ম আয়ের মানুষের জন্য
এ টানেল বেশী টোল এর কারণে দেখা যাবে ছোয়া যাবে না অবস্থা। আমরা টোল সহনীয় পর্যায়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।

 

আনোয়ারার আহমদ কবীর বলেন, আনোয়ারা দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। টানে়ল হওয়ার কারণে এখানে শহরের পাশাপাশি অনেক শিল্পজোন গড়ে উঠবে। আমরা ৫/১০ মিনিটেই চট্রগ্রাম মহানগরীতে যাওযা আসা করতে পারবো।

 

বাশখালীর ব্যাংকার ইমরুল কায়েস বলেন, টানেল এখন পুরো দক্ষিণ চট্রগ্রামের স্বপ্ন দ্বারে পরিণত হয়েছে।বাশখালীতে বিদুৎ কেন্দ্র সহ অনেক শিল্প প্রতিষ্টান গড়ে উঠেছে। কিন্তু যোগাযোগ সহজ না থাকায় এখন সম্ভাবনা থাকা স্বত্বেও শিল্পায়ন হয়নি। আমার বিশ্বাস টানেলের বদৌলতে এখানে এখন স্থায়ী শিল্পায়ন হবে। পাশপাশি আমাদের উৎপাদিত কৃষি ও মৎস এবং লবণ দ্রুত রপ্তানি করা যাবে। এতে মানুষ দ্রুত স্বাভলম্বী হবে।

 

লোহাগাড়ার কায়সার হামিদ বলেন, টানেল একটি নতুন যোগাযোগ মাধ্যম, যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম হওয়ায় আমরা ও এর সুফল পাবো। দেশে বিদেশে বিমানে যাওয়ার জন্য এখন আমাদের সময় অনেক কম লাগবে।

 

সাতকানিয়ার নাজিম উদ্দিন বলেন, এটি যোগাযোগ ছাড়া ও এ অঞ্চলের পর্যটনের বিকাশ লাভে ও সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি।

সাধারণ মানুষের মধ্যে দক্ষিণ চট্রগ্রাম পরিবেশ আন্দোলনের আহবায়ক মহি উদ্দিন বকুল বলেন, টানেলটি বর্হিবিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জল করেছে। কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষের যাতায়তের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত টোল মোটেই সহায়ক নয়।

 

কার বাস সহ যে কোন যানবাহনে যে টোল আরোপ করা হয়েছে তা গণ পরিবহন সহ সাধারণ মানুষ বহনকারী যানবাহন গুলোর ক্ষেত্রে পর্ণবিবেচনার জন্য মানবিক আবেদন জানাচ্ছি।

 

অন্যতায় পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাবে। জনগন দুর্ভোগের মুখে পড়বে। জাপা (রওশন) দক্ষিণ জেলা সদস্য সচিব সাবেক কমিশনার নুরুল ইসলাম বলেন, কর্ণফূলী টানেল শিল্প বাণিজ্যের ক্ষেত্র নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে।

 

এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ করবে। এর কারণে দেশের অর্থনীতি চাঙা হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ ধার্যকৃত টোল বেশী হওয়ায় এর সুফল বঞ্চিত হবে। তিনি টোল সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার দাবি জানান। পটিয়া পৌর মেয়র আইয়ুব বাবুল বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নের্তৃত্বের কারণে এ টানেল হয়েছে।এটি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। এর কারণে পর্যটনে ও বাংলাদেশ আরো একধাপ এগিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।

 

আলাপকালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ অঞ্চলটি এখন শুধু
শহরের অংশই হবে না একটা গ্রোথ সেন্টার হিসেবে গড়ে উঠবে। তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৩ জুন দক্ষিণ চট্রগ্রামে পটিয়াকে সদর দপ্তর করে পটিয়া জেলা ঘোষনা করেছিলেন। যা সেই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনের কথা ছিল।

 

কিন্তু ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে স্ব- পরিবারে হত্যার কারণে এ জেলা আর আলোর মূখ দেখেনি। আমরা মনে করি
টানেলের কারণে চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ চট্রগ্রাম টু ইন ওয়ান সিটি হলে ও বিশাল চট্রগ্রামের বিপুল জনগোষ্ঠীকে প্রশাসনিক সেবার ক্ষেত্রে চট্রগ্রামে আরো দুটি জেলার প্রয়োজনীয়তা অনেকটা বেড়ে যাবে। যা অনুধাবন করা এখন সময়ের দাবি। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাবো।

পটিয়ার এমপি জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, আমি ১০ বছর আগেই পটিয়া আমজুর হাট থেকে জিরি কৈয়গ্রাম ব্রীজ হয়ে টানেলে যুক্ত করে বঙ্গবন্ধু সড়ক নির্মাণ করেছি।

 

এ সড়ক দিয়ে শুধু পটিয়া নয়, চট্রগ্রাম – বান্দরবান – কক্সবাজার – আরাকান সড়কের সকল যাত্রী সহজেই শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ও চট্রগ্রাম শহরে ঢুকতে পারবে।

 

এতে সহজ যোগাযোগ সহ শিল্প বানিজ্যের ক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। আমরা এ সুযোগ কাজে লাগাতে পটিয়ায় ইন্দ্রপুলের দক্ষিণে করল মৌজায় ১ হাজার একর জায়গায় নতুন শিল্পজোন গড়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। শিল্প মন্ত্রনালয় এর সম্ভাবতা ও যাচাই করে দেখছে।

 

তিনি আরো বলেন, টানেল ঘিরে সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি। এখন শিল্পকারখানা নগরকেন্দ্রিক থাকলেও টানেল চালু হলে নদীর ওপারেও তৈরি হবে সুযোগ।

 

ওপারেও তখন সম্প্রসারিত হবে শিল্পকারখানা। এতে চট্টগ্রাম শহরে যানবাহনের চাপ কমে যাবে। টানেলের সড়ক এক সময় এশিয়ান হাইওয়ের অংশ হয়ে দাঁড়াবে।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪