ই-পেপার | সোমবার , ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শুরু হয়েছে দীপাবলি উৎসবের প্রস্তুতিঃ কর্মব্যস্ত কুলাউড়ার মৃৎশিল্পীরা

সালেহ আহমদ (স’লিপক), সিলেটঃ

শেষ হলো দুর্গাপূজা। আর কিছুদিন পরই দীপাবলি। সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের এ প্রাণের উৎসবের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে বেশ জোরে শোরেই। দীপাবলিকে সামনে রেখে মাটির দীপ তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। উঠানে সারি সারি রাখা হয়েছে মাটির তৈরি দীপ।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হিংগাজিয়া চা বাগানে দীপাবলিকে সামনে রেখে দীপ তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। বানানো হচ্ছে সনাতন পদ্ধতিতে। পাহাড় থেকে পলিমাটি এনে এই মাটিকে কেটে হাত দিয়ে ভালো ভাবে নরম করে বানানোর উপযোগী করা হচ্ছে। ইট সিমেন্টের তৈরী চর্কী ঘুরানো হচ্ছে লাঠির সাহায্য হাত দিয়ে। চর্কীর মধ্যে ভাগে রাখা হয়েছে দীপ বানানো উপযোগী মাটি।
হাতের ইশারায় বানানো হচ্ছে এসব দীপ। তারপর একটি কাঠিতে বাধা সুতার সাহায্য কাটা হচ্ছে দীপ। এভাবেই একটি একটি করে দীপ বানানো হচ্ছে। চর্কী একবার ঘুরালে ৮-১০ মিনিট ঘুরে থাকে। এই সময়ে প্রায় ১৮ থেকে ২২টি কাঁচা দীপ বানানো সম্ভব হয়। কাঁচা দীপকে শুকাতে দেয়া হয় রোদে। ভালোভাবে শুকিয়ে যাওয়ার পর এটিকে আগুনে পুড়ানো হয়। ১৮ থেকে ২০ ঘন্টা পর আগুন নিভে গেলে বের করে আনা হয় আগুন থেকে।
মৃৎশিল্পী বিরিজ লাল কুমার জানান, শুরু হয়ে গেছে দীপ বানানোর কাজ। প্রতিবছর প্রায় এক মাস দীপ বানাতে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দীপাবলির দিন ঘরে ঘরে দীপ প্রজ্জ্বলিত করে থাকেন। কেউ ৫০টি আবার কেউ ১০০টি কেউবা ২০০ দীপ কিনে নিয়ে যান পরিবারের জন্য।
কয়েকটি গ্রাম থেকে সিজন ব্যবসায়ী সহ স্থানীয় ব্যাবসায়ীরা পাইকারি দামে কয়েক হাজার দীপ কিনে নিয়ে যান আমার কাছ থেকে। তারা তাদের গ্রামে খুচরা মূল্যে বিক্রি করেন। প্রতিবছর অনেক মানুষ খালিহাতে ফিরে যায় এবার চেষ্টা করছি যাতে সবার চাহিদা পূরন করা যায়। সমস্যা হচ্ছে কুলাউড়া উপজেলায় হাতেগুনা কয়েকজন এই পেশায় যুক্ত বলে চাহিদার চাইতে কম বানাতে পারি আমরা। সবাই তাদের চাহিদা মতো পায়না।
মৃতশিল্পী দশরথ জানান, সনাতন পদ্ধতিতে বানাতে অনেক সময় লাগে। যদি সরকার আমাদের আরও উন্নত ব্যবস্থা করে দিত তাহলে সারা বছর কমবেশি বানানো যেত৷ সেই সাথে হাঁরিয়ে যাওয়া এই শিল্পকে ধরে রাখতে পারতাম।
প্রতিবেশী যমুনা যাদব জানান, বিরিজ লালের পরিবার সহ এই গ্রামে আরও যারা এই পেশায় এখনো আছেন তারা সেই পাকিস্তান আমল থেকে এই পেশায় জড়িত। তবে দিন দিন বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে এই শিল্প।
স্থানীয়দের বলে, এই এলাকায় দুই বাড়িতে দীপ সহ হাড়ি পাতিল বনিয়ে থাকেন। হাতের নাগালে থাকায় বাজারে যেতে হয়না। যে কোন প্রয়োজন পড়লে কিনে আনা যায়৷ যেটি এখন বাজারেও সচরাচর পাওয়া যাচ্ছেনা।
এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪