ই-পেপার | শনিবার , ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রধান সড়কের বেহাল দশা : নিঝুমদ্বীপ ভ্রমণে ভোগান্তি

হানিফ সাকিব, হাতিয়া :

 

বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও জাতীয় অর্থনীতিতে পর্যটনের অবদান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে সবার মধ্যে জনসচেতনতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দিবসটি পালন করে আসছে। ‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’ প্রতিপাদ্যে ফেস্টিভ্যালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নানান আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডও।

 

দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ। মায়াবী হরিণ, সুদীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, বালুকাবেলার গর্ত থেকে বেরিয়ে ছোটাছুটিতে ব্যস্ত লাল কাঁকড়া দল, দিগন্ত বিস্তৃত বিশাল কেওড়া বাগান, সাগরের উত্তাল জলরাশি আর ঢেউয়ের গর্জন-সব মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা এ দ্বীপটি দেখতে প্রতি বছর দেশবিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘুরতে আসে ভ্রমণপ্রেমী হাজার হাজার পর্যটক। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দ্বীপের প্রধান সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে স্থানীয় জনগণ এবং পর্যটকদের। এতে করে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা থাকলেও শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অপার সৌন্দর্যমণ্ডিত এ দ্বীপটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে পর্যটকরা। পিছিয়ে পড়ছে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা দ্বীপটি।

 

জানা যায়, বৈচিত্র্যময় এ দ্বীপকে ২০০৮ সালের ১৩ এপ্রিল জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। ঘোষণার পর থেকে বেড়িবাঁধ, নতুন রাস্তা নির্মাণসহ অবকাঠামোগত তেমন কোনো উন্নয়ন না হলেও সম্প্রতি সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে দ্বীপের প্রতিটি গ্রাম। এতে করে আর্থসামাজিক উন্নয়নের পরিধি বাড়লেও শুধু রাস্তার কারণে তা দৃশ্যমান হচ্ছে না।

 

উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, আইলা প্রকল্পের আওতায় আরসিসি ঢালায়ের মাধ্যমে বন্দরটিলা ঘাট থেকে নামার বাজার বিচ পর্যন্ত প্রায় ১০.২ কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণ করা হয় ২০০৯ সালে। প্রতি বছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে সড়কটি একাধিকবার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় এই সড়কের ওপর দিয়ে ৫-৬ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হওয়ায় সড়কটির অনেক জায়গা ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। প্রতিটি জলোচ্ছ্বাসের পর ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সামান্য মাটি দিয়ে গর্তগুলো ভরাট করা হলেও কিছুদিন চলার পর তা আবারও চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। স্থায়ীভাবে সড়কটি সংস্কারের জন্য আজ পর্যন্ত কোনো ধরনের বরাদ্দ আসেনি।

 

সরেজমিন দেখা যায়, বন্দরটিলা ঘাট থেকে নামার বাজার বিচ পর্যন্ত পুরো রাস্তার মাঝখানে এক একটি গর্ত খালে পরিণত হয়েছে। বন্দরটিলা বাজার সংলগ্ন কালভার্ট, ছোয়াখালী, নামার বাজার অংশের বড় পোলসহ বেশ কিছু জায়গায় জোয়ারের স্রোতে সড়কের মাটি সরে গিয়ে ভেঙে পড়েছে ওপরের আরসিসি ঢালাইয়ের বিভিন্ন অংশ। ফলে ভাঙা রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীরা যেমন নাকাল হচ্ছে, তেমনি প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে রাতে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

 

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক মাসে এই রাস্তায় অনেকগুলো মারাত্মক দুর্ঘটনাসহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। অনেকে হাত-পা ভেঙে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। সিএনজি, অটোরিকশা চলাচল করতে অসুবিধা হওয়ায় অতি প্রয়োজনে মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করতে হয়। এতে করে গাড়ি ভাড়া গুনতে হয় অনেক বেশি।

 

নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মিডওয়াইফ রুপা আক্তার জানান, নিঝুমদ্বীপ উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এখানকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য সিডিএসপি বাজারের পাশে একটিমাত্র ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। যেখানে অন্যান্য সেবার সঙ্গে ইউএনএফপিএ এবং ফিএইচডি সংস্থার মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েদের সেবা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রধান সড়কের করুণ অবস্থার কারণে দ্বীপের অন্য অঞ্চলের অনেক রোগী এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে পারে না। ভেতরের রাস্তাগুলোরও অনেক খারাপ অবস্থা। বৃষ্টির সময় সাধারণত কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারে না। বিশেষ করে রাতের বেলা গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে অনেক কষ্ট করতে হয়। কয়েক দিন আগেও সময়মতো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে না পারায় মারা গেছে এক নবজাতক।

 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, নিঝুমদ্বীপ দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। বন্দরটিলা-নামার বাজার সড়কটি দ্বীপের প্রধান সড়ক। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে আইলা প্রকল্পের আওতায় নির্মিত সড়কটি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পাওয়ায় সড়কটি স্থায়ীভাবে সংস্কার করা যাচ্ছে না। দ্রুত এটিকে জরুরি ব্যবস্থাপনার আওতায় না আনা গেলে সামনের শীতে পর্যটকদের ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হতে হবে।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪