ইকরা তৌহিদ মিম:
বাবা-মেয়ে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস বসবাস করেছেন একই জেলায়। এভাবে দু’জন আলাদা ঠিকানায় কাটিয়ে দিয়েছেন একে একে চব্বিশটি বছর। কেউ কারো সাথে দেখা নেই, পরিচয় নেই। এভাবে একই জেলায় থেকেও ২৪ বছর ধরে বাবা আলমগির হোসেনের দেখা পাননি মেয়ে তানিয়া আক্তার (২২)। তিনি জানতেনই না, তাঁর বাবা জীবিত আছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে দীর্ঘ দুই যুগ পর বাবা আলমগির হোসেনের দেখা পেলেন মেয়ে তানিয়া। ফেসবুকের একটি মানব কল্যাণমূলক পেজের মাধ্যমে বাবা আলমগিরের সন্ধান পান তানিয়া। পরে কয়েক ঘণ্টার আলাপচারিতায় বাবা-মেয়ে গোটা জীবন ধরে জমিয়ে রাখা অজস্র কথা-ব্যথা বলেন একে অন্যকে।
জানা গেছে, শুক্রবার বাবা-মেয়ের এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়েছেন ‘ভবঘুরে’ নামক ফেসবুক পেজের অ্যাডমিন ইকবাল আহমদ। এদিন দুপুরে তানিয়া ও তার বাবা আলমগির হোসেনের দেখা হয় হবিগঞ্জ শহরের কালিবাড়ি রোডের সৌদিয়া রেস্তোরাঁয়। ‘ভবঘুরে’র অ্যাডমিন ইকবাল আহমদ এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
তানিয়ার বাবা আলমগীর হোসেন বানিয়াচং উপজেলার দত্তপাড়ার বাসিন্দা। আর তানিয়ার ২৪ বছর কেটেছে পাশের মাধবপুর উপজেলার খান্দুরা গ্রামে তার নানাবাড়িতে।জানা যায়, মেয়েটির জন্মের অল্পদিন পরেই তার বাবা আলমগীর হোসেন ও মা আফরোজা বেগমের বিচ্ছেদ হয়। এরপর দুজন নতুন সংসারে গেলে তানিয়া বেড়ে ওঠেন তার নানা মাজুম খানের তত্ত্বাবধানে।
তানিয়া বলেন, বাবা-মা আলাদা হওয়ার পর নানাবাড়িতে মায়ের সঙ্গে প্রায়ই দেখা হতো। কিন্তু বাবা জীবিত আছেন কিনা, তা জানতে পারিনি নিয়মের যাঁতাকলে পড়ে। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে নিজের মতো করে বাবাকে খুঁজেছি হন্যে হয়ে। কিন্তু পাইনি। কোনো ঠিকানা জানা ছিলোনা!
তানিয়া আরো বলেন, দুই সপ্তাহ আগে ‘ভবঘুরে’ পেজের ইকবাল আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং বাবার যানবাহনে বিনামূল্যে আরোহণের একটি পরিচয়পত্র তাকে দিই। সেই সূত্র থেকে ওই ভাইটি আমার বাবার সন্ধান বের করে দিয়েছেন।
এখন থেকে বাবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন কিনা জানতে চাইলে তানিয়া বলেন, আমার স্বামী ও দুই সন্তান রয়েছেন। স্বামীর অনুমতি নিয়ে বাবার সঙ্গে দেখা করেছি। মন খুলে দেখেছি, কথা বলেছি।
এসময় নানার সহযোগিতায় দাখিল পাস করেন জানিয়ে তানিয়া তার নানা ও স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
‘ভবঘুরে’ পেজের এডমিন ইকবাল বলেন, ‘রেস্তোরাঁর কেবিনে বাবা-মেয়ে কয়েকঘন্টা সময় ধরে আলাপচারিতায় মগ্ন ছিলেন। তারা সেখানে খাওয়া-দাওয়া করেছেন। বার বার কেঁদে দিয়েছেন একে অন্যকে বুকে জড়িয়ে। পরে তানিয়া মাধবপুর উপজেলায় তার স্বামীর বাড়ি ও আলমগির হোসেন তার নিজের বাড়ি চলে যান।’
বাবা-মেয়ের এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটানোর মধ্য দিয়ে ইকবাল হোসেন নিজেও আনন্দিত হয়েছেন বলে সিএনএন বাংলা২৪কে জানিয়েছেন।
ইকবাল হোসেন বলেন, ‘সময়ের স্রোতে হারানো মানুষগুলোকে খুঁজে তাদের আপনজনদের নিকট পৌঁছে দেওয়াই আমার ব্রত।’