ই-পেপার | মঙ্গলবার , ১৮ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে কক্সবাজারে মানববন্ধন-সভা

উম্মে আলেয়া সুলতানা মুক্তা, কক্সবাজার:

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় দ্রুত পর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন কক্সবাজারের পরিবেশ আন্দোলনের নেতা, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

 

তাঁরা বলেছেন, জলবায়ু ও জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় গ্যাস ও এলএনজি ব্যবহার বাড়ানো কোন সমাধান নয়, বরং সবুজায়ন-নবায়নযোগ্য জ্বালানিই ভবিষ্যৎ। তাই গ্যাস ও এলএনজিতে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে। কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাড়াতে হবে।

 

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ‘গ্লোবাল ডে অব অ্যাকশন অ্যান্ড ফুসিল ফুয়েলস ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কক্সবাজার শহরতলির বাংলাবাজারে বাঁকখালি নদীর তীরে মানববন্ধন-সমাবেশে বক্তৃতায় এ আহ্বান জানানো হয়।

 

গ্রিন কক্সবাজার ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, কক্সবাজার জেলা শাখা আয়োজিত কর্মসূচির উদ্বোধন করেন- কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি ও পরিবেশকর্মী ফরিদুল আলম শাহীন।

বাংলাবাজার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ’র কক্সবাজার জেলার প্রধান সমন্বয়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল কাদের চৌধুরী।

 

মানববন্ধন ও আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন, আইডিয়াল ইনস্টিটিউট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিএনএন বাংলা’র সম্পাদক তৌহিদ বেলাল, অর্থ সম্পাদক জাহেদ হোসেন, পরিবেশকর্মী জসিমউদ্দিন ছিদ্দিকী, উম্মে আলেয়া মুক্তা, দোলন ধর, কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আমিনউল্লাহ আমিন, মুহাম্মদ হাসান, শাকের বিন ফয়েজ, গ্রিন কক্সবাজারের সচিব ফয়সাল সাকিব, মিজানুর রহমান, উম্মে হাবিবা শিরু, আবদুল্লাহ ছিদ্দিকী ফাহিম প্রমুখ।

 

সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন- কক্সবাজার নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি, পরিবেশকর্মী শামসুল আলম শ্রাবণ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের কপ-২৭ সম্মেলনে ৮০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা পর্যায়ক্রমে কয়লানির্ভর জ্বালানি ব্যবস্থা হতে বেরিয়ে আসবে, এই সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে চাইলেও অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষায় বহু দেশের বিরোধীতায় সেসকল উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি। বিশেষ করে ধনী দেশগুলোর বিরোধীতার ফলে ওই সকল পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। বরং বিভিন্ন বৈশ্বিক ফোরাম ও সম্মেলনে জলবায়ু কূটনীতিতেও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করাই বিশ্বের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিসম্পন্ন দেশগুলো প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সারাবিশ্বের বিবেকমান মানুষকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

 

প্রধান অতিথি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহ দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে কক্সবাজারসহ সমগ্র উপকূলীয় উপকূলীয় অঞ্চল। এই অঞ্চলের জীবন-জীবিকা, সম্পদ, খাদ্য, পানি, বাসস্থানসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নানামূখি সংকট দেখা দিচ্ছে। অথচ সংকট মোকাবেলায় কার্যকর উদ্যোগ নেই। বরং জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে উপকূলের জনগণ সবসময় বৈষম্যের শিকার। বরাদ্দের অভাবে সেখানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সুপেয় পানি সরবরাহে সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলো আটকে আছে। এই অবস্থায় এই অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা ও দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে।

 

পরে পরিবেশ সুরক্ষা, জীবাশ্ম জালানি, পরিবেশের ক্ষতিসাধন, জ্বালানি সংকট মোকাবিলা ইত্যাদি বিষয়ের উপর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কক্সবাজার আইডিয়াল ইনস্টিটিউট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অর্ধশত শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাদের অঙ্কিত চিত্র থেকে বাছাই করে তিনটিকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্বাচন করা হয়। বিজয়ী এই শিক্ষার্থীদের হাতে পুরষ্কার ও ক্রেস্ট তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, সভাপতি ও অধ্যক্ষ। এছাড়া খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের হাতে শুভেচ্ছা ক্রেস্ট তুলে দেন ফজলুল কাদের চৌধুরী ও দেলোয়ার হোসেন।

 

কর্মসূচিতে কক্সবাজারের বিভিন্ন পরিবেশকর্মী, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি ও স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাবাজার আইডিয়াল ইনস্টিটিউটের তিন শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪