ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সাইবার নিরাপত্তা আইন: সাংবাদিকদের সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা

ঢাকা অফিস:

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন’ করে নতুন যে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ করা হচ্ছে- সেখানে মানহানির মামলায় সাংবাদিকদের কারাদণ্ডের বিধান থাকবে না। তবে থাকছে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা। অনাদায়ে ৩ বা ৬ মাসের কারাদণ্ড। এ সাজা শুধুমাত্র জরিমানা না দিতে পারলেই ভোগ করতে হবে।

সোমবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে নিজ কক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ আইনের বহু ধারা নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে যুক্ত করা হবে। কিছু ধারায় বড় সংশোধনী আনা হবে।

 

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘২৯ ধারায় সাজা ছিল কারাদণ্ড। সেটাকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা হচ্ছে। এখানে শুধু শাস্তি হবে জরিমানা। অনাদায়ে হয় ৩ মাস না হয় ৬ মাসের কারাদণ্ড থাকবে।’ জরিমানার পরিমাণ কত? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ২৫ লাখ টাকা।

 

এটা কি সাধারণ মানুষের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব। তাহলে তো এ আইন আগের মতোই থেকে গেল? এ বিষয়ে একজন সাংবাদিক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আগে কারাদণ্ড ছিল এ ধারায়। কারাদণ্ড উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু সাজা রাখা হয়েছে। দেওয়ানি আইনে যদি মানুষ ক্ষতিপূরণ চায় তাহলে আমাদের যে আইন রয়েছে তাতে ক্ষতিপূরণের লিমিট নেই। আমি প্রশ্নের জবাবটা দিয়ে দিচ্ছি। ১০০ কোটি টাকাও ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে। সেসব ক্যালকুলেশন করে অনধিক ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে ১ টাকাও জরিমানা হতে পারে, ২৫ লাখও হতে পারে।’

 

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এখন কোনো কারাদণ্ড নেই (খসড়া আইনে)। আপনাদের (সাংবাদিকদের) অ্যারেস্ট করবে কেন? অ্যারেস্ট তো করার আর কোনো সম্ভাবনাই থাকল না।’তার মানে অ্যারেস্ট হচ্ছে না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, অ্যারেস্ট হবে না।’

 

তাহলে মানহানির মামলার ক্ষেত্রে সরাসরি অ্যারেস্ট করা যাবে না- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই, এটাতো আর কারাদণ্ডই না।’

এ ধারায় জরিমানা আগে ছিল ৫ লাখ। এখন কেন ২৫ লাখ করা হচ্ছে? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে অনধিক ২৫ লাখ করা হয়েছে। এটা বিজ্ঞ আদালতের ডিসক্রিশনের (আদালতের বিচক্ষণতা) ওপর ছাড়া হয়েছে। ডিসক্রিশনটা কিভাবে ব্যবহার করা হবে আমি আইনজীবী হিসেবে যতটুকু জানি অপরাধের পরিধি এবং তাতে যে ব্যক্তি মামলা করেছেন তার যে ক্ষতি হয়েছে তার পরিধি বিবেচনায় তিনি জরিমানাটা করতে পারবেন। সেটা এক টাকা থেকে শুরু করে ২৫ লাখ পর্যন্ত করতে পারবেন। এখানে আমার মনে হয় না এটা অযৌক্তিক কিছু হচ্ছে।’

 

জরিমানার পরিমাণ বেশি হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এ ধারায় সাধারণ মানুষই বেশি অ্যারেস্ট হচ্ছে- এ বিষয়ে একজন সাংবাদিকের মতামত প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দুঃখিত যে আপনার সঙ্গে আমি একমত হতে পারলাম না। তার কারণ হচ্ছে এখানে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলা হচ্ছে অনধিক ২৫ লাখ। এটা ক্যাপ করে দেওয়া হয়েছে যে, ২৫ লাখের ওপরে যেতে পারবে না।’

 

এর আগে সকালে গণমাধ্যমকে আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে মানহানির অভিযোগ কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান ছিল। নতুন আইনে সেখানে পরিবর্তন এনে কারাদণ্ডের পরিবর্তে জরিমানার বিধান করা হবে।মন্ত্রী বলেন, এটি একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

 

দেওয়ানি মামলায় যেভাবে জরিমানার বিষয়গুলো আছে, সেভাবেই সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিষয়গুলো থাকবে বলেও জানান আইনমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, যখন নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন হবে, তখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকবে না।

 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় মানহানির বিচার করা হয়। এ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করেন, তার জন্য তিনি অনধিক তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কারাদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। নতুন আইনে এ জরিমানা ২০ লাখ টাকা বাড়িয়ে ২৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।

 

দেশে বিরোধিতার মুখে ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর করে সরকার। এরপর থেকে ভিন্নমত দমনে প্রায়ই এ আইন ব্যবহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

আইনটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ হয়েছে ভিন্নমতের রাজনীতিক, সাংবাদিক ও শিক্ষকদের ক্ষেত্রে। সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রেও এ আইনের আনুপাতিক ব্যবহার বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

দেশে আইনটি বাতিল অথবা সংশোধনের দাবি উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে। পাশাপাশি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক গত ১ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ স্থগিত করার আহ্বান জানান।

 

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা করে গত বছরের জুন মাসে একটি সুপারিশমালা বাংলাদেশ সরকারের কাছে পেশ করে।

 

‘ওএইচসিএইচআর টেকনিক্যাল নোট টু দ্য গভর্নমেন্ট অব বাংলাদেশ অন রিভিউ অব দ্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ শিরোনামের সুপারিশমালায় আইনটির দুটি ধারা পুরোপুরি বাতিল ও ৮টি সংশোধনের সুপারিশ করা হয়।

 

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ বছর একাধিকবার বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে না, সংশোধন হবে। তিনি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে আইনটি সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, আইনটি বাতিল করে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ করা হবে।

 

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪