নিজস্ব নপ্রতিবেদক:
ঢাকা: বিরোধী জোটের সরকার হটানোর আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জামায়াত-বিএনপি বুঝলাম কিন্তু আমাদের কিছু বামপন্থি দল আছে তারাও লাফায়।
মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (ফেব্রুয়ারি ২২) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, এখন আবার শুনি তাদের মুখে বড় বড় কথা- আন্দোলন করে সরকার হটিয়ে দেবে। আর তার মধ্যে জামায়াত-বিএনপি বুঝলাম কিন্তু আমাদের কিছু বামপন্থি দল আছে এখন তারাও লাফায়। তারাও আন্দোলন করবে, বিপ্লব করবে।
তিনি বলেন, এখন তারা আন্দোলন করে আমাদের ক্ষমতা থেকে সরাবে। নির্বাচনের আগে বলেছিল নির্বাচন করতে দেবে না, আমরা ইলেকশন করে এসেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ৭৫ সালের পর যে কয়টা নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে যদি কোনো সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়ে থাকে তবে সেটা ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন।
তিনি বলেন, হাজার চেষ্টা করেও মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়েও দেশে বিদেশি নানা তদবির করেও তারা জনগণকে ঠেকাতে পারেনি। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা নতুন ভোটার এবং নারী ভোটাররা আরো বেশি ভোট দিয়েছে এবার।
টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করা শেখ হাসিনা বলেন, আমি যাতে ক্ষমতায় না আসতে পারি তার জন্য অনেক রকম চক্রান্ত হয়েছে। তারপরও আসতে আসতে এ পঞ্চম দফায়ও এসে গেছি।
বাংলাদেশের পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ১৫ বছরের অন্তত বদলে গেছে। বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষের উন্নতি হয়েছে।
তিনি বলেন, একটা আদর্শ নিয়ে না চললে কোন দেশের উন্নতি করা যায় না। আর এই আদর্শ আমাদের শিখিয়েছে একুশ, ২১ ফেব্রুয়ারি ত্যাগের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে মহান আত্মত্যাগ এদেশের মানুষ করেছে। বাংলাদেশ আজকে আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এ দেশের মানুষকে আরো উন্নত জীবন দিতে চাই। দেশের মানুষের ভাগ্য আরও পরিবর্তন করে আরো উন্নত জীবন যাতে পায় সেই পরিকল্পনা নিয়েই কিন্তু আওয়ামী লীগ কাজ করে যায়। আর আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য কাজ করে বলেই মানুষের আস্থা, ভালবাসা এবং বিশ্বাস অর্জন করেছ। আর যার ফলে বার বার জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সবাইকে বলব মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলতে হবে। সেই পরিকল্পনা আমরা তৈরি করেছি। আমরা যা কিছু করি পরিকল্পনা করে সুষ্ঠু ভাবে করি।
তিনি বলেন, এখানে কোন এডহক ভিত্তিতে কাজ আমরা করি না। আমাদের আশু করণীয়, মধ্যবর্তী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নির্ধারণ করেই আমরা করি। ২০৪১ এর বাংলাদেশ হবে আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ আমরা করে দিয়েছি।
আওয়ামী লীগ জনগণকে দেওয়া সব ওয়াদা পূরণ করেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ এর নির্বাচনে ইশতিহারে আমরা যা যা ওয়াদা জাতিকে করেছিলাম, এরপর ২০১৪ ও ২০১৮, প্রতিটি নির্বাচনে ইশতেহারে আমরা যা যা ওয়াদা করেছি প্রতিটি ওয়াদাই আমরা পূরণ করেছি। পূরণ করেছি বলেই আমরা মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছি।
তিনি বলেন, আমরা ২০১০ থেকে ২০২১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছিলাম এবং ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা আমরা করে দিয়েছি। কিভাবে বাংলাদেশ আগামী দিনে সামনে এগিয়ে যাবে। আমাদের তরুণ সমাজকে নিজেদের সেইভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এখানে ভোগে নয়, ত্যাগেই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি আনন্দ এবং অর্জন। এ কথাটা মনে রাখতে হবে। আর সেটা শিখিয়েছে আমাদের লাখো শহীদ। সেটা শিখিয়েছে আমাদের ভাষা আন্দোলনের শহীদ। সেটা শিখিয়ে দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কাজেই তার আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না। এ সিদ্ধান্তটা নিয়েই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
একুশের চেতনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করার, একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা উঁচু করে চলার এবং আদর্শ নিয়ে চলার।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে যে চেতনার উন্মেষ ঘটেছি, তার মাধ্যমেই কিন্তু আজকে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতাকে আমাদের অর্থবহ করতে হবে। এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ইতিহাস বিকৃতি করে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস যারা মুছে ফেলতে চেয়েছিল ধীরে ধীরে তারাই আঁস্তাকুড়ে যাবে। আর বাঙালি মাথা উঁচু করে স্বাধীন সত্য নিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। এটাই হলো বাস্তবতা।
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুর রাজ্জাক, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. নুরুল হুদা ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ।