মুজিব উল্ল্যাহ্ তুষার:
জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ মোকাবিলা বর্তমান সময়ের আলোচিত বিষয়। কিন্তু এই বিষয়ে আমরা কতটুকু জানি? প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই আজকের নয়, চলছে আদিকাল থেকে। দুর্যোগ মোকাবিলায় মানুষ তাই নানারকম পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। অন্যদিকে এখনকার বড়ো বাস্তবতা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সহনীয় করার জন্য বিশ্বব্যাপি চলছে গবেষণা, নেওয়া হচ্ছে নানান পদক্ষেপ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি গত দুই দশকে মূলধারায় এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পরিবেশেগত বৈশিষ্টের তারতম্য ঘটছে সেই সাথে বেড়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পুনরাবৃত্তির হার। সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমে বাড়ছে। এর জেরে উপকূলীয় অঞ্চলে বাড়ছে লবনাক্ততা, আকস্মিক বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাত। বাংলাদেশের জন্য এটা বড়ো উদ্বেগের কারণ যে সাগরপৃষ্ঠের চেয়ে পাঁচ মিটারের কম উচ্চতায় রয়েছে দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা।
ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশ অতিমাত্রায় দুর্যোগপ্রবণ। তাছাড়া, অধিক জনঘনত্ব ও ব্যাপক দারিদ্রের কারণে জনসংখ্যার বড় অংশ প্রান্তিক এলাকায় বসবাস করে। এদের দুর্যোগ বিপদাপন্নতা অনেক বেশি। ফলে, ঝড়, বন্যা বা নদীভাঙ্গনের মতো আপদের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ও জনগোষ্ঠি দারুণ দুর্দশায় ভোগে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একদিকে আবহাওয়াজনিত আপদের পৌনঃপুনিকতা ও প্রচন্ডতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি বাড়ে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তন সরাসরি জনগোষ্ঠির জীবিকার বিপর্যয় ঘটায় ও তাদেরকে আরো বেশি বিপদাপন্ন করে তোলে। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে, ঋতুচক্র ও আবহাওয়ায় অস্বাভাবিক হেরফের দেখা দিচ্ছে। এর কারণে, জনগোষ্ঠির জীবিকার সুযোগ সংকুচিত ও জীবনযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এভাবে একদিকে জনগোষ্ঠির বিপদাপন্নতা বাড়ছে; অন্যদিকে ঝড়, বন্যা ও নদীভাঙ্গনের মতো আপদ আরো তীব্র হয়ে উঠছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির কারণে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশনব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যবিধিচর্চা হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে ।
দুর্যোগের আঘাতে জীবন, সম্পদ ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়, সেবা ব্যবস্থা, জীবিকা ও সামাজিক কাজকর্মে গুরুতর বিঘ্ন ঘটে এবং আক্রান্ত জনগোষ্ঠি শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত হয়।
জনগোষ্ঠীর দুর্দশা:
শারীরিক দুর্দশা- সম্পদ উপার্জন ও সেবাসমূহ না থাকার কারণে মৌলিক ও জরুরি চাহিদাগুলো মেটাতে পারেনা৷ ফলে ক্ষুধা, পিপাসা, অসুস্থতা ও অপুষ্টিতে কষ্ট পায় ।
মানসিক দুর্দশা- সংকট ও জীবনযাত্রায় আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে শোক, সংশয়, উদ্বেগ, ভীতি, হতাশা, বিষাদ ও বিষণ্নতায় ভোগে ।
সামাজিক দুর্দশা- সম্পদ, জীবিকা ও আশ্রয়হীনতার ফলে দৈন্যদশা, দেনাদায়, ত্রাণ নির্ভরতা, অপরের আশ্রয়ে বসবাস, নিরাপত্তাহীনতা ও মর্যাদাহীন কাজে অংশগ্রহণ স্বীকার করে নিতে হয় প্রতিবছরই বাংলাদেশে কোন কোন অঞ্চলে দুর্যোগ ঘটে থাকে। সাম্প্রতিককালে চট্টগ্রামের জলবদ্ধতাএবং সিডর ও আইলায় ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিলো। এর ফলে এমন ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো, যে ক্ষতি পুষিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার জন্য প্রচুর মানবিক সাহায্য ও পুনর্বাসন সহায়তা দরকার হয়েছে।
পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থায় ক্ষতি :
ঘূর্ণিঝড় বা বন্যার পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস একযোগে আসে। প্রবল বাতাস আর পানির তোড়ে ঘর ও অন্যান্য সবকিছুর সাথে পায়খানা ও নলকূপ তলিয়ে যায়। বন্যার সময় নিচু জায়গার নলকূপ ও পায়খানা ডুবে যায়। নলকূপের পানি দূষিত হয়ে পড়ে। পায়খানার কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়ে। এগুলো তখন আর ব্যবহার করা যায়না।
উঁচু জায়গায় যে নলকূপ বা পায়খানা টিকে থাকে সেগুলোও সবাই সহজে ব্যবহার করতে পারেনা । কারণ রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় চলাচল খুব কঠিন হয়ে পড়ে; অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের সময় তারা সেখানে যেতে পারেনা। এছাড়া, ঘূর্ণিঝড় বা বন্যার কারণে অনেকেই নিজের বাড়িতে থাকতে পারেনা । এরা বাঁধের উপর বা রাস্তার পাশে অথবা উঁচু কোনো খাসজমিতে ছাপড়া বেঁধে বাস করে। এসব জায়গায় নলকূপ বা পায়খানা বসানোর সুযোগ থাকেনা। অনেকেরই তখন নলকূপ বা পায়খানা বসানোর টাকা থাকেনা ।
দুর্যোগ, পরিবেশের যে ক্ষতি করে তার ফলে পানির মূল উৎস স্থায়ীভাবে নষ্ট বা দূষিত হয়ে যেতে পারে। ২০০৯ সালে আইলার জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙ্গে সমুদ্রের যে পানি ঢুকেছিলো তাতে বিরাট এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানিসহ সব পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। এই পানি এখন মানুষের ব্যবহারোপযোগী নয়। ওই এলাকার জনগোষ্ঠীকে এখন দূরবর্তী এলাকা থেকে পানি আনতে হচ্ছে।
বায়ুমন্ডলের উপাদানগুলো সূর্যের তাপ ধরে রেখে পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য করে রাখে। পানিচক্র ও কার্বনচক্র পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। বাষ্পীভবন, মেঘ ও বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে পানিচক্র সম্পন্ন হয়। পরিবেশের সাথে প্রাণীজগৎ অক্সিজেন ও কার্বন বিনিময়ের মাধ্যমে পরিবেশ ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু মানুষ তার কার্যকলাপের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে । ফলে বায়ুমন্ডলের যে উপাদানগুলোর তাপ ধারণ করার ক্ষমতা বেশি (যেমন, কার্বন), সেগুলোর পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে ।
জলবায়ু পরিবর্তন
জলবায়ু হলো কোন এলাকা বা অঞ্চলের ২৫-৩০ বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থা। একটি নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুমণ্ডলের উপাদানসমূহের স্বল্প কয়েকদিনের গড় বা ১ থেকে ৭ দিনের গড় ফলকে আবহাওয়া বলা হয় । বায়ুমন্ডলের উপাদান বলতে বায়ুর তাপ, বায়ুর চাপ, বায়ু প্রবাহের দিক ও গতিবেগ, বায়ুর আর্দ্রতা, মেঘের পরিমাণ ও মেঘের প্রকারভেদ ও বৃষ্টিপাত ইত্যাদিকে বোঝায়। আর কোন স্থানের বা অঞ্চলের দীর্ঘকালের (৩০ বছর বা তারও বেশি সময়ের) দৈনন্দিন আবহাওয়া পর্যালোচনা করে বায়ুমন্ডলের ভৌত উপাদানগুলোর যে সাধারণ অবস্থা দেখা যায়, তাকে ওই স্থানের জলবায়ু বলে”।
জলবায়ু পরিবর্তন একটি নিয়ত প্রাকৃতিক ঘটনা; তবে মানুষের কর্মকান্ডে এটি ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নামে অভিহিত। জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীর সব জায়গায় ভৌত, প্রাকৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার উপর প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি নজরে আসছে । ন্যাশনাল এ্যাডাপটেশন প্রোগ্রাম অফ এ্যাকশন (২০০৯) ‘সার্ক ম্যাটিওরোলজিক্যাল রিসার্চ সেন্টার (এসএমআরসি)’ এর বরাত দিয়ে উল্লেখ করেছে যে, ১৯৬১-১৯৯০ সাল এই তিরিশ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেশের বার্ষিক গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। আবহাওয়া দপ্তরের রংপুর কেন্দ্রের ১৯৭৮-২০০২ সালের সংগৃহীত তথ্য,বার্ষিক গড় সর্বোচ্চ ও গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, সাধারণভাবে, প্রতি বছর যথাক্রমে ০.০৩৫ ও ০.০২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বৃদ্ধির ইঙ্গিত করে। এছাড়াও, সামগ্রিকভাবে বছরে মোট বৃষ্টিপাতহীন দিনের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা ও উপকূল অঞ্চলে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে।
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে তুলনামূলক সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত এসএমআরসি’র এক জরিপে দেখা গেছে যে, বিগত ২২ বছরে সমুদ্র পৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে (হিরণ পয়েন্টে প্রতি বছর ৪.০ মি.মি., চর চাঙ্গায় প্রতি বছর ৬.০ মি.মি. এবং কক্সবাজারে প্রতি বছর ৭.০ মি.মি.) যা বিগত ১০০ বছরের সমুদ্র পৃষ্ঠের বৈশ্বিক উচ্চতা বৃদ্ধির গড়ের থেকে অনেক গুণ বেশী।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তন দেশের বর্তমান অনেক সমস্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে বাড়িয়েেদিবে। আশঙ্কা করা যাচ্ছে যে –
ক্রমবর্ধমান সংখ্যার ঘূর্ণিঝড়, সাথে অধিক গতিবেশের ঝড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাস, উপকূলীয়
অঞ্চলগুলোতে আগের চেয়ে বেশি ক্ষয়-ক্ষতি ঘটাবে।
বর্ষাকালে বাংলাদেশসহ গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকা অঞ্চলে আগের থেকে ভারি ও অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ঘটবে, যার ফলে-
বেশি পরিমাণে পানি প্রবাহের ফলে বাঁধ উপচিয়ে বা ভেঙ্গে নগর ও গ্রামাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বন্যা সৃষ্টি করবে।
নদী ভাঙ্গন, যার কারণে বসতভিটা ও চাষের জমি নদীগর্ভে চলে যাবে।
নদীগুলোতে অধিক মাত্রায় পলি জমা হবে। ফলে প্রাকৃতিক জল-নিষ্কাশনে বিঘ্ন ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে।হিমালয়ের বরফ গলার কারণে বছরের উষ্ণতর মাসগুলোতে নদীতে জলপ্রবাহ বৃদ্ধি এবং বরফ গলা শেষ হলে নদীতে জলপ্রবাহ প্রবাহ হ্রাস ও লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পাবে।
অস্বাভাবিক ও কম বৃষ্টিপাতের ফলে দেশে, বিশেষ করে দেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে পরা বৃদ্ধি পাবে।সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের নিচু এলাকা ডুবে যাওয়া এবং নদী ও ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ ও সুপেয় পানির ঘাটতি; ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে; পাশাপাশি রক্ষাবাঁধের ভেতরে জলনিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হবে যার ফলে কৃষি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।উষ্ণতর এবং অধিক আর্দ্রতার কারণে রোগব্যাধির প্রকার ও সংক্রমণ বেড়ে যাবে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অনিশ্চয়তা
“বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঙ্ক স্ট্র্যাটেজি এ্যান্ড এ্যাকশন প্ল্যান” যে সব সমস্যা বা আপদের আশঙ্কা করছে তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, একদিকে জলবায়ু পরিবর্তন আপদের পৌনঃপুনিকতা ও প্রচন্ডতা বাড়িয়ে দেয় । আপদগুলো হয়ে উঠে আরও ভয়াবহ ও ক্ষতিকর । পৌনঃপুনিক ও প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়, অস্বাভাবিক বন্যা বা তীব্র নদী ভাঙ্গনের পৌনঃপুনিক আঘাতে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন কাঠামো বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে । অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন সরাসরি জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকা বিপর্যস্ত করে।
যেমন, উপকূল এলাকায় লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতার কারণে প্রচলিত কৃষি প্রায় অচল হয়ে পড়তে পারে। এই দুই তরফা বিপর্যয়ের ফলে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি বহুগুণ বেড়ে যায় ও বারবার ভেঙ্গে পড়া কাঠামো পুন:নির্মাণ করার সময়, সুযোগ, সম্পদ বা সক্ষমতা অতি সীমিত হয়ে পড়ে। উপরন্ত, জলবায়ু পরিবর্তন সরাসরি জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা, তথা পানি, পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে । যেমন, লবণাক্ততার অনুপ্রবেশের মাধ্যমে পানির প্রাকৃতিক উৎস দূষিত হতে পারে, বা খরাপ্রবণ এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, অথবা উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার মাধ্যমে রোগ জীবাণু ও জীবাণুবাহক কীটপতঙ্গের বংশ বিস্তারে বিশেষ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন একটি নিয়ত প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও মানুষের কর্মকান্ডের ফলে এর প্রভাব ত্বরান্বিত হয় । আবার, দুর্যোগের এই পরিবর্তন আরো ত্বরান্বিত হতে পারে । স্থানীয় পর্যায়েও এটা হতে পারে। যেমন, খরাপ্রবণ অঞ্চলে অতি উত্তোলনের কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ি চাষের কারণে লবণাক্ততা অনুপ্রবেশের হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিলো; আইলা ফলে অতিদ্রুত ও স্থায়ীভাবে ঐ এলাকার পানি এবং মাটি লবণাক্ত হয়ে পড়ে।
গত ৫০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশে গভীরভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। যদিও ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি মোতাবেক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা রাখার ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে। গবেষণা বলছে, ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা আরও নিচে রাখা না গেলে আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের (যেমন তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ও বাতাসের গতি) অনিয়মিতকরণ ও অস্বাভাবিকতার কারণে বাংলাদেশকে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে।
লেখক :
সাংবাদিক ও পরিবেশ আন্দোলন কর্মী।