পেকুয়া(কক্সবাজার) প্রতিনিধিঃ
কক্সবাজারের পেকুয়ায় খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ স্থান পেকুয়া ক্রীড়া কমপ্লেক্স।গত ৩ বছর ধরে মাঠে বালি ও কংকরের স্তুপ। ফলে এলাকার ক্রীড়ামোদী লোকজন ও এলাকাবাসী খেলাধূলা ও বিনোদন থেকে বঞ্চিত রয়েছে। প্রায় ৪ একর ভূমিতে নির্মিত এ ক্রীড়া কমপ্লেক্স সারা বছর ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার সুযোগ সুবিধা। ইনডোরে রয়েছে বাস্কেটবল ও ব্যাটমিন্টন কোর্ট। খেলোয়াড়দের শরীর চর্চার জন্য রয়েছে নানাবিধ সরঞ্জাম। যা পেকুয়ার খেলোয়াড়দের শরীর চর্চা ও অনুশীলনের উপযুক্ত স্থান।
স্থানীয় ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ, সারাবছর যেখানে খেলাধুলার একটা পরিবেশ থাকে বিগত ৩ বছর যাবৎ তা দখলে চলে গেছে মেসার্স মো. জামিল ইকবাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। ক্রীড়া কমপ্লেক্স ভবন ও মাঠে সাবমেরিন নৌঘাঁটি সড়ক সংস্কারের মালামাল মজুদ করার ফলে বন্ধ হয়ে যায় পেকুয়া ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার সকল খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত বিভিন্ন ক্রিকেট, ফুটবলসহ ক্রীড়া একাডেমির কার্যক্রম। কিছু ক্রীড়া একাডেমি তাদের অনুশীলন কার্যক্রম পেকুয়া কলেজের মাঠে স্থানান্তরিত করলেও বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের অনুশীলন।
সরেজমিনে দেখা যায়, পেকুয়া উপজেলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সবুজ ঘাসের মাঠের উপর মজুদ করা হয়েছে ইট বালুর বিশাল বিশাল স্তুপ। সমগ্র মাঠে ইট ভাঙ্গছে শতাধিক শ্রমিক। ফুটবল গ্রাউন্ডের দুই গোলবারের উপড়ে ফেলা হয়েছে। ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠে বড় বড় ক্রেনে ইটপাথর ও বালু স্থানান্তর করা হয়েছে। মাঠে রাখা হয়েছে সড়ক সংস্কার কাজে ব্যবহৃত ২০-৩০টি বড় ট্রাক। মাঠের সীমানা প্রাচীর ঘেষে নির্মাণ করা হয়েছে শ্রমিক বসবাসের শেড। ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ইন্ডোরে বাস্কেটবল কোর্টের রিম গুটিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে এক পাশে। সেখানে বসবাস করছে শ্রমিকরা। খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমে ব্যবহৃত হচ্ছে কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বাসস্থান ও কার্যালয় হিসেবে। কৌতূহলী শ্রমিকরা ব্যবহার করছে জিমনেশিয়ামের নানা উপকরণ। সঠিক পন্থায় ব্যবহার না করায় নষ্ট হচ্ছে এসব মূল্যবান যন্ত্রপাতি। বাউন্ডারী ওয়াল ভেঙ্গে পেলে আর রাস্তাও নষ্ট করে পেলে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বরইতলী-মগনামা সড়কের সংস্কার কাজে সরবরাহের জন্য নানা কাঁচামালের স্তুুপ করা হয়েছে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠে। তাদের অভিযোগ উক্ত সড়কের কাজ শেষ হয়ে গেলেও মালামাল অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না। এতে পেকুয়ার সকল খেলোয়াড় তাঁদের অনুশীলন ও শরীর চর্চার একমাত্র ভেন্যুটি হারিয়েছে। যা খেলোয়াড়দের শরীর চর্চা ও স্কিল ঠিক রাখার অন্তরায়।
জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা ফুটবল একাডেমির এক কর্মকর্তা বলেন, পেকুয়ার খেলোয়াড়দের অনুশীলন ও শরীর চর্চার জন্য উপজেলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স খুবই উপযোগী একটা স্থান। এতে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে সরকারিভাবে সকল সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান। বর্তমানে তা বেদখল হয়ে যাওয়ার কারনে খেলোয়াড়দের অনুশীলন বন্ধ হয়ে গেছে। যা খেলোয়াড় উঠে আসার ক্ষেত্রে অন্তরায়। পাশাপাশি নিয়মিত খেলার মধ্যে যেসকল খেলোয়াড় রয়েছে তাঁদের দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটা বড় বাধা।
পেকুয়া ক্রিকেট একাডেমির সদস্য মো. মোস্তাকিম বলেন, ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠ ইট, বালুতে ঢাকা পড়ে যাওয়ার কারণে উপজেলার খেলোয়াড়দের ক্রিকেট খেলা চালিয়ে নিয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছে। কারণ ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠটি ছাড়া উপজেলায় ক্রিকেট খেলা অনুশীলনের কোন মাঠ নেই। আমরা চাইবো সড়ক সংস্কারের কাঁচামাল গুলো যেন শীঘ্রই অন্যত্রে সরিয়ে ফেলা হয়। আগের মতো সে মাঠে আমরা ক্রিকেট অনুশীলন করতে পারি।
এদিকে উক্ত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে স্তুপ করা সড়কে অব্যবহরিত মালামাল ও ঠিকাদারের মালামাল সরিয়ে নিয়ে ক্রীড়া কমপ্লেক্সটির বাউন্ডারী ওয়াল, চলাচলের রাস্তা, খেলার মাঠ সংস্কার করে দেওয়ার দাবীতে ২০ জুলাই কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারক লিপি দিয়েছেন পেকুয়া উপজেলাবাসী ও ক্রীড়ামোদী জনতার পক্ষে কক্সবাজার জজ কোর্টের আইনজীবি ও উজানটিয়ার বাসিন্দা এডভোকেট মীর মোশাররফ হোসেন টিটু। স্মারকলিপিতে তিনি উল্লেখ করেন জোরপূর্বক ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ভবন ও মাঠ দখলে নিয়ে সড়কের কাজে ব্যবহারিত মালামাল রাখায় পেকুয়া উপজেলা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা করার মত মাঠ নেই। তাই যুবসমাজ দিন দিন ইয়াবা আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। এমনকি স্কুল কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্টান করার মত মাঠ নেই। ফলে তারা অনুষ্ঠান সল্প পরিসরে করে নেন প্রতিষ্টানে।বর্তমানে সড়কের কাজ শেষ হলেও কি কারণে মালামাল সরানো হচ্ছে না। তাই দ্রত সময়ের মধ্যে মালামাল সরিয়ে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের প্রাণ ফিরে দিয়ে ক্রীড়াঅঙ্গনকে সাগিয়ে তুলার জন্য অনুরোধ করা হয়।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামিল ইকবাল এর প্রজেক্ট ম্যানেজার আশরাফুল আলম বলেন, স্থানীয় সাংসদ জাফর আলমের অনুমতি নিয়ে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ভবন ও মাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁর কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন।
খেলার মাঠ দখলের ব্যাপারে জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, আমার পক্ষ থেকে ক্রীড়া কমপ্লেক্স ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে পূর্বের দায়িত্বরত ইউএনও অনুমতি দিয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। তাদের কে মালামাল সরাতে বলা হয়েছে।