মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু, নাইক্ষ্যংছড়ি
সীমান্তবর্তী উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামুর কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়ায় সম্প্রতি উখিয়া রোহিঙ্গা শিবির থেকে রোহিঙ্গারা কাজের সন্ধানে এসে অপহরণসহ নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়াও বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে মিয়ানমারের সাথে লাগানো সীমান্ত উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়িতে এক সময়ে অবৈধ পথ পাড়ি দিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি ও পাশ্ববর্তী এলাকায় এসে বসবাসকারীরা এখন এই দেশের জনপ্রতিনিধিদের নিবন্ধনে ভোটার হয়ে এনআইডি হাতে নিয়ে তারা বনে গেছে আসল বাংলাদেশী।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরিন সমস্যায় নাইক্ষ্যংছড়ি ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দুই দপে এই পর্যন্ত প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আশ্রয় নেয় বাংলাদেশের উখিয়া ও টেকনাফে। সেই সুবাদে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে, বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলায় নির্বিঘ্নে বিচরণ করছে তারা। নতুন রোহিঙ্গারা তাদের পুরনো রোহিঙ্গা আত্মীয় স্বজনদের বাসা বাড়িতে স্থান নিয়ে সুযোগ বুঝে মালেশিয়া এবং বিভিন্ন কাজে নেওয়ার নাম করে অপহরণ, চুরি, ছিনতাইসহ নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের আদর্শগ্রামের যুবক গোলাম কিবরিয়া এই প্রতিবেদককে জানান গত ৪ আগষ্ট তাদের আদর্শগ্রামে মনোয়ারার বাড়িতে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে স্থান নিয়ে পরের দিন বিধবা মনোয়ারার ছেলে মোবারক হোসেন ও টমটম চালক আব্দুর রহমানের ছেলে নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে।
অথচ মুক্তিপণ দেওয়ার পরেও অপহরণের ১৬ দিনেও উদ্ধার হয়নি দুই যুবক। এদিকে রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের নাপিতের চর থেকে কাজের লোভ দেখিয়ে গত ১৪ আগষ্ট অপহরণ করে মৃত মোঃ ছৈয়দ এর ছেলে মোঃ শফিউল্লাহ (১৮) কে। অপহরণের ৫ দিন পর ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পায়। মোঃ শফিউল্লাহ জানান, আগে থেকে বসবাসকারী রোহিঙ্গা রুহুল আমিন আমাকে রাজ মিস্ত্রী কাজের লোভ দেখিয়ে প্রথমে টেকনাফের হ্নীলার লেদা নামক স্থানে বক্কর মেম্বারের রাস্তার মাথা থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
পরের দিন সকালে রুহুল আমিন, মিজান নামের এক জনের কাছে রেখে চলে যায়। তারা তাকে চোখ বেধে ৩ ঘন্টা হাঁটিয়ে গহীন পাহাড়ে নিয়ে মারধর করে। আমার বাড়ি থেকে মুক্তিপণ পেয়ে ১৮ আগষ্ট আমাকে লেদা থেকে গাড়িতে তুলে দেয়। সচেতন মহলের দাবি, পুরাতন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রশয়ে তারা বিভিন্ন এলাকায় বড় ধরনের অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে।
১৯ আগষ্ট দুই দফা রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়িতে অনুপ্রবেশকালে গ্রামবাসীর চোখে পড়লে, তাদের আটক করে স্হানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ফিরিয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অপর দিকে ভোর ৪ টায় ৯৯৯ এর কলে দৌছড়ির দুর্গম ছমতলী থেকে এক অপহরণকারীকে উদ্ধার করেছে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার এসআই রাকিব।
তিনি জানান, মিয়ানমার সীমান্তে কেউ মেরে এক যুবককে ফেলে রেখেছে- এমন সংবাদ পেয়ে ২ ঘন্টা পায়ে হেঁটে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমেন শর্মা জানান, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতাসহ রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রশাসন সজাগ আছে। তাদের আশ্রয় না দিতে আইনশৃঙ্খলা মিটিং এ জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহল কে অবগত করা হয়েছে।