ই-পেপার | রবিবার , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাঁশখালীতে সন্ধ্যা হলেই জ্বলে উঠে মোমবাতি-কেরোসিনের প্রদীপ

শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) :

*বাঁশখালীর দক্ষিণ অঞ্চল পুরোই অন্ধকারে
*জেনারেটর বসিয়ে ২০-৩০ টাকায় মোবাইল চার্জ
*সুপেয় পানির চরম সংকট
*ব্যাটারিচালিত কয়েক হাজার অটোরিকশা শ্রমিক বেকার

২৪ অক্টোবর। এদিন রাত ৯ টায় ঘূর্ণিঝড় হামুনে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা। শুরু হওয়া তাণ্ডবে মাত্র আধাঘন্টার ব্যবধানে গাছপালা ভেঙে যায়। উড়ে যায় টিনের চালা ভেঙে যায় কয়েশত বসতঘর। গাছচাপায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় কয়েক হাজার পরিবার। এদিন রাতে বয়ে যাওয়া তাণ্ডবে প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে বাঁশখালীর অভ্যন্তরিণ সড়কে প্রায় দেড় হাজার গাছ ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের লাইনের উপর। এতে দেড়শতাধিক বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙে যায়। হেলে পড়ে আড়াই শতাধিক বিদ্যুতের খুটি। এক হাজারের অধিক মিটার ভেঙে যায়। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন বাঁশখালীতে মোবাইলফোন, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থাও হয়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন। নেমে আসে চরম মানবিক বিপর্যয়। এ প্রভাবটিও পড়েছে পল্লীবিদ্যুতে। প্রায় ৫০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয় পল্লীবিদ্যুতের বাঁশখালী জোনে। এখনো দক্ষিণ বাঁশখালী অন্ধকারে। আটদিন হয়ে গেল বিদ্যৎবিহীন। ৩শ শ্রমিক রাতদিন কাজ করছে বিদ্যুৎ লাইন সচল করতে। গত পাঁচদিন ধরে প্রধান সড়কের লাইন চালু করতে কাজ করছে বিদ্যুৎসংশ্লীষ্ট শ্রমিকরা। বাঁশখালী পৌরসভায় আংশিক বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়। আজ (মঙ্গলবার) প্রধান সড়কের শীলকূপ টাইমবাজার পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ চালুর সম্ভাবনা আছে বলে জানা যায়।

 

 

ঘূর্ণিঝড় হামুনে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয় দক্ষিণ বাঁশখালীর লাখো জনসাধারণের। দক্ষিণ বাঁশখালীর ছনুয়া, পুঁইছড়ি, শেখেরখীল, চাম্বল, শীলকূপ, গন্ডামারা এলাকায় এখনো পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়নি। একই সাথে কাথরিয়া, সরল, বাহারছরা (আংশিক), বৈলছড়ি, কালীপুর (আংশিক) বিদ্যুৎ পৌছায়নি। এলাকায় সুপেয় পানির একমাত্র ভরসা বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎ। বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের বেশীরভাগ নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ায় মোটরচালিত সাবমারসিবল পাম্পের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করা হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় পানীয়জলের তীব্র সংকটে পড়েছে বাঁশখালী জনপদের হাজার হাজার পরিবার। কয়েকটি হস্তচালিত নলকূপে কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পানির জন্য ভিড় করছে লোকজন। অনেকেই জেনারেটর বসিয়ে পানি উত্তোলন করছে। দীর্ঘ লাইনে পানির জন্য উন্মুখ হতে দেখা যায় গ্রামের লোকজনদের।

 

 

বিদ্যুৎবিহীন বাঁশখালীতে নেমে এসেছে চরম মানবিক বিপর্যয়। পানীয়জলের সংকট, মোবাইল, ইন্টারেনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে পড়েছে বিচ্ছিন্ন। দিনের মধ্যে সরকারী-বেসরকারী সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, মার্কেট-প্লাজা, দোকান-পাট চলছে কোনো রকম। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই অন্ধকারে ঢাকা পড়ে বাঁশখালী। আলোর জন্য মূখীয়ে পড়েছে মোমবাতি, কেরোসিনের পিদিমের উপর। সামনে স্কুল-মাদরাসার বার্ষিক পরিক্ষা। শিক্ষার্থীরাও পড়েছে পাঠ বিমূখ। বিদ্যুৎ চালিত মোটর রিকশাগুলো আর চলে না। কয়েক হাজার রিকশা চালক হয়ে পড়েছে বেকার। বিদ্যুৎবিহীন বাঁশখালীর আজ আটদিন পূর্ণ হলো। অনেকেই বলে বাঁশখালীর ইতিহাসে বিদ্যুৎবিহীন এটিই সবচেয়ে দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলো।

 

 

বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) রীশু কুমার ঘোষ বলেন- ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে বাঁশখালী উপজেলা লণ্ডভণ্ড হয়ে বেশীরভাগ গাছপালা বিদ্যুতের খুটির উপর পড়েছে।এতে দেড়শতাধিক বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙে যায়। আমাদের প্রায় ৫০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের নিয়মিত শ্রমিক ছাড়াও ৩০০ জন শ্রমিক দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন মেরামত ও সচল করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। রাত-দিন কাজ করছি। আমরা বসিয়ে নেই। এ কয়দিনে চেষ্টা করছি বাঁশখালীর প্রধান সড়কে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে। আরো ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগবে পুরো বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ সচল করতে।’