ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব: বাঁকখালীর তীরে সম্প্রীতির মেলবন্ধন

ইয়াছমিন মুন্নী, কক্সবাজার :

কক্সবাজারের রামু বাঁকখালী নদীতে সম্প্রীতির কল্পজাহাজ ভাসা উৎসবে মেতেছে হাজারো মানুষ। উৎসব উপভোগ করতে আসা বেশিরভাগই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং অন্যরা দর্শনার্থী। নানা বাদ্য বাজিয়ে নাচ-গানে ব্যস্ত শিশু-কিশোর ও যুবারা। বাঁকখালী নদীতে ৮টি সজ্জিত জাহাজ ভাসিয়ে উৎসব করছেন তারা।

প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস ওড়ানোর পর রীতি অনুযায়ী নদীতে কল্পজাহাজ ভাসায় বৌদ্ধরা। রামুর বাঁকখালী নদীতে রোববার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে চলে এই উৎসব। বাঁশ, বেত, কাঠ ও রঙিন কাগজের তৈরি বাহারি কল্পজাহাজ ভাসানো হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। তাতে অংশ নিতে ও উৎসব দেখতে জমে ভিড়।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী উৎসবের শেষ দিন রোববার বিকেলে কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফকিরা বাজারের পূর্বপাশে বাঁকখালী নদীতে ‘সম্প্রীতির জাহাজে, ফানুসের আলোয় দূর হোক সাম্প্রদায়িক অন্ধকার’ এ স্লোগানে ঐতিহাসিক জাহাজ ভাসা উৎসবের আয়োজন করা হয়।

দেখা গেছে, রামুর পূর্ব রাজারকুল, হাজারীকুল, হাইটুপী রাখাইন পাড়া, হাইটুপী বড়ুয়াপাড়া, দ্বীপ-শ্রীকুল, জাদিপাড়া ও মেরংলোয়া গ্রাম থেকে মোট আটটি কল্প জাহাজ নদীতে ভাসানো হয়েছে। সাত-আটটি নৌকার ওপর বসানো হয়েছে এক-একটি কল্প জাহাজ।

আকর্ষণীয় নির্মাণ শৈলীর কারণে খুব সহজেই এসব কল্প জাহাজ মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। প্রতিটি জাহাজেই আছে একাধিক মাইক। ঢোল, কাঁসর, মন্দিরাসহ নানা বাদ্যের তালে জাহাজের উপরে শিশু কিশোর ও যুবকেরা নেচে গেয়ে মেতেছে অন্যরকম আনন্দে। জাহাজ নিয়ে ভেসে এপার থেকে ওপারে যেতে যেতে মাইকে চলে বৌদ্ধ কীর্তন-নাচসহ নানা আনন্দায়োজন।

রামু ছাড়াও কয়েক বছর ধরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, চৌফলদন্ডি ও চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীতে জাহাজ ভাসা উৎসব পালিত হয়ে আসছে।

 

রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি অর্পণ বড়ুয়া বলেন, সবার সহযোগিতায় এবারো জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে জাহাজ ভাসা উৎসব শেষ হলো। এ উৎসবের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকেই জানান দিতে চাই, তাই আমাদের স্লোগান হলো, সম্প্রীতির জাহাজে, ফানুসের আলোয় দূর হোক সাম্প্রদায়িক অন্ধকার।

অর্পন বড়ুয়া বলেন, উৎসবের দিনে হরতালের মতো কর্মসূচি কাম্য নয়। সকল সম্প্রদায়ের মানুষ যখন নির্বিঘ্নে উৎসব করতে পারে সেভাবে বৌদ্ধ সম্প্রদায় কামনা করে।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা মোস্তফা বলেন, এ জাহাজ ভাসা উৎসবকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মূলত উৎসবটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হলেও এখানে সকল ধর্মের মানুষের উপস্থিতি লক্ষণীয়। যা সকল ধর্মের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।

রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু তাহের দেওয়ান বলেন, জাহাজ ভাসা উৎসবে নদীর দুপাড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমাদের পুলিশ সদস্যরা আয়োজনের শুরু থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

অর্ধশতাব্দীকাল ধরে রামুতে এ উৎসবের আয়োজন করা হলেও ২০১২ ও ১৩ সালে এ উৎসব উদযাপন করা হয়নি। রামু বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার ঘটনায় ওই দুই বছর এ উৎসব উদযাপন হয়নি। দু’বছর পর আবারো প্রতি বছর থেকে সাড়ম্বরে এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে।

জাহাজভাসা উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।

এ সময় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তাপ্তি চাকমা, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ফাহমিদা মোস্তফা, রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু তাহের দেওয়ান প্রমুখ।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪