ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পটিয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৪২ হাজার মানুষ : দুর্ভোগ চরমে

আবদুল হাকিম রানা, পটিয়া

দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ায় ৩ দিনের ভারি বর্ষণে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৪২ হাজার মানুষ। উপজেলার নিম্নাঞ্চল অবিরাম বর্ষণে প্লাবিত হচ্ছে। এর মধ্যে উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে মানুষ পানির মধ্যে চলাচল করতে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে । এছাড়াও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

 

উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় গতকাল কোন শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি শিক্ষকরা। বলতে গেলে প্রায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল রবিবার। পানিতে শত শত পুকুর ডুবে যাওয়ায় কয়েক কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ পানিতে ভেসে গেছে। শত শত একর আমন ধানের চাষাবাদ পানির নিচে থাকায় কৃষকরা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। পৌর সদরের সুচক্রদন্ডী ও পাইকপাড়া এবং ৪ নং ওয়ার্ড সহ কয়েকটি এলাকার মানুষ পানব বন্দি হয়ে পড়েছে।

 

স্থানীয় ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় ১২ হাজার ৩০৫টি পরিবার ক্ষয়ক্ষয়তির সম্মুখিন হতে পারে। এর মধ্যে, পৌর এলাকায় ৮’শ পরিবার, ইউনিয়ন পর্যায়ে কোলাগাওর ৫৭৫ পরিবার, হাবিলাসদ্বীপের ৭৫০ পরিবার, কুসুমপুরায় ৭২৫ পরিবার, জিরিতে ৯শ পরিবার, কাশিয়াইশে ৮১০ পরিবার, আশিয়ায় ৭৮০পরিবার, বড়লিয়াতে ৬৯০ পরিবার, জঙ্গলখাইনে ৬৫০ পরিবার, ধলঘাটে ৭শ পরিবার, কেলিশহরে ৭শ পরিবার, দক্ষিণভূর্ষীতে ৪৫০ পরিবার, হাইদগাঁওতে ১১শ পরিবার, ভাটিখাইনে ৪৮০ পরিবার, ছনহরায় ৬২০ পরিবার, কচুয়াইতে ৭২৫ পরিবার, খরনায় ৩৭০ ও শোভনদন্ডীতে ৪৮০ পরিবার বন্যা কবলিত।

 

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষনে নিম্ন অঞ্চলের রাস্তা ঘাট, পুকুর, ফসলি জমি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে আটকা পড়ে অনেকেই অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। দিন মজুররা কাজে যেতে না পারায় পরিবারের সদস্যদের মুখে দিতে পারছেন না আহার। এছাড়াও বিশুদ্ধ পানি পান করতে না পারায় মারাত্নক হারে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কায় পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষরা।

 

পানিবন্দী হয়ে পড়া কাশিয়াইশ ইউনিয়নের আব্দুল করিম জানান, ‘আই অবাজি দিনে আনি দিনে হাই’ ‘আঁর হন সম্বল নাই, “বন্যায় আটকা পরি আঁই ভাত হাইন ন পারির,” কোন আল্লার বান্দা যদি এক্কানা আৃরারে হেল্প গরলে আঁরা হাইত পাইড়তাম (আমি দিনমজুর, আমার কোনো অর্থ সম্বল নাই, আমি অসচ্ছল, ‘বন্যার কারণে আমি ভাত খেতে পারছিনা’।কোনো মানুষ যদি আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, আমরা উপকৃত হতাম)।

 

উপজেলার নিম্ন এলাকা আশিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাসেমের কাছে বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য কোন ত্রাণসামগ্রী দিয়েছেন কিনা তা জানতে চাইলে তিনি জানান, এখনো পর্যন্ত আমরা কাউকে কোনো ধরণের ত্রান সামগ্রী বা সহযোগিতা করতে পারিনি। আমরা উপজেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠকে বসে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।

 

এই বিষয়ে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল মামুন জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের আমরা তালিকা প্রণয়ন করেছি। ইউনিয়ন ও পৌর পর্যায়ে চেয়ারম্যান, কমিশনার এবং মেম্বারদের সমন্বয়ে আমরা তাদের ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করছি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র, উদ্ধার টিম, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে । তিনি দুর্যোগ মোকাবেলায় সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।

 

এইচ এম কাদের, সিএনএন বাংলা২৪