
নাজমুন নাহার, ঢাকা:
দু’জন মৃত ব্যক্তি কবর থেকে উঠে এসে ঢাকার মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের সামনে হামলা এবং ভাঙচুর চালিয়েছেন! আজগুবি হলেও মামলার কাগজে এমনটিই বলছে পুলিশ। আসামিদের একজন দু’বছর আগে এবং অন্যজন ৮ মাস আগে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গিয়েছেন পরপারে। মামলায় একজন ২ নাম্বার ও অন্যজন ৭৩ নাম্বার আসামি।
গেল ১৮ জুলাই পদযাত্রাকালীন সময়ে মিরপুর বাংলা কলেজের সামনে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। পরদিন ১৯ জুলাই কলেজের ছাত্রলীগের নেতা মোঃ রুবেল ও কলেজের অফিস সহকারী মহিতুর রহমান বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন দারুস সালাম থানায়।
বাংলা কলেজের পক্ষ থেকে করা মামলার কপিতে ১২০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করা হয়।
বাংলা কলেজের করা মামলা ২ নাম্বার আসামি, সাবেক শ্রমিকদল নেতা জব্বার হাওলাদার ও ৭৩ নাম্বার আসামি সাবেক ঢাকা কলেজের ছাত্রদল নেতা শরিফুল ইসলাম সুমন। এদের মধ্যে সাবেক শ্রমিক দলনেতা জব্বার হাওলাদার মারা গেছেন দুই বছর আগে এবং সাবেক ছাত্রদল নেতা শরিফুল ইসলাম সুমন মারা গেছেন আট মাস আগে।
দুই নম্বর আসামি, সাবেক শ্রমিকদল নেতা জব্বার হাওলাদারের স্ত্রী মর্জিনা বেগম চার মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে সাভারের একটি ভাড়া বাসায় কোনোরকম মানবেতর জীবন পার করছেন।
জব্বার হাওলাদারের স্ত্রী মর্জিনা বেগমের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, দীর্ঘ তিন বছর যাবত ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন তার স্বামী। দুই বছর আগে বারডেম হসপিটালে চিকিৎসা রত অবস্থায় মারা যান জব্বার হাওলাদার।
মামলার আরেক আসামি শরিফুল ইসলাম সুমনের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে। সেখানে সুমনের বাড়িতে তার বাবার সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, সাবেক ছাত্রদল নেতা শরিফুল ইসলাম সুমন দীর্ঘ পাঁচ বছর ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। তিনি গত বছরের নভেম্বর মাসে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।
মৃত দুজন মানুষকে মামলার আসামি করায় হতবাক মৃত ব্যক্তিদের স্বজন এবং এলাকাবাসী।
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যোগাযোগ করা হয় রাজধানীর দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, বাদীপক্ষের তালিকা অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নাম মামলায় কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তা কলেজ কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে।
কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন, পুলিশকে তারা কোন নামের তালিকা দেননি। এবং মামলার বাদী বলছেন তিনি শুধু থানায় ভাঙচুরের অভিযোগ দিয়েছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে কোন ধরনের নামের তালিকা পুলিশকে দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে সংবাদকর্মীরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছেন, কিন্তু পুলিশের ঊর্ধ্বতন কেউই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।