ই-পেপার | শনিবার , ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর্জেন্টিনায় ফিরল সেই‘ডেথ ফ্লাইট বিমান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর্জেন্টিনায় ফিরেছে ডেথ ফ্লাইট’ নামে পরিচিত দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির একটি বিমান। সোমবার (২৬ জুন) এই বিমানটিকে আর্জেন্টিনায় স্বাগত জানানো হয়।

দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি সামরিক স্বৈরাচারের শাসনাধীনে থাকার সময় বিরোধীদের এই বিমান থেকে ছুড়ে ফেলে হত্যা করা হতো।


আর এখন সামরিক শাসনের সময় নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশে নিবেদিত জাদুঘরের অংশ হবে এই বিমানটি। মঙ্গলবার (২৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনায় সামরিক স্বৈরাচার ক্ষমতায় ছিল এবং সেই সময় টার্বোপ্রপ এই বিমানটি তথাকথিত ‘মৃত্যুর ফ্লাইট’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। মূলত সমালোচকদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে আর্জেন্টিনার তৎকালীন স্বৈরশাসক এই বিমনটিকে ব্যবহার করত।


রয়টার্স বলছে, ১৯৭৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর এই ফ্লাইট থেকে ফেলে যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের মধ্যে অ্যালিস ডোমন এবং লিওনি ডুকেট নামে দু’জন ফরাসি সন্ন্যাসিনীও ছিলেন। তারা দু’জনে স্বৈরশাসনের সময় ‘নিখোঁজ’ মানুষের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা সম্পর্কে কথা বলেছিলেন।

আরেক নিহতের নাম আজুসিনা ভিলাফোর। তিনি একদল মাকে তাদের নিখোঁজ সন্তানদের অনুসন্ধান ও ন্যায় বিচারের জন্য মাদ্রেস দে প্লাজা দে মায়ো নামে একটি সংগঠন দাঁড় করাতে সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি স্বৈরাচারের হাতে আটক হন ও তাকেও হত্যা করা হয়।

তার মেয়ে সিসিলা রয়টার্সকে বলেছেন,এটা ভাবতে ভয়ঙ্কর লাগে, একজন মা যে কেবল তার ছেলেকে খুঁজছিলেন, তাকে এই বিমান থেকে জীবন্ত নিক্ষেপ করা হয়েছিল।

রয়টার্স বলছে, সামরিক স্বৈরাচারের শাসনাধীনে নিহতদের স্বজনদের অনুরোধে আর্জেন্টিনার অর্থমন্ত্রী বিমানটি কিনে নেন এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে এটি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন। এটিকে এখন রাজধানী বুয়েনস আইরেসের একটি জাদুঘরে রাখা হবে।

মূলত গোপনে আটক ও নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত ওই স্থানকে জাদুঘর করা হয়েছে, যেখানে ডেথ ফ্লাইটের মাধ্যমে হত্যার আগে সবাইকেই রাখা হয়েছিল।

আর্জেন্টিনার ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ ডি কির্চনার সোমবার বিমানটির প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘অতীত পরিবর্তন করা যায় না, তবে অতীত থেকে শেখার জন্য এটি কাজে দেবে।’

এদিনের এই অনুষ্ঠানে নিহতদের আত্মীয়দের পাশাপাশি ফার্নান্দেজ ডি কির্চনার এবং অর্থমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সার্জিও মাসা উপস্থিত ছিলেন। মূলত তিনি বিমানটিকে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিয়েছেন।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত স্বৈরশাসনের সময় আর্জেন্টিনায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়েছিল।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪