ই-পেপার | রবিবার , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শমশেরনগর হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তিতে দাতা সদস্যদের সাথে লন্ডনে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

সালেহ আহমদ (স’লিপক):

শমশেরনগর হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তি ও আউটডোর কার্যক্রম শুরুর প্রেক্ষিতে বিলেত প্রবাসী দাতা সদস্যদের সাথে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে গঁড়ে ওঠেছে শমশেরনগর জেনারেল হাসপাতাল। বাংলাদেশের খ্যাতিমান সংঙ্গীতশিল্পী সেলিম চৌধুরী রয়েছেন এ হাসপাতাল কমিটির সভাপতির দায়িত্বে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যে তাঁর নেতৃত্বে গঁড়ে উঠেছে শমশেরনগর হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটি। সম্প্রতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে হাসপাতাল পরিচালনার জন্য।

রবিবার (২১ এপ্রিল) এ উপলক্ষে পূর্ব লন্ডনের একটি রেস্টুরেন্টে শমশেরনগর হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটি ইউকে’র উদ্যোগে বিলেতে বসবাসরত দাতা সদস্য ও বিলেতে বাঙ্গালী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দদের নিয়ে এক বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

 

শমশেরনগর হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটি ইউকে’র আহ্বায়ক ময়নুল ইসলাম খাঁনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব সাংবাদিক আলাউর রহমান খান শাহীনের পরিচালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পীকার জাহেদ চৌধুরী।

 

বদরুল ইসলামের কন্ঠে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে সুচিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতাল কমিটির সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কবি ও গবেষক সৈয়দ মাসুম। এরপর উপস্থিত দাতা ও অতিথিদের উদ্দেশ্যে হাসপাতালের বিগত সময়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব সম্মিলিত একটি আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন হাসপাতাল কমিটির সভাপতি মন্ডলীর অন্যতম সদস্য ব্যাংকার সৈয়দ সোহেল আহমদ।

 

অনুষ্ঠানে হাসপাতাল কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী মে মাস থেকেই হাসপাতালের আউটডোর কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে হাসপাতালের মূল প্রশাসনিক ভবন যেটি উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদ ভবন নামে পরিচিত, তাঁর গ্রাউন্ড ফ্লোরের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। হাসপাতালের মূল প্রশাসনিক ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরের কাজ শেষ হওয়ার পর প্রথম ফ্লোরের কাজ সম্পন্ন করার জন্য ইংল্যান্ড প্রবাসী ফয়জুল হক ও দ্বিতীয় ফ্লোরের কাজ সম্পন্ন করতে আমেরিকা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম রানা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন।

 

বর্তমানে গ্রাউন্ড ফ্লোরে হাসপাতাল কার্যক্রম চলবে। শুরুতে দৈনিক ৮ ঘন্টা করে ১ জন ডাক্তার, ১ জন মেডিকেল এসিসটেন্ট ও একজন নার্স সহ মোট ৯ জন জনবল নিয়ে হাসপাতাল যাত্রা করবে। পরবর্তিধাপে এটাকে ১৬ ঘন্টা এবং পর্যায়ক্রমে ২৪ ঘন্টা সেবা দানের জন্য হাসপাতালকে উন্মুক্ত করা হবে জানান কমিটির নেতৃবৃন্দরা।

 

হাসপাতালের দ্রুত অগ্রগতির কথা শুনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে প্রধান অতিথি স্পীকার জাহেদ চৌধুরী বলেন, আর্তমানবতার কল্যাণে এ হাসপাতালে যে বা যারা এগিয়ে এসেছেন তারা মহান। আগামীতে যেকোন ধরনের সহযোগীতার প্রয়োজন হলে তিনি সব সময় পাশে থাকবেন বলে আশ্বাস দেন।

 

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ইউকের সভাপতি সাংবাদিক কে এম আবু তাহের চৌধুরী, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের, সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন সিলেটের এক্সিকিউটিভ মেম্বার ও ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মিসবা জামাল, জনপ্রিয় নিউজ কাস্টার মা ও শিশুরোগ বিশেজ্ঞ ডাঃ জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার, কাউন্সিলর ব্যরিস্টার মোস্তাক আহমেদ, সাপ্তাহিক সুরমা পত্রিকার সাবেক সম্পাদক কবি আহমদ ময়েজ, বাংলা একাডেমির বিশেষ সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও গবেষক ফারুক আহমেদ, কবি ও গবেষক এডভোকেট মুজিবুল হক মনি, পরিবেশবাদীদের ব্রিটেনভিত্তিক সংগঠন অমরাবতির চেয়ারম্যান কলামিস্ট সাংবাদিক শেবুল চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিন ইউরোপ সংস্করনের ব্যুরো চিফ সাংবাদিক আ স ম মাসুম, দ্যা ইডিটরের সম্পাদক সাংবাদিক আহাদ চৌধুরী বাবু, চ্যানেল এসের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি বর্তমানে ব্রিটেন সফররত সাংবাদিক খালেদ চৌধুরী, কাউন্সিলর রেবেকা সুলতানা, টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক স্পীকার কাউন্সিলর সাবিনা আক্তার, বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা জামান সিদ্দিকী, কবি হাফসা ইসলাম, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট মুন কোরেশী, তরুছায়া’র ফাউন্ডার শেখ রওশনারা নিপা, হাসপাতাল কমিটির সভাপতি মন্ডলীর সদস্য এ কে এম জিল্লুল হক, সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুদ্দিন চৌধুরী, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব আব্দুর রহিম, সহ-সভাপতি মোজ্জামেল চৌধুরী টিপু, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট জুয়েল তরফদার, কমলগঞ্জ ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন ইউকের সভাপতি অধ্যাপক শেখ শামীম সাহেদ, হাসপাতাল কমিটির সহ-সভাপতি মোস্তাক আহমেদ, কমিউনিটি একটিভিস্ট নুরুজ্জামান চৌধুরী রাসেল, হাসান কাওসার চৌধুরী সিপন, হাসপাতাল কমিটির অন্যতম সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান বেলাল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নিয়াজ হায়দারী, আব্দুল মোত্তালিব লিটন, আমিনুল রহমান লিটন, রাসেল আহমেদ, মিজানুর রহমান মিটু, আতিকুর রহমান, জয়নাল আহমেদ, খন্দকার সাইদুজ্জামান, খন্দকার আব্দুল করিম নিপু প্রমুখ।

 

আলোচনায় বক্তারা ভূমি দাতা সারওয়ার জামান রানা ও বেগম আলেয়া জামানের শমশেরনগর হাসপাতালের জন্য একশত একান্ন শতক জমি দান, হাসপাতাল স্থাপনের জন্য এক বিরাট অবদান বলে উল্লেখ করেন বলেন, স্বাস্থ্যখাত একটি রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত। বলা হয়ে থাকে, যে দেশের জনগণ স্বাস্থ্যের দিক থেকে যত এগিয়ে, সে দেশ তত উন্নত ও সমৃদ্ধ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যেকোনো দেশে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য একজন ডাক্তার থাকা উচিত।

 

তারা আরো বলেন, বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায় বাংলাদেশে এক হাজার ৫৮১ জন লোকের জন্য রয়েছেন একজন নিবন্ধিত চিকিৎসক। গ্রামীণ, প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলগুলোতে চিকিৎসক শূন্যতার হার বেশি। অভাব রয়েছে প্রশিক্ষিত নার্সের। অনেক সরকারি হাসপাতালে সরঞ্জাম পাওয়া গেলেও প্রযুক্তিবিদের পদ খালি রয়েছে। আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হচ্ছে, জিডিপির পাঁচ শতাংশের মতো অর্থ স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এই বিস্ময় যাত্রা যদি কাঙ্ক্ষিত গতিতে অব্যাহত থাকে, তাহলে দেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে। উন্নত দেশ হতে হলে দেশের স্বাস্থ্য খাতেরও টেকসই উন্নয়ন হতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের যথাযত উন্নয়ন ছাড়া উন্নত দেশের কাতারে বাংলাদেশের নাম লেখানোর প্রচেষ্টা অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে।

 

অনুষ্ঠানে প্রজেক্টারের মাধ্যমে হাসপাতাল কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে একটি ভিডিও ফুটেজ ও হাসপাতাল কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট কন্ঠশিল্পী সেলিম চৌধুরীর শুভেচ্ছা বার্তা প্রদর্শন করা হয় এবং সভাপতির বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে সভার সমাপ্তি ঘটে।

 

সভা শেষে হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তিতে শোকরিয়া আদায় ও শমশেরনগর হাসপাতালের কার্যক্রমের উত্তরোত্তর অগ্রগতি কামনা করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিকট সাহায্য চেয়ে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটি ইউকের অন্যতম উপদেষ্টা প্রবীণ সাংবাদিক এ কে এম আবু তাহের চৌধুরী।