ই-পেপার | রবিবার , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শ্রীমঙ্গলে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ

নিজস্ব প্রতিনিধি:

শ্রীমঙ্গলে সুবিধা বঞ্চিত পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার নামে পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা‘র প্রকল্পের সাইনবোর্ড লাগিয়ে টাকা আত্বসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে জানা যায়- জাতীয় সমাজ কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা এর অর্থায়নে ও উপজেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার এর বাস্তবায়নের ঘরে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে গৃহায়ন প্রকল্প গৃহ প্রদান করেছে মর্মে কাশিনাথ মৃধা‘র ঘরে “পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা’র নামীয় প্রকল্পের সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেন।

 

সরকারী টাকা আত্বসাতের অভিযোগে গৃহায়ণ তহবিলের উদর্ধতন কর্তৃপক্ষ পসবিদ উন্নয়ন সংস্থাকে অর্থ ফেরতের চিঠি প্রদান করেছে। মুঠোফোনে সত্যতা স্বীকার করেছেন- পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা‘র সরকারী টাকা আত্বসাতের উক্ত ঘটনায় তদন্ত টিমের সদস্য, বাংলাদেশ ব্যাংক এর গৃহায়ন তহবিলের অডিট টিমের মধ্যে আকরাম হোসেন।

সূত্র জানায়, “গৃহায়ন তহবিল ঋণ” দেওয়ার নামে তাদের ভোটার আইডি, ছবি নিয়ে লিষ্ট করে, সে অর্থ আত্মসাৎ করার চেষ্টাসহ নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্ণীতিতে ভরপুর সংস্থাটি দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতারণা করছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। যখন অডিট আসে তখন সংস্থার লোক সাইনবোর্ড নিয়ে আসেন। প্রতারনার আশ্রয় গ্রহন করে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এ সংস্থাটি। উপজেলার ভুরভুরিয়া চা-বাগানের বাসিন্দাদের নামে ১ লক্ষ ৩০ হাজার করে ঋণ পাস হলেও তাদেরকে ২৫% সুদে ৩০ হাজার বা ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।

এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- রিপন মৃধা (গৃহ নং- ৬৪৯), কাশিনাথ মৃধা ( গৃহ নং- ৬০৩), ধনু ভর, মিঠুন হাজরা, আকাশ দোষাদ, রঞ্জিত রবি দাস, বিধান রবি দাস।

এখানে কাশীনাথ মৃধার ঘরটি জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ, ঢাকা এর অর্থায়নে ও উপজেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার এর বাস্তবায়নে নির্মিত।

খাইছড়া চা-বাগানে প্রদুপ তাঁতী, নিপেন তাঁতী, দয়াল বুনার্জীসহ বিভিন্ন লোকজনদের কাছ থেকে জানা যায়, এখানে কাউকে সংস্থা কর্তৃক ঘর করে দেওয়া হয়নি। ২০ হাজার টাকা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়েছেন।

হঠাৎ একদিন পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা‘র প্রধান নির্বাহী একটি সাইনবোর্ড ও একটি বই নিয়ে তার কাছে যায় এবং বলে যে, অডিট আসলে এই সাইন বোর্ডটি দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখবেন। এবং তাকে চা-পান খাওয়ার জন্য ৫০০শ টাকা প্রদান করেন। একইভাবে ভাড়াউড়া চা-বাগানের পিনকা হাজরা, মিঠুন রিকিয়েশন, জীবন রিকিয়েশন, সবুজ দেব, রাজু মৃধা, বিঞ্চু হাজরা, ফুল ছড়া চা-বাগানের চিরজ্জীত বুনার্জী, বিজয় ভৌমিক, আকাশ গোয়ালা, সুমন, রাজঘাট চা-বাগানের দুলাল বুনার্জি, আলতা কারিয়াসহ প্রায় ২৫০ জনের দুইটি তালিকা গৃহায়ন তহবিলে প্রেরণ করা হয়। দুইটি প্রকল্প হলো- সবার জন্য বাসস্থান ও মুজিব শতবর্ষ। উক্ত দুইটি প্রকল্পে সংস্থাটিকে বাংলাদেশ ব্যাংক এর গৃহায়ণ তহবিল ঋণ প্রদান করেছে প্রায় ২ কোটি ৪০ হাজার টাকা।

জানা গেছে- যাদের ভিটে-মাটি আছে, ঘর নেই এমন দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠি পরিবারকে বসতঘর তৈরির জন্য ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহায়ন তহবিল গঠন করেন। তহবিলের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক এর একটি ইউনিট ২ শতাংশ সুদে তহবিল নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার কথা। ২২০ থেকে ৩০০ বর্গ ফুটের একটি ঘর বানানোর জন্য একজন গ্রাহককে ৯ বছর মেয়াদে ১লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়ার কথা। পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা এনজিও সরকারী এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে তহবিল সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন মানুষদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি ও উক্ত ঋনের বিপরীতে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা সঞ্চয় সংগ্রহ করে। পরে ১লক্ষ ৩০ হাজার টাকার প্যাকেজ থেকে উক্ত সংস্থা‘র হাতে গুনা কয়েক সদস্যকে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু উক্ত ঋণের সুদের হার ১ বছরের জন্য সাড়ে ১২% এবং ২ বছরের জন্য ২৫ %করে নেওয়া হচ্ছে। যেখানে ৯ বছর মেয়াদে ৬% সুদ নেওয়ার কথা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুড়ভুড়িয়া চা-বাগানের কাশীনাথ মৃধা বলেন- জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ, ঢাকা এর অর্থায়নে ঘর সরকার তৈরি করে দিয়েছে। পসবিদ হতে আমি লোন হিসাবে ৫০ হাজার ঋণ নিয়েছি। অডিটের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমি বাগানী মানুষ, আমার বাড়ীতে একদিন পসবিদ এর লোক এসে একটি সাইনবোর্ড রেখে যায়। এবং আমাকে বলে অডিট আসলে আমি যেনো বলি আমি তাদের কাছ থেকে টাকা এনেছি। কিন্তু অডিট আসার পর তারা যে সুযোগ নিয়ে আমার ঘর পসবিদের ঘর বলে চালিয়ে দিবে এটা বুঝতে পারিনি। আমার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।

পাশাপাশি সে সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে। আমি এর বিচার দাবী করছি। কালীঘাট ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালা বলেন- উক্ত সংস্থা মানুষকে ঋণ দেয় শুনেছি। কিন্তু কোনো সদস্যকে ঘর বানিয়ে দিয়েছে এটা শুনিনি। কাশীনাথ মৃধার ঘর সম্পূর্ন সরকারী খরচে তৈরি করা হয়েছে। উক্ত ঘরের সামনে নামফলকও রয়েছে। এই ঘর কোনো সংস্থা কিভাবে তৈরি করে দিতে পারে। কালীঘাট ইউনিয়নের নির্বাচিত প্রতিনিধি শাওন পাসি বলেন- এই প্রতিষ্ঠানটি প্রধান নির্বাহী আজাদ আলী অনেক সদস্যদের কাছ থেকে সঞ্চয় সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু এখন ঋণ দিতে তালবাহানা করছেন। তার নিজ এলাকায় কোন ঘর নির্মান করে দেয়নি বলে তিনি দাবী করেন। কালীঘাট ইউনিয়নের নির্বাচিত প্রতিনিধি ইদ্রিস আলী বলেন- পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা এলাকায় কিছু সদস্যদের ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করেছে। কিন্তু কোনো সদস্যকে ঘর বানিয়ে দেয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা‘র সাবেক ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মোঃ তোফাজ্জল হোসেন বলেন- পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা‘র বিভিন্ন দুর্ণীতি, সদস্য হয়রানী এবং পসবিদ দ্বারা নির্যাতিত এই বিষয়ে বিগত মার্চ মাসে পৃথক দুইটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে উক্ত সংস্থাটির সকল দুর্ণীতির তথ্য প্রমানসহ সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন। অপর এক প্রশ্নে তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেন যে, পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা কোনো সদস্যকে ঘর বানিয়ে দেয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা‘র প্রধান নির্বাহী‘র মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পসবিদ উন্নয়ন সংস্থা‘র সরকারী টাকা আত্বসাৎ এর উক্ত ঘটনায় তদন্ত টিমের সদস্য, বাংলাদেশ ব্যাংক এর গৃহায়ন তহবিলের অডিট টিমের মধ্যে আকরাম হোসেন বলেন- বাংলাদেশ ব্যাংক এর গৃহায়ণ তহবিলের অডিট টিম যতবারই ভিজিট করেছে প্রত্যেকবার এমন অভিযোগ ও বাস্তব সমস্যা পেয়েছে। এই মর্মে গৃহায়ণ তহবিলের উদর্ধতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা স্বরুপ পসবিদ উন্নয়ন সংস্থাকে অর্থ ফেরৎ প্রদানের জন্য চিঠি প্রদান করা হয়েছে।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪