নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রাম: অনেকে মনে করে টনে টনে মশার ওষুধ মারলেই মশা কমবে, এটা ঠিক না। আমাদের পরিবেশগত ভারসাম্যের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। একসময় শহরে ব্যাঙ পাওয়া যেত যেটা মশার লার্ভা খেয়ে মশা কমাতে সহায়তা করত। বিভিন্ন ধরনের উপকারী কীট-পতঙ্গ পাওয়া যেত, যা পাওয়া যাচ্ছে না।মশার ওষুধের প্রতি মশার প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এখন ওষুধ মেরেও মশা মারা যাচ্ছে না। মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে গবেষণা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) চসিকের ষষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ৩৮তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এসব কথা বলেন। তিনি মশার প্রকোপ কমাতে আগামী সপ্তাহ (৩১ মার্চ) থেকে কার্যক্রম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
লালদীঘি পাড়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় মেয়র বলেন, ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও মশা দ্রুত বাড়ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে স্প্রেম্যান থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট লোকবল বাড়িয়ে মশানিধনে প্রতিটি ওয়ার্ডে আরো ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। ডেঙ্গু প্রকোপ প্রতিরোধে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। কাউন্সিলরদের মাঠে থেকে তদারকি করতে হবে এ কার্যক্রম।
জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, আমাদের পরিচ্ছন্ন বিভাগ নালাগুলো পরিষ্কার করছে। অনেক সময় দেখা যায় নালায় ডাবের খোসা থেকে লেপ-তোষক সব ফেলা হয়েছে যা জলাবদ্ধতা তৈরি করে মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে। জনগণ সচেতন না হলে মশার প্রকোপ কমানো কঠিন হবে। জনগণ বাড়িতে থাকা জমা পানি প্রতি তিন দিনে এক দিন ফেলে দিলে এবং যত্রতত্র ময়লা ফেলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি থেকে জনগণকে বিরত রাখতে পারলে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে। সিডিএ ৩৬টা খালে যে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প করছে সেগুলোতে বাঁধ দিতে হয়েছে। সিডিএ বর্ষার আগে বাঁধ ও খালের মাটি অপসারণ করলে জলাবদ্ধতা ও মশার প্রকোপ কমবে।
আর্থিক সমস্যায় চট্টগ্রামের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় শহর। চট্টগ্রামকে ঘিরে বে-টার্মিনাল, শিল্পপার্ক, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ অনেক বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পগুলো সফল করতে যে ধরনের অবকাঠামো চট্টগ্রামের দরকার তা কেবল শুধু হোল্ডিং ট্যাক্স আর ট্র্রেড লাইসেন্সের আয় দিয়ে তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব নয়।
আমরা বন্দরের আয়ের ১ শতাংশ চেয়েছিলাম। আইনের গ্যাড়াকলে তা হয়নি। অথচ বন্দরের ৩০ থেকে ৪০ টনের লরি চলাচল করে শহরের রাস্তা নষ্ট করে ফেলছে। প্রতিদিন যে কনটেইনার খালাস হচ্ছে তা থেকে আয়ের একটি অংশ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে দেওয়া উচিত। চসিকের ভবনগুলো ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের মাধ্যমে আয়বর্ধন করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করব। চসিকের রাজস্ব বিভাগকেও আয় বহুমুখীকরণে মনোযোগ দিতে হবে। সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বানাচ্ছে। সিডিএ টোল আদায় করবে কিন্তু চসিকের হিস্যা কী হবে তা আলাপ করা উচিত ছিল। কারণ সিটি করপোরেশনের জায়গায় এক্সপ্রেসওয়ে বানাবেন, সিটি করপোরেশনের রাস্তা দিয়ে গাড়ি ওঠা-নামা করবে, আমরা সড়ক সংস্কারে ব্যয় করব অথচ আমাদের কোনো হিস্যা থাকবে না, তা হবে না।
নগরে আলোকায়ন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, চসিকের বিদ্যুৎ উপ-বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছিলাম রমজানে সড়কে, মসজিদে, কবরস্থানে আলোকায়ন করতে। কিন্তু, আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি অনেক রাস্তায়, গলিতে বাতি জ্বলে না। কাউন্সিলররা নিজ নিজ এলাকার বিদ্যুতের ইন্সপেক্টরদের নাম্বার রাখবেন। কোনো সড়কে বাতি না জ্বললে জানতে চাইবেন কেন বাতি জ্বলছে না। কেউ রেসপন্স না করলে লিখিত অভিযোগ দেবেন। পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীরা অনেক সময় শোনা যায় এক-দুই ঘণ্টা কাজ করে চলে যায়। এদের ব্যাপারেও অভিযোগ দেবেন। তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বরখাস্ত করে দেব।
হকার উচ্ছেদ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও র্যাবের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অবৈধ হকার উচ্ছেদ হওয়ায় মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। মানুষ খুব খুশি। মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ নিরসন হয়েছে। গরিব হকারদের জন্য হলিডে মার্কেটের ব্যবস্থা করব। তবে, হকারদের নিয়ে কাউকে চাঁদাবাজি করতে দেওয়া হবে না। অলিতে-গলিতে হকার বসিয়ে মানুষকে কষ্ট দেওয়া বন্ধ করব। রেলওয়ে ও গণপূর্তর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি। পরিত্যক্ত ভূমিতে কেবল সপ্তাহে দু’দিন হলিডে মার্কেট চালু করা হবে।
হলিডে মার্কেট প্রসঙ্গে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী রমিজুর রহমান জানান, চসিকের উচ্ছেদ অভিযানে বায়েজিদ বোস্তামিতে দুটি ভূমি অবৈধ দখল থেকে মুক্ত হয়েছে। বায়েজিদ এলাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের উদ্ধার করা জায়গায় হকারদের জন্য হলিডে মার্কেট স্থাপনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে হবে। জনস্বার্থ বিবেচনায় হলিডে মার্কেট বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
চসিকের প্রকৌশল বিভাগের উদ্দেশে মেয়র বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ফুটপাত রং করা, জেব্রাক্রসিং এবং রোডমার্কিংয়ের কাজ এক মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। কিছু দিন আগে একজন জানালো একটা রাস্তা বানানোর মধ্যে রাস্তাটা কেটে ফেলেছে। সমন্বয় করলে রাষ্ট্রের সম্পত্তির এ অপচয় রোধ করা যাবে। আমাদের কিছু কিছু সড়কে ব্লক দিয়ে নির্মাণ করা যায় কিনা তা ভাবতে হবে। প্রয়োজনে পাইলট প্রকল্প নিতে হবে।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, স্থায়ী কমিটির পরামর্শ অনুসারে ১ জুলাই থেকে অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হবে। চসিকের অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের কার্যক্রমও অনেক এগিয়ে গেছে।
সভায় ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রউফ জানান, গ্রীষ্মে কিছু এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা পানি সরবরাহ ও লিকেজ মেরামতের জন্য ভিজিল্যান্স টিম গঠন করেছি। শিগগির পানির সংকটের সমাধান হবে।
সভায় ট্রাফিক বিভাগের এডিসি মো. কাজী হুমায়ুন রশীদ বলেন, অবৈধ হকার উচ্ছেদ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সর্বাত্মক সহায়তা করেছে এবং ভবিষ্যতেও এধারা অব্যাহত থাকবে। তবে, উচ্ছেদ অভিযান বিকেলে পরিচালনা করলে আরো বেশি সুফল পাওয়া যাবে। কারণ হকাররা মূলত বিকেলে সড়ক-ফুটপাত দখল করে নিচ্ছে যা নগরে তীব্র যানজট সৃষ্টি করছে। নির্বিঘ্নে রাস্তা পারাপারের স্বার্থে নগরজুড়ে জেব্রা ক্রসিং গড়ে তুলতে হবে।