নিরেন দাস,জয়পুরহাট
রাজশাহীকে নিয়ে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগর ভবনের সিটি হল সভাকক্ষে নগরীর চলমান উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিতকরণের লক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মেয়র এ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।এ সময় শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র লিটন বলেন, ৫ বছর স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- ব্যাপক কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব হ্রাস ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি। পাশাপাশি নদী ও বরেন্দ্র অঞ্চলভিত্তিক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। সিটি করপোরেশনের এলাকা সম্প্রসারণ করাও এই পরিকল্পনার অংশ। প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প; কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ এবং অপসারণ ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন; নগরীর কুমারপাড়া গুলগোফুর পেট্রল পাম্প থেকে সাহেববাজার বড় মসজিদ, বড়কুঠি, পাঠানপাড়া, শিমুলতলা ক্লাব হয়ে ফায়ার ব্রিগেড মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প আছে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনায়।
এছাড়া রাজশাহী মহানগরীর চকপাড়া এলাকায় স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন প্রকল্প; ওয়ার্ড পর্যায়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সড়কবাতিতে আলোকায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক নৌবন্দর স্থাপন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন ও বাস চলাচল চালু করা এবং বঙ্গবন্ধু রিভারসিটির কার্যক্রম শুরু করা আছে স্বল্পমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনায়।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- ১৫০ শয্যার সিটি হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প, নগরীর সম্প্রসারিত এলাকায় সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়ন, শহরে ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাপনার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নওদাপাড়া এলাকায় পরিচ্ছন্ন কর্মনিবাস নির্মাণ ও শেখ রাসেল সায়েন্স সিটি ও সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর ফ্লাইওভার/ওভারপাস/ আন্ডার পাস নির্মাণ প্রকল্পও রয়েছে এই পরিকল্পনায়। ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে থাকবে ট্রাম সার্ভিস।
মেয়র বলেন, রেলের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী শিগগিরই ট্রেন চলাচলের জন্য রেলের ডাবল লাইন হতে যাচ্ছে। চালু হতে যাচ্ছে ডাবল ডেকার ট্রেন। কোর্ট স্টেশন সংলগ্ন নির্মিতব্য ইয়ার্ডে ভারত ও নেপাল থেকে আনিত পণ্য সামগ্রী নামানো ও ওঠানো হবে। আরডিএ এর মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সিটি এলাকা উত্তর দিকে বৃদ্ধি পাবে। ফলে উত্তর-দক্ষিণে চলাচল বাড়বে। রাজশাহী সিটির আয়তন তিন থেকে চারগুণ বৃদ্ধির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। শহরের মধ্যে রেলক্রসিংগুলোতে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে। আগামীতে মানুষ ও যানবাহন সংখ্যাধিক্যের কারণে শহরের উত্তর-দক্ষিণে চলাচল ক্রমবৃদ্ধিতে ভবিষ্যতে যানজটসহ দুর্ঘটনাও বাড়বে।
সার্বিক দিক বিবেচনায় জনস্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে দুর্ঘটনারোধ ও নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত এবং ভবিষ্যতে উদ্ভূত যানজট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী ৫০/১০০ বছরের বাস্তবতায় রাজশাহী মহানগরীতে রেলক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমান মুহূর্তে ফ্লাইওভার তৈরি করা না হলে ভবিষ্যতে তা করা কঠিন হবে, নির্মাণ ব্যয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। আপাত দৃষ্টিতে ফ্লাইওভারের ব্যবহার সীমিত মনে হলেও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ফ্লাইওভার নির্মাণ অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) চেয়ারম্যান জিয়াউল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন প্রামাণিক, প্যানেল মেয়র-১ নিযাম উল আযীম, প্যানেল মেয়র-২ আব্দুল মোমিন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, রজব আলী, আনোয়ার হোসেন আনার, বেলাল আহম্মেদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান, ড. তসিকুল ইসলাম রাজা, কবি আরিফুল হক কুমার, সাবেক অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ বকুল, সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. নূর-ঈ সাঈদ প্রমুখ।
সঞ্চালনা করেন রাসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ মিশু।