ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫ সাংবাদিককে জেলে পাঠানোর হুমকির পরদিনই বদলি এসিল্যান্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, লালমনিরহাট:

জমি খারিজ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়ায় লালমনিরহাটে ৫ সাংবাদিককে অফিসে আটকিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে জেল পাঠানোর হুমকির ঘটনায় লালমনিরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ-আল-নোমানকে বদলি করা হয়েছে। তাকে ঠাঁকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় বদলি করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত একটি আদেশ ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসেছে।

 

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) রাতে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টিএম মমিন।

 

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে লালমনিরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। প্রায় ৪০ মিনিট পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টিএম মমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অফিস গেটের তালা খুলে সাংবাদিকদের মুক্ত করেন।

 

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ওই সহকারী কমিশনার সাংবাদিকদের ‘দালাল’ বলে অপমান করতে থাকেন। এসময় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নিলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে সাংবাদিকরা সকলে ঘটনাস্থলে ত্যাগ করেন।

 

এদিকে ওই দিনে ক্ষিপ্ত হয়ে পিছনে থাকা একটি টেলিভিশনের ক্যামেরা পার্সনের মোটরসাইকেল আটকিয়ে ৫ হাজার টাকা জরিমান করেন সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ-আল-নোমান।

 

এ ঘটনার পর জেলার কর্মরত সংবাদকর্মীরা শহরের মিশনমোড়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। দুপুর ২টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টিএম মমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। অভিযুক্ত সহকারী কমিশনারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে সাংবাদিকরা অবরোধ তুলে নেন।

 

এদিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে সাধারণ নিরীহ লোকজনকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। তুচ্ছ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের ছাগল খোড়ারে দেওয়া ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করার অভিযোগ ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও জমি খারিজের নামে সাধারণ লোকজনকে হয়রানি করার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের আনন্দ বাজার এলাকার উজির মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি।

 

এদিকে সাংবাদিকদের সাথে অশোভন আচরন ও পাঁচ সাংবাদিককে আটক করে জেলে পাঠানোর হুমকির ঘটনায় ফুঁসে উঠেছেন জেলা ও উপজেলায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা। তারা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানিয়েছেন।

 

সাংবাদিকরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের তিনজন অফিস সহকারী ভূমি সংক্রান্ত শুনানি করছিলেন। সেখানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপস্থিত ছিলেন না। মাই টিভি ও ডেইলি অবজারভার পত্রিকার সাংবাদিক মাহফুজ সাজু এ শুনানির ভিডিও ধারণ করেন। এতে অফিসের স্টাফরা ক্ষুদ্ধ হয়ে সহকারী কমিশনারকে ডেকে আনেন। সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকারের নির্দেশে সাংবাদিক মাহফুজ সাজুকে আটকিয়ে রাখেন।

 

সাংবাদিক আটকে রাখার খবর পেয়ে প্রেসক্লাব থেকে ৪ জন সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম বিপু, লিয়াকত হোসেন, নিয়ন দুলাল, এসকে সাহেদ, ফারুক আহমেদ ও কাওছার আহমেদ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকেও অফিসে আটকে রাখা হয়।

 

সাংবাদিক মাহফুজ সাজু বলেন, ‘সেবা নিতে আসা লোকজনের সাথে খারাপ আচরণ করা হয় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিসে। এ তথ্য জানতে এসে সত্যতা পাই। এসিল্যান্ড আমাকে অফিসে আটকালে সহকর্মীদের ফোন দিলে তারা ঘটনাস্থলে আসেন। এসিল্যান্ড তাদেরকেও অফিসে আটকিয়ে রাখেন,’ তিনি বলেন। ‘এসি ল্যান্ড সাংবাদিক সম্পর্কে খুবই অপ্রীতিকর মন্তব্য করেছেন। আমাদের জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন,’ তিনি যোগ করেন।

 

লালমনিরহাট প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এটিএন বাংলা ও দৈনিক সমকাল পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন স্বপন জানান, জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। ইতিমধ্যে ওই কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।

 

তিনি আরো জানান, শুধু বদলিই নয় তদন্ত করে ওই এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় সাংবাদিকরা আন্দোলনে যাবেন।

 

এ বিষয়ে লালমনিরহাট টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম ও যমুনা টিভির জেলা প্রতিনিধি আনিসুর রহমান লাডলা বলেন, ‘বদলি কোন শাস্তি হতে পারে না।’ তিনি তদন্ত করে ওই এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার দাবি জানান।

 

সাংবাদিকদের অফিসে আটকিয়ে গালিগালাজ ও জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন উত্তর দেননি। কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এক মোটরসাইকেল আরোহীর ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বলে তিনি দাবী করেন।

 

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টিএমমমিন সাংবাদিকদের জানান, সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল নোমানকে ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঠাকুরগাঁও জেলায় বদলি করেছেন। তিনি আরো জানান, বিষযটি জেলা প্রশাসক খতিয়ে দেখছেন।