ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২৭শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নাবিক নাজমুলের ফোনকল ‘আমার জন্য দোয়া কইরো, এটাই হতে পারে শেষ কথা’

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ভারত মহাসাগরে ২৩ নাবিক ও ক্রুসহ বাংলাদেশি পণ্যবাহী একটি জাহাজ জিম্মি করেছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন সিরাজগঞ্জের নাবিক নাজমুল হক হানিফ। নাজমুলের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের চর নুরনগর গ্রামে। নাজমুল এ গ্রামের কৃষক আবু সামা শেখ ও নার্গিস বেগম দম্পতির ছেলে।

 

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেলে নাবিক ছেলে আটকের খবরে বার বার কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছেন মা নার্গিস বেগম। দুশ্চিন্তায় হৃদরোগ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বাবা আবু সামা। উৎকণ্ঠায় আছেন স্বজনেরা।

 

নাজমুলের মা নার্গিস বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার কলিজাটা জ্বলে যাচ্ছে। তোমরা আমার নাজমুলকে আমার কাছে আইনা দাও। নাজমুলকে ছাড়া আমরা বেঁচে থাকতে পারবো না। মঙ্গলবার বিকেলে নাজমুলের অফিস থেকে ফোন করে বলা হয়, জলদস্যুরা নাজমুলদের জাহাজ আটক করেছে, কোনো দুশ্চিন্তা কইরেন না, আমরা সবাইকে উদ্ধারের চেষ্টা করছি।’

 

‘তার কিছুক্ষণ পর নাজমুল ফোন দিয়ে বলে- আমাদের জাহাজসহ জলদস্যুরা আমাদের আটক করেছে, মোবাইল ফোন নিয়ে নিচ্ছে। আমার জন্য তোমরা দোয়া কইরো, আর কথা নাও হতে পারে। এটাই হতে পারে শেষ কথা। এই কথা বলেই ফোন কেটে দেয়। আর কথা হয়নি। পরে শুধু পানি খেয়ে ইফতার করেছি।’

 

নার্গিস বেগম আরও বলেন, ‘আমার পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে তিনজন মারা গেছে। এখন নাজমুল আর এক মেয়ে আছে। মেয়ে বিয়ে দিয়েছি কয়েক বছর আগে। বয়সের ভারে নাজমুলের বাবা আর আগের মতো কাজ করতে পারে না। ২০২২ সালে নাজমুল জাহাজের ডেক ডিপার্টমেন্টের নাবিক হিসেবে যোগ দেয়।’

 

নাজমুলের কাঁধেই পুরো পরিবারের দায়িত্ব। নাজমুলকে আটকের খবরে তার বাবার হার্টের সমস্যা বেড়ে গেছে। মেয়ে তাকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে গেছে।

 

নার্গিস বেগম বলেন, ‘নাজমুলই আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, ছেলেকে যেন সরকার আমার বুকে ফিরিয়ে দেয়।’