ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রামু সড়কে বালুবাহী ট্রাকের রাজত্ব, ধুলোতে অতিষ্ঠ জনজীবন

নুর মোহাম্মদ, কক্সবাজার:

শীত মৌসুমের শুরু থেকেই কক্সবাজারের রামুর সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাটি-বালিবাহী ডাম্পার, পিকআপ ও ট্রাক। রাত-দিন বেপরোয়া গতিতে সড়কে রাজত্ব করছে এসব ট্রাক। এর প্রভাব পড়ছে সড়কগুলোতেও। বালিবোঝাই ট্রাকের ওপরে কোনো কাপড় বা তেরপলের ঢাকনি না থাকায় বাতাসে মাটি-বালি উড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে। যা রাস্তায় কয়েক ইঞ্চি ধুলার আস্তরণে বালিময় হয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে বাড়ছে বায়ুদূষণ।

 

মাটি ও বালি ব্যবসায়ীদের জন্য কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের রাতগুলো বাণিজ্যবান্ধব। হাড় কাঁপানো শীতের রাতে কুয়াশায় ঢাকা থাকে প্রকৃতি। কিন্তু এই মৌসুমটি কাজে লাগিয়ে পরিবেশ ধ্বংস করছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিনরাত বাঁকখালী নদী, বিভিন্ন ছড়া, কৃষিজমি ও পাহাড় হতে অবৈধভাবে বালি-মাটি লুট করে রাতের আঁধারে বিক্রি করছেন।

 

সরেজমিনে রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল, চাকমারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, কাউয়ারখোপ, জোয়ারিয়ানালা, রশিদনগর ইউনিয়নে ঘুরে দেখা গেছে গ্রামীণ সড়কে বালি মাটি ভর্তি ট্রাকের বেপরোয়া চলাচল। মাটিভর্তি ট্রাকে করে কৃষিজমির উর্বর মাটি (টপসয়েল) নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এতে কৃষিজমির উর্বরতা যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

 

চোরাই বালি মাটি পরিবহনে নিয়োজিত বিদ্যুৎ গতির বেপরোয়া পিকআপ, ১০ চাকার ডাম্পার ও ট্রাকগুলো স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষার্থীদের চরম অসুবিধা ও ঝুঁকির কারণগুলো বিবেচনায় আনছে না। ধুলোবালির কারণে শিক্ষার্থীরা হাঁচি-কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

 

এ ছাড়া ধুলোবালিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সড়কের পাশের দোকানিরা। জিনিসপত্র পরিষ্কার করে রাখার কিছুক্ষণের মধ্যে তা ধুলোতে লাল হয়ে যায়। অনেকে ধূলোবালি থেকে পরিত্রাণ পেতে রাস্তায় পানি ছিটানোর পরও নিস্তার পাচ্ছেন না।

 

ফতেখাঁরকুল ২ নম্বর ওয়ার্ডের এমইউপি সদস্য ছালামত উল্লাহ বলেন, বালুবাহী এসব যানবাহনের ফিটনেস নেই। চালকের লাইসেন্সও নেই। অদক্ষ চালকরা বেপরোয়াভাবে বালুবাহী ডাম্পার-ট্রাক-পিকআপ চালানোয় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা বেড়ে চলছে। গাড়িগুলোতে নাম্বার না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে গেলে তাদের কোনো হদিস পাওয়া যায় না। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্পিড ব্রেকার দেওয়ার দাবি জানান।

 

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, ধূলোবালির কারণে মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। ধুলাবালি যে সব জায়গায় বেশি সে সব জায়গায় মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি। এ ছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বালি বহনকারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করা উচিত।

 

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিরুপম মজুমদার বলেন, ইতিমধ্যে কৃষিজমির উর্বর মাটি কাটা এবং অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের জন্য কিছু স্থানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের নিয়মিত অভিযান চলমান রয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।