শহিদুল ইসলাম, ফরিদপুর:
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় জুয়া খেলতে বাধা দেওয়ায় রাতের আঁধারে এক বৃদ্ধের বসতঘরের তালা ভেঙ্গে মালপত্র লুট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও অগ্নিসংযোগকারী দুর্বৃত্তরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের হুমকিতে বসতভিটা ছেড়ে বর্তমানে ঢাকায় থাকতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের।
ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের পীরেরচর গ্রামের বাসিন্দা এক বৃদ্ধার পরিবারের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে। তবে ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তার ভাষ্য, ঘটনার তদন্তে তেমন কোন ক্লু পাওয়া যায়নি। তাই পরবর্তীতে থানার ওসিকে তিনি ওই ঘটনার আর কোন আপডেট জানাননি।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, মনোয়ারা বেগম (৮৮) নামের বৃদ্ধা তার ১৫ বছরের এক নাতনীকে নিয়ে উপজেলার আলগী ইউনিয়নের পীরেরচর গ্রামে বসবাস করেন। ওই বৃদ্ধার মেয়ে ও জামাই তাদের দুই ছেলে নিয়ে ঢাকায় রায়ের বাজারে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। সেখানে বৃদ্ধার মেয়ে একটি গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন এবং মেয়ের জামাই ব্যবসা করেন। এতে তাদের যা আয় হয়, সে উপার্জন দিয়েই বৃদ্ধার গ্রামের বাড়ি ও ঢাকায় মেয়ে-জামাইয়ের সংসার চলে। গত ডিসেম্বর মাসে মনোয়ারা বেগম অসুস্থ হওয়ায় নাতনীকে নিয়ে জামাই-মেয়ের কাছে ঢাকায় যান ওই বৃদ্ধা। এতে তার গ্রামের বাড়িটি ফাঁকা হয়ে যায়। সেই সুযোগে স্থানীয় কিছু বখাটে-জুয়াড়িরা ওই ফাঁকা বাড়িটি তাদের দখলে নেয়। সেখানে দিনরাত মাদকের নেশায় ও জুয়া খেলার আখড়ায় পরিণত করে তারা। পরে বখাটেদের জুয়া খেলতে বাধা প্রদানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে একাধিকবার সাহায্য চায় বৃদ্ধা ও তার পরিবার। এতে বখাটেরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতের আঁধারে পরপর দুইদিন বৃদ্ধার বসতঘরের তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে মালপত্র ভাঙচুর, লুটসহ বাড়ির বারান্দায় আগুন দেয়। এতে মুরগীর খোয়াড়, খড়ের পালা ও গাছপালা পুড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরদিন খবর পেয়ে ওই বৃদ্ধার মেয়ে লাকী বেগম তার স্বামীকে নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে তাদের বসতঘরে আগুনের ঘটনার বিষয়টি প্রতিবেশী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানান। এতেও কোন সুরাহা না পেয়ে রোববার (১১ জুন) ভাঙ্গা থানায় একটি অভিযোগ দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টির তদন্তকার্য চালায়।
ভুক্তভোগী গার্মেন্টসকর্মী লাকী বেগম জানান, থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর বখাটেরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শণ করছে। ঘটনার ৭ দিন পরও পুলিশ কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি। এতে তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিক মিয়া ও ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য ওসমান মাতুব্বরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায় নি। তবে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেশীরা জানায়, প্রায় ওই নির্জন জায়গায় কিছু অপরিচিত লোকদের আনাগোনা করতে দেখা যায়। তারা শুধু নেশা ও জুয়ায় আশক্ত নয়, হিংস্র প্রকৃতির ও প্রভাবশালী। ফলে তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তদন্তকারী এএসআই মো. মনির হোসেন জানান, বসতঘরটি নির্জন হওয়ায় কে বা কারা সেখানে আগুন দিয়েছে তা কারও চোখে পড়েনি। তদন্তে গিয়ে তেমন কোন ক্লু পাওয়া যায়নি।
থানার ওসি জিয়ারুল ইসলাম বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয় বলে জানান। তবে, খোঁজ নিয়ে তিনি নিজেই সরেজমিনে পরিদর্শনে যাবেন বলে জানান।
এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪: