শিব্বির আহমদ রানা,
লেখক: শিক্ষক ও সংবাদকর্মী
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে সফল ব্যক্তি, সমাজের গুণিজনকে দাওয়াত করা উচিত। এখন দাওয়াত পায় সমাজের তলানীতে বাস করা, চারিত্রিক অধঃপতনের কর্তাব্যক্তিরা। এরা মঞ্চে উঠে জাতীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কি এমন বার্তা দিবে? একটা সময় সমাজের গুণিজন, ইউএনও, এ্যসিল্যান্ড, শিক্ষা অফিসার, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা এসব অনুষ্ঠানে এসে চমৎকার কথা বলতেন। আর শিক্ষার্থীরা তন্ময় হয়ে কথাগুলো শুনতেন। যে কথায় তারা স্বপ্ন বুনতো, বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতো।
কিন্তু এখন ভদ্রপোশাকের আবরণে মাদককারবারী, চোর-ডাকাত, সুদিমহাজনরা এসব অনুষ্ঠানে সাদরে আমন্ত্রিত। এরা নিজেরাই বিভ্রান্তির বেড়াজালে নিমর্জ্জিত। এরা কিভাবে নতুন প্রজন্মের জন্য ভাল কিছু শুনাবে? এখনকার অনুষ্ঠানে ডিজে গান হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সহাবস্থানে নাচে-গানে পুরো অনুষ্ঠানটা হয়ে যায় ডিজে পার্টি। এভাবেই দিনদিন অধঃপতনের দিকে আমাদের নৈতিকতা, মুল্যবোধ, চেতনাশক্তি, বোধশক্তি।
একটা প্রতিবন্ধি প্রজন্মের দিকে প্রিয় দেশ। একটা জাতীকে সমূলে ধ্বংস করতে চাইলে প্রথমে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যে আঘাত আনতে হবে। তারপর নতুনপ্রজন্মকে অশ্লীলতার স্রোতে ভাসাতে হবে। ব্যাশ, জাতীর মেরুদন্ড শেষ। এখানে কোনো সেক্টরই বাদ যায়নি। গড্ডালিকাপ্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে অনেককে বলতে শুনেছি ‘এসববে মাথা দিতে নেই, একটু আধটু হচ্ছে হোক’! এভাবে একটু, আধটু হতে হতে গোঁড়ায় পঁচন ধরলে পরে আগায় পানি ঢেলে লাভ হবে না। কেন না ‘অ-কালে না নোয়ালে বাঁশ, পরে বাঁশ করে ঠাস ঠাস’।
ভালোর মধ্যে যারা মন্দটা পরখ করতে পারে না তারা কৌশলী শয়তান। এরা সভ্যতার দোহাই দিয়ে, আধুনিকতার বুলি উড়িয়ে, সংস্কৃতির জোয়ার বলে যে উড়ো উড়ো ফিরিস্তি শুনায় তা আমাদের অনেকেরই জানা। একটা সুশৃঙ্খল প্রজন্মের জন্য, বাসযোগ্য পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য আমাদের উচিত শুদ্ধচর্চা করা। না হয় এ আধুনা সংস্কৃতির পদতলে পিষ্ট হবে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সভ্যতা, সাহিত্য, শিক্ষার সমৃদ্ধ ভান্ডার।