নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস। ভাষার স্বচ্ছ স্বাক্ষর বই। গোটা গোটা হরফের বই হাতে তুলে নেন অনেকে। সারা বছর পড়ার এই আনন্দ বাড়ে এই মাসে। বড়দের তো বইমেলা নিয়ে আনন্দের শেষ নেই—ছোটদেরও থাকে সমান আনন্দ। বইমেলায় ছোটরা যায় বাবা-মা’র হাত ধরে। বন্ধুরা দল বেঁধে, কেউ বা জুটি বেঁধে। বইমেলা মানেই হালের লেখকদের ভিড়। লেখকদের সামনে থেকে দেখা, তাদের সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ। আর নতুন বই মানে অদ্ভুত অনুভূতি।
বই মনের জানালা খুলে দেয়। আপনি পাঠক না হোন, তারপরও একবার হলেও বইমেলায় যাবেন। ইচ্ছে হবে একটা না একটা বই কেনার। বই একটা কিনবেনই। আর এভাবেই হয়তো শুরু হবে বইমেলার যাত্রা। তবে এই যাত্রার ক্ষেত্রে একটি প্রক্রিয়া আছে। সেটি একটু বলে নেওয়া ভালো। লিখেছেন ফাতিন আহমেদ।
বইমেলার পরিকল্পনা চাই
বইমেলায় যাওয়ার একটা পরিকল্পনা থাকা জরুরি। এখনকার সময় অনেকেই বইমেলায় যান ঘুরতে। আবার অনেকে এমনিতেই প্রতিদিন বইমেলায় যান। তবে আপনি যদি বই পড়া শুরু করছেন এমন হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে পরিকল্পনা করতেই হবে। সচরাচর দুই-তিনজন একসঙ্গে গেলে বইমেলায় অনুভূতি উপভোগ করা যায়। স্টলে স্টলে ঘুরে বই দেখে যাচাই করার সুযোগ পাওয়া যায়। আপনার সঙ্গে থাকা সঙ্গীর সাজেশনও পাবেন। সাজেশন পাওয়াটা জরুরি। একা একা পুরো বইমেলার এলাকা ঘোরা কঠিন। তাই সঙ্গে বই পড়ে এমন একজন সঙ্গী রাখা ভালো।
স্টলের ম্যাপ দেখুন
বইমেলায় অনেকে পরিকল্পনা করে যান। নির্দিষ্ট প্রকাশনীর খোঁজ করতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। তাই বইমেলায় গেলে প্রথমে স্টলম্যাপ, নম্বর নোট করে রাখুন। প্রয়োজনে তথ্যকেন্দ্রের সাহায্য নিন।
বইয়ের ক্যাটালগ সংগ্রহ করুন
বইমেলায় অনেক প্রকাশনীর ক্যাটালগ থাকে। আপনিও ক্যাটালগ সংগ্রহ করুন। ক্যাটালগে বইয়ের তালিকা থাকে। এ তালিকা অনুসরণ করেও অনেক সময় ভালো বই পাওয়া যায়। স্টলে বই সাজানো থাকে। তবে ভিড় থাকলে স্টলে বই দেখা কঠিন। তাই ক্যাটালগ নিন।
বই যাচাই করে নিন
পছন্দের বই নিলে তা একবার উল্টেপাল্টে দেখে নেবেন। অনেক সময় প্রিন্টে কিছু সমস্যা থাকে। সেজন্য কোনো পাতা বাদ পড়তে পারে বা অনেক সময় পেজে অসঙ্গতি থাকে। হয়তো সব খুঁত সবসময় চোখে পড়ে না। কিন্তু একবার উল্টেপাল্টে দেখে নেবেন। এটা জরুরি। স্টলে প্রয়োজনে বই পালটে দিতে বলবেন। অনেকে শুধু পড়ার জন্য বই কেনেন না। সংগ্রহে রাখতে চান। তাই বইয়ের প্রচ্ছদ বা বাইন্ডিং ভালোভাবে দেখে নিন।
বইয়ের যত্ন নিন
বই কেনার পর সংগ্রহ করা জরুরি। বিচ্ছিন্নভাবে বই সংগ্রহ করবেন না। বইয়ে লেবেল দিন। নাহয় ভেতরে নোট দিন। অনেকেই সংগ্রহের তারিখ বইয়ের ভেতর লিখে রাখেন। নোট বা শর্টকোড করেন। আবার অনেকে লেবেল লাগিয়ে রাখেন। লেবেল লাগিয়ে তাকে ভালোভাবে সংগ্রহ করুন। তবে তাকে রেখে দিলেই হবে না। সময়ে সময়ে বই বের করে রোদে শুকোতে দিন। রোদে শুকোতে দেওয়ার পাশাপাশি ধুলো ঝাড়ুন। বইয়ের তাকও পরিষ্কার করুন। তাছাড়া দরজা জানালার পাশে কখনো বইয়ের তাক রাখবেন না। রোদ-বৃষ্টির ছাঁট লাগলে বইয়ের ক্ষতি হয়।
লাগাতে পারেন মলাট
নতুন বই কিনেছেন। মলাট লাগিয়ে নিন। প্লাস্টিকের র্যাপও করতে পারেন। বই দীর্ঘস্থায়ী হবে। বইয়ের মলাটকে সুরক্ষিত করতে পারলে ধার দেওয়ার পরও বই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কম। বইয়ের ভেতর কোনো পাতা ভাঁজ করবেন না। বুকমার্ক ব্যবহার করুন। বইমেলায় অনেক স্টল এখন বইয়ের সঙ্গেই বুকমার্ক দিয়ে থাকে। এটিও ভাবনায় রাখা জরুরি।
বইয়ে রাসায়নিক পাউডার নয়
বইয়ে পোকা হতে পারে ভেবে নতুন বইয়ে রাসায়নিক পাউডার ব্যবহার করেন। এমনটি করা উচিত না। আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া বইয়ের কাগজেও দাগ পড়ে যায়। বইয়ের ভেতরে নিমপাতা এবং বুক শেলফের প্রত্যেকটি তাকে ২টি করে ন্যাপথলিন বল রেখে দিন। একইসঙ্গে শুকনো ল্যাভেন্ডারের ফুল দিয়ে ছোট ছোট পুঁটলি বানিয়ে শেলফের কোনায় রাখতে পারেন। এটা বইকে পোকা কাটা থেকে দূরে রাখবে।
নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করুন
পাঠাভ্যাস থাকলে তো ভালো। আর বইমেলার উত্সবে বই পড়ার যাত্রা শুরু হলে স্বাগতম। নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করুন, শত কাজের মধ্যেও বইয়ের জন্য কিছুটা হলেও সময় বের করে নিন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও বইপড়াকে উত্সাহিত করুন। তবে জোর করার প্রয়োজন নেই। বই পড়তে পড়তে এমনিতেই বইয়ের সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়ে যাবে।