ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দুই ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার কূলকিনারা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক:

৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসের আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ছবি: আব্দুল গনি
৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজধানীতে দুটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। ঘটনার পর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন যে তারা জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করেছে। অগ্নিসংযোগকারী এবং পরিকল্পনাকারীরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতাকর্মী। এদের মধ্যে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র‍্যাব।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মাত্র দুই জনকে রেলওয়ে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এই দুই জন আসামি ঐ দুই ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বাকি ১১ জনকে বিএনপির বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও রেলস্টেশন থেকে অন্তত চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে বনানী এলাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ট্রেনটি তেজগাঁও রেলস্টেশনে থামার পর চার জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় ঐ ট্রেনের গার্ড খালেদ মোশারফ বাদী হয়ে ঢাকা রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় র‍্যাব-৫ জনকে গ্রেফতার করার তথ্য জানায়।

৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ চার জনের লাশ উদ্ধার করে। নিহতদের ডিএনএ ক্রসিং পরীক্ষার রিপোর্ট এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ অবস্থায় লাশ চারটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের মরচুয়ারিতে রাখা আছে। এ ঘটনায় ঐ ট্রেনের গার্ড এসএম নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে ঢাকা রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করেন। এই মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আট জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবী, মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য কাজী মনসুর, কামরাঙ্গীরচর থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল, ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার, কামরাঙ্গিচর থানার যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন, লালবাগ থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন স্বপন, ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান ও কবির। এদের মধ্যে নবী উল্লাহ নবী ও কাজী মনসুরকে ডিবি তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ডিবি নবী উল্লাহ নবী ও কাজী মনসুরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এই দুই আসামিকে রেলওয়ে পুলিশ অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলায় ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ দেখানো হয়েছে। তারা অগ্নিসংযোগের ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি।’ আর কোনো আসামি গ্রেফতার দেখানো হয়েছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের কাছ থেকে কিছু ক্লু পেয়েছি। তবে অগ্নিসংযোগের পেছনে কারা জড়িত বা মূল পরিকল্পনাকারী কারা সে সম্পর্কে খুঁজে বের করতে তদন্ত কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।’

 

বেনাপোল এক্সপ্রেস অগ্নিসংযোগের একদিন পর ডিবি ও র‍্যাব মোট ১১ জনকে আটক করার তথ্য জানায়, যাদের বেশির ভাগ বিএনপি নেতাকর্মী। ঐ সময় দাবি করা হয়েছিল যে, এরাই হামলার পরিকল্পনা করেছিল। পরবর্তীতে আটককৃতদের মধ্যে তিন জনকে অন্য মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস আহমেদ বলেন, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের পর আটককৃতদের মধ্যে থেকে কাউকে ঐ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি।

এদিকে, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পরদিন ৬ জানুয়ারি গণমাধ্যমে ব্রিফিংকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ দাবি করেন, যুবদল নেতা কাজী মনসুর আলম ট্রেনে অগ্নিসংযোগের মূল হোতা ছিলেন। বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী ঐ হামলায় অর্থায়নকারী ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ বলেন, অগ্নিসংযোগের আগের দিন সন্ধ্যায় হোয়াটসআপ গ্রুপে ভার্চুয়াল কনফারেন্স কলে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ট্রেনে অগ্নিসংযোগের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত যুবদল নেতা কাজী মনসুর ডিবির কাছে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মাত্র দুই জনকে শ্যোন এ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। বাকিদের অন্য মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। অপরাধীদের খুঁজে বের করতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিওফুটেজ বিশ্লেষণ করছে ছায়া তদন্তকারী সংস্থা ডিবি।