নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে প্রায় দুইমাস ধরে লড়াই চলছে। যে কারণে মিয়ানমারের অভ্যন্তরের গোলাগুলি, মর্টারশেলের শব্দে এপারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশ- মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, উখিয়ার পালংখালী ও টেকনাফের হোয়াইক্যংসহ বিভিন্ন এলাকায় ওপার থেকে মর্টারশেল, বুলেট ছুঁড়ে আসার পর থেকে এ আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়।
নিরাপত্তার কারণে ইতিমধ্যে ঘুমধুমের আটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। সম্প্রতি মিয়ানমারে গোলা সীমান্তের এপারে এসে পড়লে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মিয়ানমার-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত ঘেঁষে ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও মিয়ানমার জান্তা সরকারের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সেখানে কামানের গোলা নিক্ষেপের পাশাপাশি বিমান থেকে গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। মিয়ানমার-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে মিয়ানমার অংশে তিন দিনে অর্ধশতাধিক মর্টারশেলের বিকট শব্দে প্রকল্পিত হয়ে ওঠে এপারের সীমান্ত এলাকাগুলো।
উখিয়া-টেকনাফের সীমান্তে মিয়ানমারের ওপারে সীমান্তের কাছাকাছি হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
ঘুমধুমের স্থানীয় বাসিন্দা হাফেজ আহম্মদ জানান, গত সোমবার থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত প্রায় শতবার গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।
শুধু তাই নয়, একটি মর্টার শেল হোয়াইক্যং উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুর পশ্চিমকূল এলাকার এক প্রবাসীর বাড়িতে এসে পড়েছে। এর পর থেকে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়।
ওই প্রবাসীর স্ত্রী খালেদা বেগম বলেন, ঘরের দরজায় বসে মুঠোফোন কথা বলার সময় বাড়িতে গাছের সঙ্গে গুলি লাগলে একটা বিকট শব্দ পাওয়া যায়। তবে এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, প্রায় দুইমাস ধরে ওপারে গোলাগুলি চলছে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিনই গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন সীমান্ত এলাকার জনসাধারণ।
তিনি বলেন, বিশেষ করে মর্টারশেল ও বুলেট নিক্ষেপের পর থেকে আতঙ্ক বেড়ে যায়।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দের কারণে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু এলাকার মাদ্রাসাসহ আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দেওয়া হয়েছে।
গত সোমবার থেকে গোলাগুলির শব্দ বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আজ বুধবার বান্দরবান জেলা প্রশাসক সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে আসছেন। পরিদর্শনের পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরাকান আর্মি রোববার রাখাইনের মিনবিয়া শহরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৩৮০ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর দখল করেছে। রাখাইনের ম্রাউক ইউ, কিউকটা ও রাথেডং এলাকায় দুই পক্ষের লড়াই চলছে।
এদিকে আরাকান আর্মি এক বিবৃতিতে দাবি করেছে জান্তার লড়াই করার সামর্থ্য নেই। তারা এখন আরও বেশি গোলা নিক্ষেপ ও আকাশ থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে।
বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, সীমান্ত এলাকায় বিজিবির নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
মিয়ানমারের গোলা বর্ষণের ঘটনায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি’র কাছে প্রতিবাদ লিপি পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, গত কয়েকদিন থেকে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির তুমুল সংঘাত চলছে।
ফলে সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের নাগরিকেরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে জনগণকে আশ্বস্ত করতে সীমান্তে বিজিবি-কে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে এবং সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, কেউ যেন আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে না পারে।
প্রসঙ্গত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি জান্তার শাসনে থাকতে চায় না। তারা রাখাইন রাজ্যকে স্বীকার করে না। বিদ্রোহী গোষ্ঠী এই রাজ্যকে আরাকান বলে মনে করে। তাদের মতে, আরাকান একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। বার্মার রাজা আরাকান দখল করে রাজ্যটিকে দেশটির অন্তর্ভুক্ত করে।
আরাকানের স্বাধীন সত্ত্বা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে সশস্ত্র সংগ্রাম করে যাচ্ছে আরাকান আর্মি। সম্প্রতি তারা দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পালতোয়া, যেটি মিয়ানমারের চিন রাজ্যে অবস্থিত। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে পালতোয়ার দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার।