ই-পেপার | শনিবার , ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইজিপির কাছে অভিযোগ

সিএনএন বাংলা২৪,গাইবান্ধা

গাইবান্ধা সদর থানার এসআই ছানোয়ার, এএসআই নুরুন্নবী ও রুবেলের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরের ‘আইজিপি’র কমপ্লেইন সেলে’ লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ জুন) দুপুরে ডাকযোগে এ অভিযোগ করা হয়। অভিযোগে রাস্তায় স্যালো ইঞ্জিন চালিত অটো আটকিয়ে টাকা দাবি ও ব্যবসায়ীকে লাথি মেরে থানায় নেওয়া এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে অসাদাচারণের কথা উল্লেখ করা হয়।

গাইবান্ধা সদর থানায় অপমানের শিকার প্রেসক্লাব গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট জাভেদ হোসেন এ অভিযোগ করেন।

আইজিপির দপ্তরে করা অভিযোগে বলা হয়, ১১ জুন সন্ধ্যার পর গাইবান্ধা সদর থানা পুলিশ একটি স্যালো ইঞ্জিন চালিত ভটভটি ও কিছু ক্রয়কৃত পুরাতন ব্যাটারি তুলসিঘাট এলাকা থেকে থানায় নিয়ে আসে। এ সময় আলী নামের একজন পুরাতন ব্যাটারি ব্যবসায়ী ফোন করে সাংবাদিক জাভেদ হোসেনকে থানায় আসার জন্য অনুরোধ করে। জাভেদ হোসেন বিষয়টি জানার জন্য আলীর ফোনটা সদর থানার ডিউটি অফিসারকে দিতে বলে। প্রথমে ডিউটি অফিসার ফোনটি নিতে অপরগতা প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে ফোনটি নিয়ে তিনি সাংবাদিক জাভেদের সঙ্গে কথা বলেন। ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে থাকা এসআই ছানোয়ারের কাছে কি কারনে পুরাতন ব্যাটারিগুলো থানায় নিয়ে আসা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি ব্যবসায়ী আলীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়। যা জাভেদ হোসেন মোবাইল ফোনে শুনতে পায়। এক পর্যায়ে সাংবাদিক জাভেদ হোসেনকে কোনো তথ্য দিতে পারবেন না বলে মোবাইল ফোনটি এসআই ছানোয়ার আলীর দিকে ছুঁড়ে মারেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, এ ঘটনায় প্রেসক্লাব গাইবান্ধার সভাপতি খালেদ হোসেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি রবিন সেনের সঙ্গে আলোচনা করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শেখ রোহিত হাসান রিন্টু, নিরাপদ চিকিৎসা চাই এর সুমনসহ একটি প্রতিনিধি দল থানায় গিয়ে ওসি তদন্ত ও ওসি ইনচার্জকে না পেয়ে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কন্সস্টেবলের কাছে জানতে পারে পুরাতন ব্যাটারিগুলো এএসআই নুরুন্নবী ও এএসআই রুবেল নিয়ে এসেছেন। তারা আরও জানতে পারে ব্যাটারি ব্যবসায়ী জুয়েলকে মারধর করে থানায় ভিকটিম রুমে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

সাংবাদিক জাভেদ থানা থেকে নম্বর নিয়ে এএসআই নুরুন্নবীকে ফোন দিলে তিনি তাকে থানার ভেতরে পুলিশ ক্লাবে ডেকে নেন। পুলিশ ক্লাবে গিয়ে ব্যাটারি ও ব্যাটারি ব্যবসায়ীকে কেন ধরে নিয়ে এসেছেন এমন প্রশ্ন করলে এএসআই নুরুন্নবী উগ্র মেজাজে বলেন, ভটভটি চালককে ডাকেন। তার কথামতো ভটভটি চালককে ডাকলে তিনি ভটভটি চালকের কাছেই বিষয়টি শুনতে বলেন। ভটভটি চালক আরিফ ইসলাম ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে যখন ২০ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেব বলেছে তখন এএসআই নুরুন্নবী ও এএসআই রুবেল উত্তেজিত হয়ে ভটভটি চালককে ধাক্কা মারেন। এবং বলেন আপনাদের যা যা শোনার ওসির কাছে শোনেন আর যা পারেন করেন।

এএসআই দের এমন অসৌজন্যমূলক আচরণে সাংবাদিক জাভেদসহ সকলে মর্মাহত হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এসে ওসি ইনচার্জ মাসুদুর রহমানের কাছে ফোন দিয়ে সমস্ত বিষয়গুলো অবহিত করেন। ওসি কথাগুলো শুনে জাভেদকে বলেন খারাপ আচরণের ব্যাপারটা আমি দেখবো। আর ব্যাটারির বিষয়গুলো যাচাই বাচাই করে দেখা হবে। এরপর রবিন সেনসহ জাভেদ হোসেন, ব্যাটারি ব্যবসায়ী আলী, ভটভটি চালক আরিফ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শেখ রোহিত হাসান রিন্টু, নিরাপদ চিকিৎসা চাই এর সুমন সবাই থানা থেকে বেড়িয়ে এসে প্রেসক্লাবে জরুরি মিটিংয়ে বসেন। জেলার সাংবাদিকদের নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবারও তারা থানায় যায়।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই সময় থানায় ওসি তদন্ত ওয়াহেদুল ইসলামকে পেয়ে তার রুমে বসে সম্পূর্ণ বিষয়গুলো তাকে জানায়। উত্তরে তিনি বলেন, এসব বিষয় নিয়ে আপনারা ওদেরকে বলবেন কেন? আমাকে বলবেন। আর সব বিষয় নিয়ে আপনারা আসেন কেন? আমি ওসি তদন্তকে পুলিশের অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ জানাই এবং বিচারের দাবি করি। তিনি আমার বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, আপনারা তো সব সময় পুলিশের দোষ ধরেন। ব্যাটারির বিষয়টি আমাকে রংপুর থেকে এসপি আকতার স্যার ফোন দিয়েছিল, আমরা যাচাই বাচাই করে ব্যাটারিগুলো কি করা যায় সিদ্ধান্ত নেব। আমরা তার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে আবারও থানা ত্যাগ করি এবং শেষবারের মতো রাত ১২টার পর থানায় গিয়ে ওসি ইনচার্জ মাসুদুর রহমানের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করি। তার কাছেও ব্যাটারি এবং পুলিশের অসৌজন্যমূলক আচরণের আশানুরুপ কোনো কিছু না পেয়ে আমরা থানা থেকে বেড়িয়ে পড়ি।

পরদিন, ১২ জুন সকালে প্রেসক্লাব গাইবান্ধায় এক জরুরি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রেসক্লাব গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক জাভেদ হোসেন আইজিপির কাছে এই অভিযোগ দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) ওয়াহেদুল ইসলাম বলেন, আমি যতটুকু জানি ব্যাটারিগুলো মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

এ ব্যাপারে প্রেসক্লাব গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক জাভেদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পুলিশ ও সাংবাদিকদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে পুলিশের ওইসব সদস্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া উচিত। সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জের (ওসি তদন্ত) কাছে বিষয়টির প্রতিকার চেয়েছিলাম তিনিও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলেছে। একটি বিশ্বাস নিয়ে আইজিপির দ্বারস্থ হয়েছি, আমি মনে করি তিনি এটার যথার্থ বিচার করে সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের ঐক্য রাখতে ভূমিকা রাখবেন।

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪