২০২১ সালে রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা। পরে ওই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সর্বত্র তীব্র প্রতিবাদ আরম্ভ হয়। এর ফলে পুরো মিয়ানমারজুড়ে খুনোখুনি ব্যাপক আকার ধারণ করে। এর প্রেক্ষিতে জাতিগোষ্ঠীভিত্তিক বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠন একজোট হয়ে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে জোর লড়াই শুরু করে।
গেলবছরের শেষের দিকে মিয়ানমারে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগঠনের জোট তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে। ফলে গত কয়েকমাস ধরে চলে আসছে সেই সংঘর্ষ। আশার আলো হচ্ছে, মিয়ানমারের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর জোট ও সামরিক বাহিনী অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয়েছে। এক্ষেত্রে চীন নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে।
শান্তিপূর্ণ অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর গত অক্টোবর থেকে বিশেষ করে দেশটির উত্তরাঞ্চলের শান রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর যে প্রবল প্রতিরোধ ও হুমকির মুখে পড়েছিল জান্তা সরকার, অস্ত্র বিরতির ফলে সেখানকার জানমালের ক্ষয়ক্ষতি আপাততঃ রক্ষা পাবে। তবে, এই অস্ত্র বিরতির মধ্যদিয়ে যেনো একটা স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে এগোয় আমরা সেই দাবি রাখছি।
মিয়ানমারের জান্তা সরকারের ব্যাপক নির্যাতন ও তীব্র নিপীড়নের মুখে তাদের আরাকান রাজ্যের লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তারা নাগরিক অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেনি। বাংলাদেশ সরকারের বারবার তাগাদা এবং কুটনৈতিকভাবে চাপ দেয়ার পরেও মিয়ানমারের জান্তা সরকার বাস্তুচ্যুত বিশাল এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়নি। আমরা আশা করবো, দেশটিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র জোটের সাথে অস্ত্রবিরতির পাশাপাশি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া তাদের বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নাগরিক অধিকার দিয়ে সম্মানের সাথে ফিরিয়ে নেওয়া হোক। বাংলাদেশ সরকারের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তাঁর ক্যারিশমাটিক যোগ্যতা দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সফল হবেন- এটি আমরা আশা করছি।