ই-পেপার | সোমবার , ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মৌলভীবাজারের শেরপুরে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা শুরু

সালেহ আহমদ স’লিপক:

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা শনিবার (১৩ জানুয়ারি ) শুরু হয়েছে।

বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। এই দিন বাঙালিরা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। তার মধ্যে পিঠা খাওয়া, ঘুড়ি উড়ানো অন্যতম। তারই ধারাবাহিকতায় প্রায় ২০০ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই মাছের মেলা।

প্রতি বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষ মূলত আসেন মাছ কেনার জন্য। এ মেলা বাঙালির সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে আছে। মেলায় বড়, মাঝারি এবং ছোট সাইজের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিক্রি করে থাকেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। মাছের পাশাপাশি বিশেষ করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন- নকশীকাঁথা, শীতলপাটি এবং কাঠের ও লোহার তৈরি হরেক রকমের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিক্রেতারা বাচ্চাদের খেলনা, টাঙ্গাইলের জনপ্রিয় জামদানী শাড়ি, বগুড়ার দই ইত্যাদি নিয়ে আসেন বিক্রি করার জন্য। এবারের মাছের মেলা হবে দুই দিনব্যাপী।

মেলা উপলক্ষে আশেপাশের মানুষের মাঝে খুশির আমেজ বইছে। স্থানীয় অনেক বেকারের টাকা আয় করার উৎস এই মেলা। গাড়ির পার্কিং দিয়েও লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করেন স্থানীয়রা। ব্যবসা করার জন্য প্রস্তুত শেরপুরসহ পাশ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষ। এদিকে সরকার বাজারের মাছ ব্যবসায়ী এবং হোটেল ব্যবসায়ীদের আশ্বাস ভালো বেচাকেনা হবে। প্রতিবছর একবার এই দিন আসে আর এই দিনে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেন স্থানীয় বাসিন্দারা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জায়গার মানুষ। এদিকে প্রবাসীরাও দেশে এসেছেন বড় মাছ কেনার জন্য।

তবে এবারের মেলা পূর্বের থেকে ভিন্ন হতে পারে। পূর্বে মেলায় জুয়া খেলা, পুতুল নাচ সহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড হতো। তবে এবারে সেটা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য উজ্জ্বল আহমদ।

তিনি বলেন, এবছর মেলার ইজারা মূল্য ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা এবং আনুমানিক ১৫০০ দোকান দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ব্যবসায়ীরা। এবারের মেলা শান্তিপূর্ণ হবে এবং মেলায় যথাযথ প্রশাসনের সহযোগিতা থাকবে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। মাছ সর্বমোট কত টাকার বিক্রি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্রেতা এবং বিক্রেতার উপর নির্ভর করে বেচাকেনা। তবে সবমিলিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হতে পারে।

উল্লেখ্য, পৌষসংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে সদর উপজেলার সাধুহাটি গ্রামের জমিদার রাজেন্দ্রনাথ দাম (মথুর বাবু) কুশিয়ারা তীরবর্তী তৎকালীন বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক স্থল মনুমুখে এ মেলার প্রচলন করেছিলেন প্রায় দুইশত বছর আগে। এই মেলা আমাদের মৌলভীবাজারবাসীর ঐতিহ্য।