সালেহ আহমদ স’লিপক:
মৌলভীবাজার জেলায় শীত উপেক্ষা করে জমি প্রস্তুুত ও রোপণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কেউ জমির আইল ঠিক করছেন, কেউ সেচের জন্য নালা তৈরি করছেন, আবার অনেকে তৈরি জমিতে পানি সেচ দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন। আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে কেউবা বীজতলা থেকে চারা তুলে তা জমিতে রোপণ করছেন। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখানো পানি শুন্যতার অভিযোগ থাকলেও পাউবো বলছে কয়েক দিনের মধ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পানি পৌছে যাবে। প্রকৃত কৃষকদের ন্যার্য মুল্যে সার, কিটনাশক, তেলের দাম কমানোর দাবী করছেন তারা।
মৌলভীবাজারে হাওর ও নিম্নাঞ্চলে পানি সঙ্কট ও কৃষিদ্রব্যদির দাম বৃদ্ধিতে বোরো চাষ নিয়ে হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা। তারপরও আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। চলতি মাসে ঠান্ডা আর শীতের হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করে বোরো ধান রোপণের কাজ করছেন মাঠে চাষিরা।
বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে জমি প্রস্তুুত ও রোপণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। নদী ও সমতল এলাকায় এখন ধুম পড়েছে বোরো ধানের চারা রোপন ও পরিচর্যার কাজ। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ধান ও চালের দাম ঊর্ধ্বগতি থাকায় চাষিরা এবার বোরো ধান চাষে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ফলে নতুন করে অনেক অনাবাদী জমিও আবাদ হচ্ছে। নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহায়ে নিজ উদ্যোগেই পানি সেচের ব্যবস্থা করছেন। পাশাপাশি পাউবোও সার্বক্ষনিক কৃষকদেরকে সহযোগীতা করছেন বলে জানিয়েছেন।
গ্রামাঞ্চলে সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার একমাত্র উপায় কৃষিকাজ। সাম্প্রতিক সময়ে এ পেশায় সরকারের আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিক নির্ভর হয়ে পূর্বপুরুষের এই ঐতিহ্যবাহী পেশাকে ধরে রেখে সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় বিগত কয়েক বছর থেকে ধানের ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি কৃষকরা দামও ভালো পাচ্ছেন। যে কারণে বোরো আবাদের জমি প্রতিবছরও বাড়ছে। এবছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬০হাজার ৫০হেক্টর। আর উৎপাদন ধরা হয়েছে ২হাজার ৯শত ৬৬ মেট্রিক টন।
একাদিক বর্গাচাষীরা বলেন, আমরা বর্গাচাষীরা সরাকারের কৃষি বিভাগের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছিনা। যারা কৃষি কাজে জড়িত নয়, তারাই সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। আমরা সরকারের কাছে দাবী রাখি, যেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের প্রতি সুদৃষ্টি রাখা হয়।
এবিষয়ে স্থানীয় একাদিক কৃষকরা জানান, তেল, সার, কিটনাশক সহ কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ দাম কমানো হোক। সেই সাথে কৃষকের ক্ষেতে পানির সেচের সমস্যা সমাধানে সরকারের সহযোগীতা চান কৃষকরা। শ্রমিক সংকট নিরসন করা প্রয়োজন। অধিক টাকা দিয়েও পাওয়া যায়না কৃষি শ্রমিক।
তীব্র শীত উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বোরোর জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণের কাজ করতে হয়। আবার জমিতে হাল চাষ ও কাঁধে করে গোবরও জমিতে দিতে হয়। বোরো ফসল আমাদের সম্বল। এ দিয়েই সংসার চলে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপ পরিচালক কৃষিবিদ শামছুদ্দিন আহমদ বলেন, বৈরী আবহাওয়া না থাকলে এবছর বোরো ফসলের ফলন ভালো হবে। ধানের ফলন বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। গত বছরের চেয়ে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকেরা ধান চাষে আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী হয়েছেন। আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। মাঠে ঘুরে ঘুরে তাদের সমস্যার কথা শুনে পরামর্শও দিচ্ছি।
এনিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজারের নিবার্হী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, গত ১৭ ডিসেম্বর বোরো চাষীদের জন্য প্রশাসনের মাধ্যমে সুইচ গেইট বন্ধ করে যেসব স্থানে গত বছরে পানি সংকট ছিল সেগুলোতে পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত কৃষকদের জমিতে পানি পৌছে যাবে। সরকারের অধিক ফসল ফলাও কার্যকমে সফলতা আসবে।