ই-পেপার | রবিবার , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হতদরিদ্র পরিবারের জমি জবরদখলে মরিয়া ভূমিদস্যু চক্র 

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার : 

 

কক্সবাজারে হতদরিদ্র পরিবারের জমি জবরদখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি ভূমিদস্যু চক্র। দুর্ধর্ষ জালিয়াত এই চক্রটি আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে প্রকৃত ওয়ারিশদের বঞ্চিত করতে নানা অপকৌশল ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। এবিষয়ে ভুক্তভোগী মালিকপক্ষ হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্টে দ্বারস্থ হওয়ার পাশাপাশি সর্বশেষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকটও লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

 

দায়ের করা ওই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার পৌরসভার ঝিলংজা মৌজার বন্দোবস্তি মামলা নং ২১২, ১৯৪৫-৪৬ মূলে বন্দোবস্তি খতিয়ান নং ১২২৪/২৯২ এর ১.৫০ একর জায়গার মালিক হলেন- কক্সবাজার পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের মধ্যম বাহারছড়ার আবুল কাশেম ও তার অন্য ভাইবোন। আবুল কাশেমের মৃত্যুর পর তার ছেলেমেয়েরা ওই জমি থেকে আনুপাতিকহারে প্রায় ৬ গণ্ডা জায়গার মালিক হন। এই জমি থেকে ভুক্তভোগী রবিউল হাসান ০.০১৯২ শতাংশের ওয়ারিশি মালিক।

 

রবিউল হাসানের দাবি, আবুল কাশেমের মৃত্যুর পর তার অংশের জমি তাদের চাচা গিয়াসউদ্দিন জালিয়াতির মাধ্যমে জবরদখল ও অন্যত্র বিক্রির অপচেষ্টা চালিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন। এ লক্ষে তিনি বিভিন্ন জাল দলিলও বানিয়েছেন। গিয়াসউদ্দিন বিভিন্ন জাল দলিল তৈরি করে তাদের অংশসহ পুরো জমিটা ভোগদখলের জোর অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এজন্য গিয়াসউদ্দিন বিভিন্ন সন্ত্রাসী ভাড়া ও গণপূর্ত অধিদফতরকে ব্যবহার করে পুরো জমি গ্রাস করার নানা অপতৎপরতা চালিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। এছাড়া গিয়াসউদ্দিনের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা তাদের নিকট থেকে ২০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করছে বলেও অভিযোগ তাদের। তা না হলে ওই জমিতে রবিউলদের প্রবেশ করতে দেবেনা বলেও প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে।

 

জানা যায়, বিরোধীয় জমিটির বিষয়ে রয়েছে হাইকোর্টের সিভিল রিভিশন মামলা ৫৯৭/২০১৯ ও ১৬১৮/২০১৮, যেটি আদার স্যুট ১৪৭/২০১১ হতে উদ্ভূত। উচ্চ আদালত ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর ওই জমির প্রকৃত মালিক রবিউল হাসানদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। এর আগে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আদেশে ওই জমিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখারও নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া বিগত ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর প্রতিপক্ষের লোকজন জমিটিতে স্থাপিত দোকানঘর ভাঙচুর করলে ১৬ নভেম্বর কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০২০/২০২২ মামলা দায়ের করা হয়। পরে উচ্চ আদালতের সিভিল রুল ৫৫৭/২০১৯ এর আদেশে বিরোধীয় জমিটি বাদীপক্ষের নামে বিএস এর ৬ নং খতিয়ানভুক্ত করতে এবং কক্সবাজারের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত-১ কে আদার স্যুট মামলা নং ১৪৭/২০১১ নিষ্পত্তি করতে বলেন।

 

রবিউল হাসানের দাবি, এই মামলা চালাতে গিয়ে তিনি আইনজীবী ও সহকারী শওকত আজমের হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হন নানানভাবে। তারা প্রতিপক্ষের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালান। পরে একই বিষয়ে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ও ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর পরপর দুইবার কক্সবাজার সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, অভিযুক্ত গিয়াসউদ্দিন কৌশলে গণপূর্ত অধিদফতরকে ব্যবহার করে জমিটিতে সম্পূর্ণ অন্যায় ও বেআইনিভাবে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে।

 

রবিউলের দাবি, তারা নির্মাণকাজ করতে গেলে তাদের চাচা গিয়াসউদ্দিন ও তার ছেলেরা ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ২০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। এছাড়া প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অস্ত্রধারী চিহ্নিত সন্ত্রাসী তাদের অপহরণ, খুন, গুমসহ বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে  নানানভাবে হয়রানি করে আসছে।

 

জানা যায়, নিজেদের পৈত্রিক জমি থেকে উচ্ছেদ ও জবরদখল বিষয়ে আইনি প্রতিকার ও নিজেদের জানমালের সার্বিক নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট লিখিত আবেদন করা হয়। এবিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে নির্দেশও দেন। তাতেও কোনো সুরাহা হয়নি বলে দাবি জমিটির মালিকপক্ষের রবিউল হাসানের।

 

জানা গেছে, নালিশি ওই জমির বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আদালতে এমআর মামলা ২০২০/২০২২ দায়ের করা হলেও তাতে গিয়াসউদ্দিন হাজির হননি। এছাড়া সরেজমিনে তদন্ত করে কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি)’র নিকট থেকে প্রতিবেদন চাওয়া হয়। কিন্তু চাচা গিয়াসউদ্দিন টাকার জোরে ওই তদন্ত প্রতিবেদন নিজের পক্ষে করে নিয়েছেন বলে দাবি রবিউল হাসানের। ফলে এসিল্যান্ডের দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে এডিএম কোর্টে নারাজি আবেদন জানানো হয়েছে।

 

এবিষয়ে অভিযুক্ত গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘আমার পিতার ৬ ছেলে ও ১ কন্যা সন্তানের সকলেই ওই জমি দলিলমূলে হস্তান্তর করে ফেলেছে। সুতরাং এখন আমরা কেউ আর জমিটির মালিক নই।’

 

এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের উত্তরে গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘জমিটি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। বিচারিক কার্যক্রম শেষ হলে অংশীদাররা জমির মূল্য বাবদ টাকা পেয়ে যাবেন।’