মো: ওসমান গণি ইলি, কক্সবাজার :
কক্সবাজারের ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম কবিরকে কুতুবদিয়া থানায় বদলি করা হয়েছে- এমন খবরে সাধারণ মানুষের চোখে অশ্রু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। তারা লিখেছেন, গোলাম কবিরের মতো দায়িত্বশীল ও সততা সম্পন্ন ন্যায়পরায়ণ অফিসার খুব কমই পাওয়া যায়। কেউ লিখেছেন, গোলাম কবিরের মতো ওসি সব জায়গায় থাকলে দেশে কোনো অপরাধ, মাদক ব্যবসা, অন্যায় ও দুর্নীতি থাকবে না। তিনি ঈদগাঁও থানায় যোগদানের পর থেকে থানা কম্পাউন্ড শতভাগ দালালমুক্ত করেছেন এবং সাধারণ সেবা প্রত্যাশীকে সরাসরি তার সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি অবরোধ ও হরতাল চলাকালীন সরকারি ও বিরোধী দলীয় অনাকাঙ্খিত ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা শক্ত হাতে দমন করেছেন। এক বছরে ঈদগাঁও থানাকে একটি অন্যতম শান্তির জায়গায় পরিণত করেছেন। তিনি গত এক বছরে দায়িত্ব পালনকালে সবসময় চেষ্টা করেছেন মানুষকে পুলিশের সেবামুখি করতে। সাধারণ মানুষ যেনো কোন ভয় ছাড়া পুলিশের সেবা গ্রহণ করতে পারে এবং অপরাধীরা যেনো অপরাধ ছেড়ে দেয় এর জন্য ওসি গোলাম কবির আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।তিনি কখনোই অপরাধীদের ছাড় দেননি। নানাবিধ ভালো কাজের জন্য তার বদলির খবরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
পোকখালি থেকে আসা বৃদ্ধা নাম ফাতেমা বলেন, ‘আমি পুত্রবধূর নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় এলে ওসি ধৈর্য্য ও মনোযোগ সহকারে আমার অভিযোগ শোনেন এবং বিনামূল্যে আমার জিডি গ্রহণ করেন।
ইসলামপুর ইউনিয়নে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিলো- এই বিষয়ে থানায় অভিযোগ করার পরেই ওসি সাহেব দুই পক্ষকে ডেকে বিরোধ সমাধান করে দেন- জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী।
পোকখালি থেকে অপহরণ হওয়া দুইজনের অভিভাবক বলেন- ‘ওসি স্যারকে গিয়ে অপহরণের বিষয়টি অবগত করলে তিনি মামালা নেন এবং সাথে সাথে এক ও দুই নাম্বার আসামীকে গ্রেপ্তার করেন। তিনি আরো বলেন, কোনো টাকা ছাড়াই মামলা করেছি, মনে হলো পুলিশ সত্যিই জনগণের বন্ধু।
আলাদীনের চেরাগ টিমের প্রধান ফরিদুল আলম বলেন, ‘ওসি গোলাম কবিরের সাথে প্রথম পরিচয় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়া একজন বেওয়ারিশ লোককে কেন্দ্র করে। মহাসড়কে একজন এক্সিডেন্ট করা লোক দেখতে পায় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে আমরাও সেখানে গেলে দ্রুত চিকিৎসার জন্য ঈদগাঁও ডায়াবেটিস কেয়ারে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত সদর হাসপাতালে নেওয়া যাওয়ার পরামর্শ দেন। তখন আমরা দুদিন আগে যোগদান করা ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি পুলিশ সদস্য ডেকে পকেট থেকে টাকা বের করে দিয়ে প্রাইভেট মাইক্রোবাস নিয়ে দ্রুত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন ওই আহত ব্যক্তিকে। সুস্থতার পর ওই লোককে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন গোলাম কবির।’
তিনি আরো জানান, সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঈদগাঁও বাজারের আল হেরাম ফার্মেসির মালিককে জালালাবাদে তার নিজের বাড়ির সামনে থেকে অপহরনকারীরা নিয়ে যায়। একদিন পর ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরে অপহৃত ওষুধ ব্যবসায়ী। তৎকালীন ওসির কাছে মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে এটা সাজানো নাটক বলে উড়িয়ে দেন। ওসি গোলাম কবির ঈদগাঁও থানায় যোগদান করার পর ভিকটিম আল হেরামের মালিককে ডেকে নিয়ে মামলা নেন এবং ছায়া তদন্ত শুরু করে সব অপহরণকারীকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসেন। যার ফলে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কে অপহরণ, ডাকাতি অনেকাংশে কমে যায়। এছাড়া অনেক অমীমাংসিত ঘটনাও তিনি গুরুত্ব সহকারে সময় দিয়ে মীমাংসা করে দিয়েছেন।
সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে, অনেক অসহায়-ভুক্তভোগী, দোকানে গিয়ে যাদের অভিযোগ লেখার সামর্থ্য নেই তাদেরকে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া মামলা এন্ট্রি করতে কোনো টাকা নেননি ওসি।
এ ব্যাপারে সদ্যবিদায়ী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: গোলাম কবির বলেন, ‘মানুষের ভালোবাসা ও দোয়া ছাড়া আর কিছুই কাজে আসবে না। আমি চেষ্টা করি- রাষ্ট্রের দেয়া দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতক।
এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘ঈদগাঁওর মানুষ খুব ভালো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় খুব বেশী সহযোগিতা পেয়েছি। তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, এমন স্বপ্ন দেখি আমাদের দেশ একদিন একশত ভাগ মাদকমুক্ত হবে এবং অপরাধমুক্ত হবে আমাদের নতুন প্রজন্ম। তারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের জন্য কাজ করবে।