নিজস্ব প্রতিনিধি,পেকুয়াঃ
কক্সবাজারের চকরিয়ায় মোবাইল চোর সিন্ডিকেট ও সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নির্মম ভাবে খুন হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জিহাদের খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৪ ডিসেম্বর (সোমবার) বেলা ১২ টায় এ বি সি অঞ্চলিক মহাসড়কে শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজ পয়েন্টে পেকুয়া উপজেলার এসএসসি ১৭ ব্যাচের বন্ধুদের ব্যানারে তার হত্যার সুষ্টুবিচার এবং খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে এ মানববন্ধন অনুষ্টিত হয়।
এসময় তাদের সাথে একাত্রতা প্রকাশ করেছেন, পেকুয়া সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহাদাত হোসেন, পেকুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজের শিক্ষক ছাত্র ছাত্রী, পেকুয়া জি এম সি ইনস্টিটিউশনের শিক্ষার্থী, পেকুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী,পেকুয়া বিএম আই কলেজের শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা এ মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সড়কের পাশে দীর্ঘ লাইন ধরে দাড়িয়ে তারা এ প্রতিবাদ করেন ও শোকজানান।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জিএমসি ১৯৮৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আর এমও ডাঃ মুজিব রহমান, পেকুয়া সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহাদাত হোসেন, রাজনীতিবিদ মুজিবুল হক চৌধুরী, শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজের প্রভাষক ড.জাকের হোসেন হাওলাদার, প্রভাষক আজিজুর রহমান, প্রভাষক মোহাম্মদ আলম, নিহতের ভাই আসাদুল করিম এবং নিহতের ফুফি বাদল, ইয়াছমিন, উপজেলা এস এস সি ১৭ ব্যাচের সভাপতি নোমান, সাধারণ সম্পাদক মামুন, মোহাম্মদ রাজু, আকিব, বাপ্পু, জাহেদসহ অনেকই। তাদের সবার একটাই দাবী জিহাদের খুনীদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। এ মানববন্ধন থেকে খুনীদের আটক করতে চকরিয়া ও পেকুয়া থানা প্রশাসনকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন তারা। না হয় তারা রাজপথে নেমে আসবেন বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। উপস্থিত সকলকে চকরিয়া ও পেকুয়া থানা প্রশাসনকে খুনীদের কে আটক করতে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।
এদিকে ঘটনার পর দিন রাতে এ হত্যার ঘটনায় নিহতের পিতা মকসুদুল করিম বাচ্চু বাদী হয়ে মোবাইল চোর সিন্ডিকেটের প্রধান আবদুল হাকিমের ছেলে মোঃ নোমানকে প্রধান আসামী করে ১২ জনের নামসহ আরো তিনজনকে অজ্ঞাতনামা আসামী দেখিয়ে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
উল্লেখ্য যে, ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭ টায় চকরিয়া উপজেলাধীন মরংঘোনার পশ্চিমে বাঘগুজারা এলাকার নির্জন স্থানে কল করে ডেকে নিয়ে পেকুয়া সদর ইউপির সিকদার পাড়ার অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্য মকসুদুল করিম বাচ্চুর ছেলে ও কক্সবাজার সিটি কলেজের সমাজ বিজ্ঞান অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র আসহাবুল ইসলাম জিহাদ( ২৪) কে চকরিয়ার একদল সন্ত্রাসী ও মোবাইল চোর সিন্ডিকেট ছুরিকাঘাত করে নির্মম ভাবে হত্যা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা যায়, কিছু দিন আগে চকরিয়া উপজেলাধীন কোনাখালী চরাপাড়া এলাকার আব্দুল হাকিমের পুত্র রুমান থেকে জিহাদ ৯ হাজার টাকা দিয়ে একটি মোবাইল ফোন কিনে। পরে দেখা দেয় ওই মোবাইলটিতে নানা সমস্যা। তারপর জিহাদ ওই মোবাইলটি রুমানকে ফেরত দিয়ে দেয়। কিন্ত রুমান ওই টাকা ফেরত না দিয়ে আরেকটি মোবাইল ফোন এনে দিবে বলে জানায়। বেশকিছু দিন অতিবাহিত হলেও জিহাদকে মোবাইল ফোনও দেয়নি বরং টাকাও ফেরত দেয়নি। ঘটনার আগের দিন তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। শেষ পর্যন্ত ঘটনার দিন পরিকল্পিত ভাবে সন্ধ্যা ৭ টায় কল করে জিহাদকে বাঘগুজারা ব্রীজে এসে টাকা ফেরত নিয়ে যেতে বলে রুমান। জিহাদ তার কয়েকজন বন্ধু কে নিয়ে বাঘগুজারা ব্রীজে পৌছলে আগে থেকে উৎপেতে থাকা চড়া পাড়ার আব্দুল হাকিমের পুত্র রুমান, রমিজ, বখতিয়ার, সাইফু, সালাহ উদ্দিন সহ ১০/১৫ জন মিলে জিহাদকে মরংঘোনা নির্জন বালুর স্তুুবে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। পরে বিষয়টি টের পেয়ে লোকজন এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে জনতা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজন সোহান নামের এক ইজিবাইক (টমটম) চালক কে জনতা আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
এ বিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে দ্রুত আটক করতে পুলিশ বিভিন্ন ভাবে অভিযান চালাচ্ছে। এ ঘটনায় একজন আটক করা হয়েছে। শীঘ্রই বাকীদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।