ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভারতে চেনাজানা কেউ নেই, দুর্ঘটনার পর বিপদে ময়মনসিংহের জ্যোৎস্না

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,সিএনএন বাংলা২৪:

কিডনির চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন, কলকাতা থেকে তামিননাড়ুর ভেলোরগামী ট্রেনের টিকিটও কেটেছিলেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহের জ্যোৎস্না বেগম। কিন্তু ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা এবং তার জেরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে দক্ষিণ ভারতগামী প্রায় সব ট্রেনের চলাচল স্থগিত করায় বিপদে পড়েছেন তিনি ও তার ছেলে।

হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফরমে বসে কিডনির সমস্যায় ভোগা বাংলাদেশের এই নারী দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, ‘চিকিৎসা করাতে বাংলাদেশ থেকে এসেছি। ইন্ডিয়াতে চেনাশোনা কেউ নেই। এখন শুনছি ভেলোর যাওয়ার ট্রেন বাতিল হয়েছে। আমি নিজে অসুস্থ, হাতে টাকাপয়সাও খুব বেশি নেই। খুবই বিপদে পড়ে গেলাম। কী করব বুঝতে পারছি না।’

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশার বালেশ্বরে শুক্রবার ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের শালিমার থেকে চেন্নাইগামী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস। রেল সূত্রে জানা গেছে, কেবল করমণ্ডলই নয়— একই দিন ওই এলাকায় লাইনচ্যুতে হয়েছে বেঙ্গালুরু-হওড়া রুটের দূরপাল্লার ট্রেন সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও।

শুক্রবারের দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৮৮ জন নিহতের সংবাদ পাওয়া গেছে, আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৯০০ জন। কেন্দ্র ও ওড়িশা রাজ্য সরকারের একাধিক উদ্ধারকারী বাহিনী এবং পুলিশ সদস্যদের তত্ত্বাবধানে জোরকদমে এগিয়ে চলছে উদ্ধার তৎপরতা।

ট্রেনে থাকা স্বজনদের খোঁজ-খবর জানতে ইতোমধ্যেই শালিমার ও হাওড়া স্টেশনে জড়ো হচ্ছেন পরিজনরা। কারও বাবা, কারও সন্তান, কারও বা স্বামী/ স্ত্রী ছিলেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে লাফিয়ে।

শুধু দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনগুলির যাত্রীদের পরিজনেরাই নন, হাওড়া স্টেশন থেকে দক্ষিণ ভারতের ট্রেন ধরতে এসেছেন বহু মানুষ। কিন্তু দুর্ঘটনার জেরে বাতিল হয়ে গেছে প্রায় সমস্ত ট্রেনই। কিছু ট্রেন ঘুরপথে চালানো হচ্ছে, কয়েকটি ট্রেনের যাত্রা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু সেই খবর আগে থেকে না জানার কারণে যাত্রীরা হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছাচ্ছেন। সকলেরই গন্তব্য স্টেশনের নতুন কমপ্লেক্সের তথ্য কেন্দ্র।

পরিবার নিয়ে ওড়িশার পুরীতে জগন্নাথ দেবের মন্দির দর্শনে যাওয়ার জন্য হাওড়া স্টেশনে এসেছেন অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দুর্ঘটনার জেরে বাতিল হয়েছে তাদের ট্রেন পুরী এক্সপ্রেসও। অগত্যা বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। আনন্দবাজারকে অনন্যা বলেন, ‘এ যাত্রায় আর মহাপ্রভুর দর্শন হল না। খুবই মনখারাপ। ফিরে যাচ্ছি।’

হাওড়া স্টেশনের পাশাপাশি শালিমার স্টেশনেও খোলা হয়েছে রেলের হেল্প ডেস্ক। সেখানেও বহু উদ্বিগ্ন মুখের ভিড়। সবাই তথ্য জানতে চান অন্য সবার আগে। ফলে সামান্য ধাক্কাধাক্কির পরিস্থিতিও তৈরি হয়।

স্টেশনে উপস্থিত একদল যাত্রী আবার ট্রেন বাতিলের খবর শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। তাদের সবারই দক্ষিণ ভারতে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। সেই সময় স্টেশনে উপস্থিত অনেকের কাছেই এই হট্টগোল অসংবেদনশীল ঠেকেছে। যদিও হাওড়া স্টেশন এবং শালিমার— দু’ জায়গাতেই কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি রুখতে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল নিরাপত্তাবাহিনী।

হাওড়া এবং শালিমারে ভিড় রয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদেরও। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকেও বহু মানুষ প্রতিদিন হাওড়া থেকে ট্রেনে করে দক্ষিণে যান কাজের সন্ধানে। কিন্তু একের পর এক ট্রেন বাতিল হওয়ায় বড় সমস্যায় পড়েছেন এই দৈনিক আয়ের লোকজনরাও। পকেটে সামান্য টাকা। ট্রেন বাতিল হওয়ায় প্রত্যেককেই রাত কাটাতে হবে স্টেশন চত্বরে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, এখন তারই অপেক্ষা হাওড়া-শালিমার স্টেশন জুড়ে।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪: