ই-পেপার | শনিবার , ১৫ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ই-সিগারেট নিষিদ্ধে ৯ সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা :

সম্প্রতি ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের’ সংশোধনী প্রস্তাবে ই-সিগারেটের প্রচার, প্রসার, আমদানি, রপ্তানি, পরিবেশন, বিপণন নিষিদ্ধের প্রস্তাব দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এরপরও কয়েকটি বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি বিভিন্ন উপায়ে দেশে অত্যন্ত ক্ষতিকর এ পণ্যের প্রচারে নতুন পন্থা অবলম্বন করছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ই-সিগারেট উৎপাদন ও প্রসারে সিগারেট কোম্পানির উদ্যোগ জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম সংকটের কারণ হতে পারে। তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ই-সিগারেটে লাগাম টানার দাবি জানিয়েছেন তারা।

শনিবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান তারা। যৌথভাবে ‘ই-সিগারেট/ভেপিং জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি: নিষিদ্ধ জরুরি’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত ২২টি সংগঠন।

 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বিদেশি সিগারেট কোম্পানি বিএটি সম্প্রতি বাংলাদেশে ভোক্তাদের আধুনিক জীবনধারার কথা উল্লেখ করে নতুন কিছু আন্তর্জাতিক মানের পণ্যের আমদানি করার অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে তারা এ ধরণের পণ্যের চাহিদা নিরূপণে দেশের বাজারে এসকল পণ্য বিক্রয় করবে এবং পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে এ পণ্যের উৎপাদন, পরিবেশন, বিপণন ও রপ্তানি করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে।তাদের এ ধরনের প্রচেষ্টা দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। গণমানুষের কথা চিন্তা করে অতিদ্রুত ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে।

সিগারেট কোম্পানির মিথ্যাচার নিয়ে বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, কম ক্ষতিকর টার্ম ব্যবহার করে তামাক কোম্পানিগুলো তরুণ-যুবক এবং ধূমপায়ীদের ই-সিগারেটে আকৃষ্ট করছে। ই-সিগারেট খুবই ক্ষতিকর একটি পণ্য। ই-সিগারেটের ব্যবহার ও বাজার সম্প্রসারণের জন্য কোম্পানিগুলো ভেপিং উৎসবের আয়োজন করছে, যা যুবসমাজ নতুনভাবে অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী এর সপক্ষে বিভিন্ন মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের এপিডেমোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়ায় ই-সিগারেট বন্ধের সুপারিশ করেছে। দেশের প্রায় ১৫০ জনের বেশি সংসদ সদস্য ই-সিগারেট বন্ধের সুপারিশ করেছে এবং সরকার তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত ই-সিগারেটের প্রচার ও প্রসার খুব বেশি বৃদ্ধি পায়নি। এমতাবস্থায় এখনই ই-সিগারেটের লাগাম টেনে না ধরলে পরবর্তীতে আইন করেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। তামাক কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে ই-সিগারেট কম ক্ষতিকর এবং এটি ধূমপান ছাড়তে সহায়ক হিসেবে মিথ্যা প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ই-সিগারেট বন্ধে ৯টি সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলো হলো:
১. বাংলাদেশে ই-সিগারেটের আমদানি, রপ্তানি, উৎপাদন, বিক্রয়, বিপণন, পরিবেশন, বিজ্ঞাপন বা প্রচার-প্রচারণা বন্ধে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
২. নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজে ই-সিগারেটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
৩. অনলাইন বিজনেস সাইটসহ ই-সিগারেটের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা।
৪. বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতিতে ই-সিগারেট জাতীয় পণ্য আমদানি ও রপ্তানি নিষিদ্ধ করা।
৫. অর্থ বিভাগ ও রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ই-সিগারেট, এর ডিভাইস, ই-লিকুইড, রিফিলসহ এ জাতীয় সব পণ্যের এইচআর কোড পণ্যের তালিকা প্রত্যাহার করা।
৬. সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, বাংলাদেশে ই-সিগারেট, ভ্যাপ বা অন্য কোনো নতুন নেশা জাতীয় বা তামাক জাতীয় অথবা নিকোটিন আছে এমন কোনো পণ্যের অনুমোদন না দেওয়া।
৭. ই-সিগারেট প্রসারে কার্যরত সিগারেট কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের গোপন তৎপরতা অনুসন্ধান করে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
৮. ই-সিগারেট বা ভেপিং জাতীয় পণ্যের ট্রেডমার্ক বা যে কোনো ধরনের নিবন্ধন বাতিল করা।
৯. অতিদ্রুত ধূমপান ও তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত খসড়া পাস করে দেশকে ই-সিগারেট মুক্ত করা।
টিসিআরসির প্রোগ্রাম অফিসার ফারহানা জামান লিজার উপস্থাপনায় সাংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, ডাসের উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বকুল প্রমুখ।