ই-পেপার | সোমবার , ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

স্বচ্ছ লেকে ঢাকা পড়ছে সবুজ ঘাস, পর্যটক হারাচ্ছে বাঁশখালী ইকোপার্ক

শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী :

কোন প্রকার কৃত্রিম সৌন্দর্য্য ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে অপূর্ব সুন্দর বাঁশখালী ইকোপার্ক। পার্কের দু’টি স্বচ্ছ লেক, বামের ছড়া ও ডানের ছড়া লেক। ত্রি-সীমানায় সু-উচ্চ পাহাড়। দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতুটিও এ পার্কে। বামের ছড়া লেকের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সেতুটি পার্কের সৌন্দর্য্যকে বাড়িয়েছে বহুগুণ। চারদিকে চির সবুজ। মন জুড়ানো দৃশ্য এখানে পর্যটকদের বার বার কাছে টানে। তবে সে চির সৌন্দর্য্য এখন আর চোখে পড়ে না। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপূর্ব সমন্বয় বাঁশখালী ইকো-পার্কের স্বচ্ছ লেকের সৌন্দর্য্য ঢাকা পড়েছে লম্বা হাত সবুজ ঘাসে আর টোপাপানার রাজত্বে। যার ফলে চিরচেনা সৌন্দর্য্য হারিয়েছে। ফলে এখানকার মাছ ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। টিকেট কেটে পর্যটক যেইমাত্র পার্কে প্রবেশ করে, চোখের সামনে লেকের দৃশ্যটি পড়ে। লেক যেন নয় সবুজ ঘাসের বিস্তৃর্ণ মাঠ। লক্ষ লক্ষ টাকার ইজারা নিলেও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি এ পার্ক।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় হামুনে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বাঁশখালী। এ প্রভাব পড়েছে ইকোপার্কেও। সৌন্দর্য্যবর্ধনকারী নানা জাতের গাছপালা পড়ে আছে পার্কের ভিতরেই। বড় বড় গাছও ভেঙেছে। এখনো গাছ ও গাছের ডালপালা সরানো হয়নি। পর্যটক এসে এসব দৃশ্যে বিব্রত হয়ে পড়ে। গা ঢাকা দিয়েই কাজ করছে পার্ক কর্তৃকপক্ষ। স্বচ্ছ লেকে সবুজ ঘাস আর টোপাপানা। স্থলে গাছের গুড়ি, পাতার স্তুপ যেন অভিভাবকহীন একটি পার্ক। পার্কে কর্মরত ৬/৭ জনের টিম থাকলেও নেই কাজের তদারকী। এভাবেই দায়সারা কর্মকান্ডে পার্কের সুন্দর্য্য ম্লান হয়ে যাচ্ছে। দিনদিন পর্যটক শুণ্য হচ্ছে পার্কটি।

 

পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে বাঁশখালী ইকোপার্ক

সু-উচ্চ পাহাড়, মনজুড়ানো সবুজের ছায়াঘেরা গাছগাছালি, সন্ধ্যায় বন্যপ্রাণীর হাকডাক, বামের ও ডানের ছড়া লেকের স্বচ্ছ জলরাশি, সু-উচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ সব মিলিয়ে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের নয়নাভিরাম অভয়ারণ্য বাঁশখালী ইকো-পার্কটি হারাতে বসেছে তার চিরযৌবন। এখানে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো রয়েছে অজস্র প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের সংমিশ্রণ। বিকেলের গোধূলিতে লেকের সৌন্দর্য্যে মন ভরে যাওয়া দৃশ্য এখন লম্বাহাত ঘাসে ঢাকা। সে লেকে এখন টোপাপানার রাজত্ব।

 

সরকারী দীর্ঘ ছুটির দিনে, সপ্তাহের শুক্রবারে দেশর ভিবিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণ করতে আসে ভ্রমণবিলাসী লোকজন। এমনিতেই নিত্যদিন দর্শকের আনাগোনায় মুখরিত থাকে পার্কটি। কোটি টাকা ব্যয়ে পার্কে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও পার্কের সৌন্দর্য্য বর্ধনের মতো কোন কাজ দৃশ্যমান হয়নি। সেই অবধি পর্যটক শুন্য হয়ে পড়ে বাঁশখালী ইকোপার্ক। দর্শকের আনাগোনা আগের চেয়ে কমেছে। এদিকে ইকোপার্কের সর্ব্বোচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের গোড়া থেকে মাটি সরে গেছে। অল্পসংখ্যক দর্শনার্থী টাওয়ারে উঠলে টাওয়ারটি নড়াচড়া করে, এই বুঝি হেলে পড়বে। ঝুঁকির কবলে এ টাওয়ার যে কোন সময় দূর্ঘটনায় পতিত হতে পারে।

 

শীতের মৌসুম একেবারেই ঘনিয়ে আসছে। শীতে অতিথি পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে এসে এখানের সৌন্দর্য্য বাড়ায় আরো দ্বিগুণ। শীতকাল আসলে তার পূর্ব থেকে উত্তর মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া ও সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চল থেকে পরিযায়ী পাখি চলে আসে বাংলাদেশে। এ সময়ে অতিথি পাখি ‘পরিযায়ী’ বাঁশখালী ইকোপার্কেও ভীড়ে। এরা পার্কের নান্দনিকতা বাড়ায়। এখানে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু পার্কের স্বচ্ছ লেকে সবুজ ঘাস ও টোপাপানায় ঢাকা পড়ায় পরিযায়ী পাখির অস্থায়ী আবাসে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। এতে ম্লান হবে পার্কের চিরায়ত সৌন্দর্য্য।

পার্কে আসা পর্যটক মো. আমির বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েকবছর পর আজ আবার পার্কে আসলাম। সে আগের মতো চিরচেনা সুন্দর্য্য চোখে পড়েনা।ইকোপার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা জেনেছি নানা প্রমাণ্য চিত্র ও খবরের কাগজে। কিন্তু এসে দেখি বর্ণিত সে সৌন্দর্য্য এখন নাই। স্বচ্ছ লেকে একহাত লম্বা ঘাস আর টোপাপানায় ছেঁয়েগেছে। দেখেই মনে হলো যেন একটি বর্জ্যের স্তুপ। এভাবে থাকলে পর্যটক হারাবে বাঁশখালী ইকোপার্ক।

পার্কের ইজারাদার মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সরকার ইজারা নিয়েছে সর্বস্বাকুল্যে ১৫ লক্ষ টাকার অধিক। পার্কে আগের মতো পর্যটক আসেনা। প্রধানসড়ক হতে বাঁশখালী ইকোপার্ক পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কটিও খানাখন্দে বিলীনের পথে। পার্কের ভিতরেও সুন্দর্য্য আর চোখে পড়েনা। স্বচ্ছ লেকে একহাত লম্বা সবুজ ঘাস। এখানে কী দেখতে আসবে পর্যটক। এসব দেখার যেন কেউ নেই। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে অবরোধ-হরতালে দূরের পর্যটক আসতে পারছে না। সবমিলিয়ে আমাদের গুণতে হবে বড় লস। সংশ্লীষ্ট কর্তৃকপক্ষ একটু সু-দৃষ্টি দিলেই পার্কটি তার সৌর্ন্দয্য ফিরে পাবে। এখন প্রায়ই পর্যটক বিমূখ ইকোপার্কটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী ইকোপার্কের কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হক জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের ফলে বাতাসের তীব্রতায় ঘাসগুলো লেকের মূল পয়েন্টে এসে জড়ো হয়। এখন লেকে পানি কম। পানির সাথে ছেড়ে দিলে চলে যেতো। একহাত লম্বা ঘাস স্বচ্ছ লেকের সুন্দর্য্যকে ম্লান করে দিয়েছে। এগুলো সরানো হবে কী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে আমার উর্ধ্বতন মেড্যামকে বলে দেখি। এগুলো ত অনেক বড় হয়েগেছে কিভাবে সরাবো!

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য আমাদের প্রতিনিধিকে মুঠোফোনে বলেন, ‘এগুলো একদিনে হয়ে উঠেনি। এসব দেখার দায়িত্ব ইজারাদারদেরও। ইজারার শর্তে পার্কের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা রখার কথাও আছে। তাছাড়া সিএমসির লোক ও পার্কের কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে বলবো যাতে দ্রুত ঘাস ও টোপাপানাগুলো সরানো হয়। কারণ এখানে দূরদূরান্ত থেকে পর্যটক আসে। এটার সৌন্দর্য্যবর্ধন করা আমাদের সবার দায়িত্ব।