নিজস্ব প্রতিবেদক ,ঢাকা:
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল দুই একদিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন সময়ে চলমান অগ্নিসন্ত্রাস প্রতিরোধ করতে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) একদিনে ১৫৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার ৪১টি অবকাঠামোর সমন্বিত উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ২৪টি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এসব প্রকল্পের ব্যয় ৯৭ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা।
এ দিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করেন। এ সময় গণভবনের সঙ্গে ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সারা দেশের ১০১টি প্রান্ত ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে অস্ত্র হাতে নিয়ে ডিক্টেটর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে হত্যাকারীদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে এবং বিচারের হাত থেকে মুক্ত রাখে। যুদ্ধাপরাধীদের যাদের বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন, তাদের বিচার বন্ধ করে মুক্ত করে দেয়, যারা পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল তাদের পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করে। আজকে বাংলাদেশের ভোট নিয়ে যে খেলা, তার সেই ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোটের ইতিহাস; সেখানে ‘না’ বাক্সই কেউ পায়নি। একাধারে সেনাপ্রধান, রাষ্ট্রপতি আবার সংবিধান লঙ্ঘন করে নির্বাচন, নির্বাচনে একশোর উপরে ভোট ছিল। ক্ষমতায় বসে দল গঠন করে সেই দলকে জিতিয়ে সংবিধানকে মার্শাল ল’ দ্বারা সংশোধন করেছিল, সেইগুলিকে বৈধতা দেওয়ার জন্য জাতীয় সংসদে ভোট চুরির যে কালচার, ডাকাতির যে কালচার, সেই কালচারটা শুরু করে। জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে সেই পার্লামেন্ট তৈরি করে।
আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের উচ্চ আদালত এইভাবে ক্ষমতা দখল অবৈধ ঘোষণাই করেছেন। শুধু তাই নয়, একটি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আরেকটি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, এর বাইরে কেউ সরকারে আসতে পারবে না, এলে তাদের সাজা হবে। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী আমরাও সংবিধান সংশোধন করি, আমাদের সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী আমরা তা সংশোধন করেছি, গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের গণহত্যাকারীরা কেউ মন্ত্রী, কেউ পার্লামেন্টের প্রধানমন্ত্রী—ওই অবস্থায় আমি ফিরে আসি। আমি জানি, ঘাতকের দল যে কোনো সময় আমাকেও আঘাত করতে পারে, কিন্তু ওই বিষয়ে আমি কোনদিন কোনো চিন্তাও করিনি, ভয়-ভীতি প্রশ্রয়ও দেইনি। আমার একটাই লক্ষ্য ছিল, যে লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন, যে করেই হোক স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে, ভাগ্যের পরিবর্তন করতে হবে। সেই প্রত্যয় নিয়ে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আমাকে চলতে হয়েছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি, আমার ওপর গুলি-বোমা… কিন্তু আমি ওগুলো পাত্তাই দেইনি। যে লক্ষ্য নিয়ে আমার বাবার দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই লক্ষ্য পূরণ করা। আমি ধন্যবাদ জানাই জনগণকে বারবার আমাদের ভোট দিয়েছেন, আমি ক্ষমতায় এসে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ… যদিও স্থিতিশীল না, বরং অগ্নিসন্ত্রাস, খুনখারাবি, হরতাল-অবরোধ অনেক কিছুই মোকাবিলা করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ এগুলোকে মোকাবিলা করে আমরা বাংলাদেশকে এ পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে এসেছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের সময় আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছি। আজকে আমরা যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। আর বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। রাতের অন্ধকারে কেউ ক্ষমতা দখল করে জনগণের ভাগ্য নিয়ে যাতে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এ দেশটাকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই উন্নয়নটা শুধু দেশে না, আঞ্চলিক যোগাযোগের মাধ্যমেও উন্নয়নটা ত্বরান্বিত হয়, সে ব্যবস্থাটা আমরা করে দিচ্ছি। ব্যবসা-বাণিজ্য সকল সুবিধা আমরা এনে দিয়েছি। সামনে আমাদের ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা অনেক সুবিধা পাব, আবার অনেক ক্ষেত্রে যেহেতু স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধাগুলো আমরা পাব না। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সেই সুবিধাগুলো গ্রহণ করে কীভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব, সেই পরিকল্পনা নিয়েই কিন্তু আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, আজকে যেহেতু আমাদের নির্বাচনে ঘনিয়ে এসেছে, হয়তো দুই একদিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তারিখ সময় ঘোষণা দেবে। আজকে আমরা এজন্যই এখানে উপস্থিত হয়েছি, যেহেতু ডিজিটাল সুবিধা আছে, যে কাজগুলো আমরা করলাম সেগুলো উদ্বোধন করতে। তার পেছনে একটু কারণ বলি, ’৯৬ সালে অনেকগুলি কাজ করেছি। তখন কিন্তু সব উদ্বোধন করতে পারিনি, হয়তো যে সরকার এসেছে, সরকার গঠন করার এক মাসের মধ্যেই সেই গাবখান ব্রিজ উদ্বোধন করার সময় খালেদা জিয়া বক্তব্য দিচ্ছে, এই সরকার কোনো কাজই করেনি, কোনো উন্নয়ন করেনি। মানে তিনি এক মাসের মধ্যে এই ব্রিজ তৈরি করে ফেলেছেন! গাবখান ব্রিজ বিশাল একটা নদী সেই নদীর উপর দিয়ে সেই ব্রিজ। এ রকমই অনেক কিছু শুনতে হবে যে, আমরা কিছুই করিনি। এবার আমরা যেটুকু কাজ করেছি, সেটুকু উদ্বোধন করব এই হলো বাস্তবতা। সেজন্যে আজকের এই আয়োজন যেগুলো বাকি আছে সেগুলো অন্তত করে দিয়ে যাই। আর তারপরে যখন ইলেকশন হবে জনগণ যদি নৌকা মার্কায় ভোট দেয়, আবার আসব আর না দিলে আমার কোনো আফসোস থাকবে না। কারণ আমি তো দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়ে এসেছি, এটুকু করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার আমরাই নিশ্চিত করেছি, কাজেই জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দেবে। অনেকে নির্বাচনে আসতে চায় না। আপনারা বলেন, ৩০টা সিট যারা পেয়েছিল তাদের জন্য তো নির্বাচনে আসা; আকাঙ্ক্ষায় থাকবে না, নির্বাচন বানচাল করে একটা অস্বাভাবিক পরিচিতি সৃষ্টি করে আবার বাংলাদেশের মানুষকে ভোগান্তি দেওয়া, এটাই তাদের চেষ্টা। আমি জানি, এদেশের মানুষ শান্তিতে ছিল, স্বস্তিতে ছিল, উন্নয়নটা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক সেই সময় আবার এই অবরোধ আর অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, আগুন দেওয়া, বাসে আগুন, গাড়িতে আগুন। এবং আগুন দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা যেমন ব্যাহত করা, স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা যেখানে ফাইনাল পরীক্ষা দেবে, পরীক্ষা দিতে পারছে না; তাদের লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সিএনএন বাংলা২৪