সালেহ আহমদ স’লিপক, সিলেট:
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, লীলা নাগের অবদান কখনো অস্বীকার করা যাবে না। তিনি দেশ ও সমাজের উন্নয়নে জীবন বাজি রেখে কাজ করে গেছেন। তাঁর বাড়িটি বেদখল হয়ে গেছে। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হবে।তিনি বুধবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘লীলা নাগ: দ্য রেবেল’ তথ্যচিত্রের প্রিমিয়ার শোতে এ কথা বলেন।নারী জাগরণ থেকে স্বদেশি আন্দোলন, ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশে লীলাবতী নাগের অবদান অনস্বীকার্য। অবিভক্ত বাংলায় নারীশিক্ষা ও নারীর অধিকারের মতো অনেক ক্ষেত্রেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁকে নিয়ে যেমন আলোচনা হয় না, তেমনি নেই স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ। লীলাবতী নাগের স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ নিয়ে গড়ে উঠেছে লীলা নাগ স্মৃতি পরিষদ। পরিষদের সহ-সভাপতি কবি সৌমিত্র দেব ও সাধারণ সম্পাদক এম খছরু চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন সেই প্রিমিয়ার শোতে।
নারীশিক্ষায় অগ্রগামী, সমাজসংস্কারক ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নারীনেত্রী লীলাবতী নাগকে নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র ‘লীলা নাগ: দ্য রেবেল’ এর প্রথম প্রদর্শনী হয়ে গেল বুধবার। এদিন বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রথম প্রদর্শনী হয় এ তথ্যচিত্রের। প্রদর্শনী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া আলোচক ও অতিথিদের কথায় উঠে এসেছে এসব বিষয়। প্রায় ৬৫ মিনিটের এই তথ্যচিত্রে স্থান পেয়েছে লীলা নাগের সংস্পর্শে আসা বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক মানুষের বক্তব্য। অবিভক্ত বাংলায় লীলা নাগ যত জায়গায় বসবাস করেছেন, সেসব স্থান উঠে এসেছে এতে। সমাজসংস্কারে লীলা নাগের অবদান উঠে এসেছে তাঁদের কথায়।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, লীলাবতী নাগ নামটাই হৃদয়ে স্পর্শ করে। এই তথ্যচিত্র লীলা নাগের স্মৃতি রক্ষা ও চর্চার আমাদের দায়বদ্ধতা তুলে ধরেছে। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠায় লীলা নাগের ভূমিকা এবং এ নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতামত। লীলা নাগের মৌলভীবাজারের পৈতৃক ভিটা রক্ষার কাজটি আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান হওয়া ভালো বলে উল্লেখ করেন মফিদুল হক। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের বক্তব্যেও উঠে আসে লীলা নাগের পৈতৃক ভিটায় থাকা তাঁদের বাড়িটি উদ্ধার করার গুরুত্বের কথা।
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গবেষক মানজারে হাসিন মুরাদ বলেন, ‘লীলা নাগ: দ্য রেবেল’ প্রদর্শনের সময় দর্শকের মুগ্ধতা তথ্যচিত্র নিয়ে আশা জাগাচ্ছে। কাজটিতে শ্রম বিষয়ভিত্তিক হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ তথ্যচিত্রের বড় সম্পদ গবেষণা।সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতিজন আসাদুজ্জামান নূর বলেন, লীলা নাগ সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা অনেকটা স্পষ্ট হলো এ তথ্যচিত্র দেখে। এটি ‘বায়োপিক’ হতে পারত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইতিহাসের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, লীলা নাগের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ফরোয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। সেই ঘটনা তথ্যচিত্রে স্থান পাওয়া প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, লীলা নাগের জীবন বিপ্লব দিয়ে শুরু করে বিপ্লব দিয়ে শেষ হয়েছে।এ ছাড়া ‘লীলা নাগ: দ্য রেবেল’ প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের পরিচালক মৃন্ময় চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জুলহাস আলম। প্রদর্শনী শুরুর আগে সব ধরনের সহযোগিতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান তথ্যচিত্রটির গবেষক ও প্রযোজক এলিজা বিনতে এলাহী এবং পরিচালক আবু রেজওয়ান নাসির।
উল্লখ্য, লীলাবতী নাগ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী নারী শিক্ষার্থী। ১৯২৩ সালে উপমহাদেশের প্রথম নারী সংগঠন দীপালি সংঘের প্রতিষ্ঠা হয় তাঁর হাত ধরে। ১৯৩১ সালে প্রকাশ করেন দীপালি সংঘের মুখপত্র ‘জয়শ্রী’ নামের একটি নারী পত্রিকা। ঢাকা, মৌলভীবাজার, মানিকগঞ্জে লীলা নাগ প্রতিষ্ঠিত প্রায় ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল।