ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কক্সবাজারে বাঁকখালী সেতুতে খুলছে অর্থনীতির দুয়ার

কক্সবাজার অফিস :

কক্সবাজার পৌরসভার দীর্ঘদিনের আবর্জনার ভাগাড়ে ফুল ফুটেছে। নদীর দুপাড়ের মানুষের মেলবন্ধন করতে আর দুদিন পর খুলছে ‘বাঁকখালী সেতুর’ দ্বার। এ সেতুতে দুপাড়ের মানুষের যাতায়াতের সংযোগই শুধু ঘটাবে না; দুই পাড়ে তৈরি হবে পর্যটনের নতুন হাব। সেতু ও আশপাশের এলাকা ঘিরে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দেখতে শুরু করেছেন এলাকাবাসী।আগামী শনিবার (১১ নভেম্বর) বাঁকখালী নদীর ওপর নবনির্মিত সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই সবার চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে সেতুটি। আর সেতুটি উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ প্রস্তাবিত আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ আরও একধাপ এগোবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

সরেজমিনে বাঁকখালী সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুরো সেতুটি রঙিন করে সাজানো হয়েছে। চলছে শেষ মুহূর্তে রঙ লাগানোর কাজ। একই সঙ্গে শ্রমিকরা ব্যস্ত লাইট লাগানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে। আর সেতুটির দু’প্রান্তে নতুন নির্মিত সড়কটিতেও চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ।খুরুশকুল মনুপাড়ার বাসিন্দা ইউনুছ মিয়া বলেন, ‘নবনির্মিত এই সেতুর মাধ্যমে আমাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। এখানে আগে রাস্তা ছিলো না। ব্যবসা করতে কক্সবাজার শহরে যেতাম নৌকায় চড়ে। আগে খুরুশকুলে জমিজমার দাম কম ছিলো। কিন্তু এখন রাস্তা ও সেতু হওয়াতে জমি-জমার দাম অনেকগুণ বেড়েছে। এখন খুরুশকুল এলাকাটি শহরের মতো হয়ে যাচ্ছে এই সেতুটির কারণে। এখন আমরা গাড়িতে চড়ে কক্সবাজার শহরে মাত্র ৩ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাব।’

 

একই এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘খুরুশকুলে লবণ, চিংড়ি উৎপাদন; একইসঙ্গে চাষাবাদ হচ্ছে। এখন এসব নিয়ে আমরা খুব দ্রুতই কক্সবাজার শহরে নিয়ে যেতে পারব আর বিক্রি করতে পারব। যেখানে আগে কক্সবাজার শহরে যেতে আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা লেগে যেতো সেখানে সেতুটি হবার ফলে মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে শহরে পৌঁছে যাব।’আরেক বাসিন্দা শামশুল আলম (৬০) বলেন, ‘সেতু ও সড়ক হওয়ায় আমাদের বেশি সুবিধা হয়েছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই এই সেতুটি যে করেছে আল্লাহ তাকে হায়াত দান করুক। এখন সেতু ও সড়কের কারণে বেশি খুশি লাগছে।’কস্তুরাঘাট এলাকার বাসিন্দা আবু তৈয়ব বলেন, ‘কস্তুরাঘাট জায়গাটিতে আগে ময়লা-আবর্জনা ছিল। সেখান থেকে সরকার উন্নয়ন করেছে। যে সেতুটি নির্মাণ করেছে তা দুপাড়ের মানুষের যাতায়াতের সংযোগই শুধু ঘটাবে না, দুপাড়ে তৈরি হবে পর্যটনের নতুন হাব। এ ছাড়াও এখানে খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প হয়েছে। সেটিও একটি অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।

 

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, নাজিরটেকের বাসিন্দাদের জন্য বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খুরুশকুলে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণাধীন। প্রথম ধাপে ৬০০ পরিবারকে স্থানান্তর করা হলেও প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে পর্যায়ক্রমে স্থানান্তর করা হবে। সেখানে যাতায়াতের জন্য বাঁকখালী নদীর ওপর সেতু ও ৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।

 

প্রকল্প বাস্তয়ানকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর-এলজিইডি’র কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান বলেন, ‘সারা বিশ্বের কাছে পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিত কক্সবাজার জেলাটা। কক্সবাজার শহরের উত্তর পাশে বাঁকখালী নদী প্রবাহমান। এই বাঁকখালী নদীর পাড়েই যেই জায়গাটার মধ্যে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে সেটা ময়লার ভাগাড় ছিল। সেই জায়গায় এখন একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু এলজিইডির মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়েছে।’তিনি আরও বলেন, ‘গুণগত মানের বিষয়ে জিরো টলারেন্স রেখে আমরা এই সেতুটি নির্মাণ করেছি। এই সেতুটি নির্মাণের ফলে যে বিষয়টা আমাদের নতুন মাত্রা যোগ করেছে সেটি হলো পর্যটন শিল্প এবং আরেকটা দিক থেকে কক্সবাজার শহরকে সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে এই সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’

 

কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান আরও বলেন, ‘কক্সবাজার শহরের উত্তর দিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এখানে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সেখানে যারা উদ্বাস্তু হিসেবে ছিলেন, তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিচ্ছে বর্তমান সরকার।’তিনি আরও বলেন, ‘সেক্ষেত্রে ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবারকে খুরুশকুল প্রান্তে তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারাও এই সেতুটি ব্যবহার করে খুব সহজেই কক্সবাজারে তাদের নিত্যদিনের কার্যক্রম করতে পারবে। মূলত এই উদ্দেশেই এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এই সেতুটি নির্মাণের ফলে নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার সঙ্গে দূরত্ব কমে যাবে। চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের দূরত্ব অনেক কমে যাবে।’

 

এলজিইডি কর্মকর্তারা জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কস্তুরাঘাটসংলগ্ন বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে ‘কক্সবাজার-খুরুশকুল’ সংযোগ সেতু। দীর্ঘ ‘প্রিস্টেইট বক্স গার্বার সেতু’। বাঁকখালী নদীর ওপর ৫৯৬ মিটারের এই সেতুর ব্যয় হচ্ছে ২৫৯ কোটি টাকা। সেতুটির আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের গত ১ সেপ্টেম্বর।সেতুটি ২০২১ সালের ২১ আগস্টের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারি ও নানা জটিলতায় শেষ হতে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময় লেগেছে। সূত্র: বাংলার সময়।