ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘বাসে আগুন দিলেই বিকাশে পৌঁছে যেত টাকা’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা :

গত ১ নভেম্বর রাজধানীর মুগদাপাড়া আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মিডলাইন বাসে টাকার বিনিময়ে আগুন দেওয়া হয়েছিল। আর এই কাজের পেছনে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলে যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন রকিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রানসন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

 

ওই ঘটনার সময় হাতেনাতে আটক আলি আমিনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আল আমিনের পর মিজানুর রহমান, আমির হোসেন রকি ও সাকিব নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিটিটিসি প্রধান বলেন, গত ১ নভেম্বর রাজধানীর মুগদাপাড়া আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মিডলাইন বাসে দুর্বৃত্তরা যাত্রীবেশে আগুন দিয়ে পালানোর সময় আল আমিন নামে একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। আল আমিন পুলিশের কাছে কার নেতৃত্বে কীভাবে বাসে আগুন দিয়েছে তা স্বীকার করে। এ ঘটনায় সিটিটিসির গোয়েন্দা দল আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরবর্তীতে সে বেশ কিছু তথ্য দেয়। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আল আমিন জানায়, তার নেতা মিজানুর রহমান। মিজানের নেতৃত্বে আরও দুজন কমলাপুর টিটিপাড়া থেকে বাসে উঠে পেছনের সিটে গিয়ে বসে। এরপর সঙ্গে থাকা পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মিজানসহ অন্যরা পালিয়ে যেতে পারলেও স্থানীয়রা আল আমিনকে ধরে ফেলে। পরবর্তীতে মিজানকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান তিনি।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মিজান জানিয়েছে, মহানগর ছাত্রদলের একজন নেতা আমির হোসেন রকির (২৫) নেতৃত্বে সে রাজনীতি করে। এই রকির নির্দেশনায় ও তত্ত্বাবধানে প্রথম দফা মিডলাইন বাসসহ বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই নেতার কাছ থেকে সব রসদ পেয়ে চারজন বাসে আগুন দেওয়া শুরু করে। এর বাইরে আরও বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে। আসাদুজ্জামান আরও বলেন, প্রথম দিনের অবরোধে মিজান এসে আল আমিনের কাছে বোতলে পেট্রোল ও টাকা দেয়। এ সময় মিজান তাদের আশ্বস্ত করে তাদের দল ক্ষমতায় আসছে, কোনো সমস্যা হবে না। কমলাপুরের টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁও সড়কে চলাচল করা বাসে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় আল আমিনকে। প্রতিটি বাসে আগুন দেওয়ার জন্য তিন হাজার টাকা বিকাশ করেন রকি। পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফা অবরোধে বাসে আগুন দেওয়ার জন্য ডাবল বোনাস ঘোষণা করেন রকি।

সিটিটিসির প্রধান বলেন, দ্বিতীয় দফা অবরোধে রোববার রাজধানীতে ১০টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, রোববারও রকির নির্দেশনায় দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জে আগুন দেওয়ার তৎপরতা পুলিশ ঠেকিয়ে দেয়। আগুন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় রকি তার সহযোগী সাকিবকে নিয়ে কেরানীগঞ্জে এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিএনপির এক নেতার কাছে যাচ্ছিলেন। পুলিশ তার পিছু নিয়ে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে পেট্রোলসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে।

রকির কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সে কী কী কাজ করেছে এই দুই দফা অবরোধে, কার কার নির্দেশনা ছিল, কারা টাকা দিয়েছে সব তথ্য দিয়েছে। প্রথম দিনের অবরোধে কী পরিমাণ জ্বালাও-পোড়াও করেছে, এই ফুটেজ পুলিশ তার মোবাইলে পেয়েছে। অবরোধ কর্মসূচিতে বাসে আগুন দিতে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কারা কারা সহযোগিতা করেছে সবার নাম পেয়েছে পুলিশ। সিটিটিসি প্রধান বলেন, একটি ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে রকি। প্রথম অবরোধে একটি বাসে আগুন দিলে যা পুরস্কার দিতো, দ্বিতীয় অবরোধে সেটি ডাবল করার ঘোষণা দিয়েছে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কারের অর্থ পাঠানো হতো। পুরস্কারের অর্থদাতা কারা জানতে চাইলে সিটিটিসিপ্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা সবার তথ্য পেয়েছি। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে কারও নাম প্রকাশ করছি না। তবে একে একে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হবে।

সূত্র: আরটিভি।