ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সাগর-নদীতে আজ থেকে ইলিশ ধরবেন জেলেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ থেকে সাগর-নদীতে ইলিশ ধরবেন জেলেরা। মা-ইলিশকে নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে গত ১২ অক্টোবর শুরু হওয়া ওই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গতকাল রাত ১২টায়। ফলে রাতেই বঙ্গোপসাগর ও বিভিন্ন নদ-নদীতে ইলিশ ধরতে নেমে পড়েন অনেক জেলে। তবে অধিকাংশই আজ থেকে সাগর ও নদীতে নামবেন।

 

জেলেদের আশা, এখন তারা পর্যাপ্ত ইলিশ পাবেন। গতকাল সকালে চাঁদপুর শহরের যমুনা রোড টিলবাড়ী, মোলহেড, সদর উপজেলার পুরান বাজার রনাগোয়াল, দোকানঘর, বহরিয়া, লক্ষ্মীপুর ও ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের মেঘনাপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে জেলেদের মাছ ধরার প্রস্তুতি। অনেককেই জাল প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা গেছে। জেলে মো. শাহজাহান বলেন, ‘‌নিষেধাজ্ঞার কারণে কিছুদিন অবসরে ছিলাম। এ সময় সরকারের দেয়া ২৫ কেজি চাল পেয়েছি। তবে এ চাল দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। এখন আবার জাল প্রস্তুত করছি। আশা করছি নদীতে ইলিশ পাব।’ সদর উপজেলার সাখুয়া গ্রামের জেলে আবদুল মালেক জানান, যখন নদীতে মাছ আহরণ নিষেধ থাকে তখন তিনি জেলেদের জাল মেরামতের কাজ করেন। জেলেরা আবার নদীতে নামবেন তাই গতকাল ভোর থেকেই জাল মেরামতে ব্যস্ত ছিলেন। বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে তিনি এখন আর নদীতে নামেন না। দৈনিক হাজিরায় জাল মেরামত করেন।

 

 

মা-ইলিশ সংরক্ষণের সময়ও অবশ্য একশ্রেণীর জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ ছিল না। তারা প্রতিদিনই প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইলিশ ধরেছেন। নৌ-পুলিশ জেলা, উপজেলা টাস্কফোর্সের অভিযানে আটক হয়েছেন অনেকে। জেল-জরিমানাও থামাতে পারেনি তাদের। কোথাও কোথাও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরও হামলা হয়েছে। নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘‌জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। অভিযানে গিয়ে এ পর্যন্ত আমাদের বেশকিছু পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মা-ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়লে জেলেরাই লাভবান হবেন।’ চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান জানান, মা-ইলিশ রক্ষায় জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স গত ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪১৫টি অভিযান পরিচালনা করে। মৎস্য আইনে নিয়মিত মামলা ও ৬২টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২৮৪ জেলেকে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

 

উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা বলছেন, সাগরে কাঙ্ক্ষিত মাছ পেলে নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন তারা। বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘‌আশা করি নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে জালে যে হারে ধরা পড়েছে এখন তার চেয়ে বেশি ইলিশ মিলবে।’বরগুনার ট্রলার মালিক কামাল খাঁন বলেন, ‘‌এবার মৌসুমে সাগরে তেমন মাছ পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে পরপর দুটি নিষেধাজ্ঞা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল। তবে আমরা আশাবাদী, নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে ভালো মাছ পাব।’ নিশানবাড়িয়ার জেলে নাসির হাওলাদার বলেন, ‘‌এতদিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। পোলাপান লইয়া কষ্টে দিন কাটাইছি। সরকার যে চাল দেছে, এতে কিছু হয় নাই। এতে সংসার চলে না। এহন সাগরে যামু যদি মাছ পাই তয় খাইয়া-পইর‍্যা বাইচ্চা থাকতে পারমু।’ পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বিএফডিসির বিপণন কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘‌নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার কারণে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে রাজস্ব আয় বাড়বে। এটি দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ভূমিকা রাখবে।’ বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, ‘‌২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা সমুদ্রে মাছ শিকারে যাবেন। আশানুরূপ মাছ শিকার করে তাদের এতদিনের আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।’

 

সিএনএন বাংলা২৪