নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :
চকরিয়ার বহুল প্রত্যাশিত ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতুর আনুষ্ঠানিক দ্বার খুলল। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাতামুহুরী নদীর নির্মিত সেতুটি (১৯ অক্টোবর) সকালে ঢাকা তেজগাঁও সড়ক ভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩৫৫.৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছয় লেনের সেতুটি ৩২১ মিটার দীর্ঘ ও ১৫.১ মিটার প্রস্থের। সেতুটি দু’পাশে রয়েছে ২৭৫ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক।একই সময়ে তিনি ময়মনসিংহ জেলার কেওয়াটখালি সেতু ও রহমতপুর সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং দেশব্যাপী নবনির্মিত ১৫০টি সেতু, ১৪টি ওভারপাস, ডিটিসিএ ভবন, বিআরটিএ’র স্বয়ংক্রিয় মোটরযান ফিটনেস পরীক্ষা কেন্দ্র, বিআরটিসি’র বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।
সেতু উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ বছর আগের বাংলাদেশ কী ছিল, তা এখনকার তরুণরা জানে না। তাদের কাছে বাংলাদেশের উন্নয়ন তুলে ধরতে হবে। ঘরে ঘরে সরকার বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ সুপেয় পানির নিশ্চয়তা পেয়েছে, যেজন্য একসময় হাহাকার ছিল।’ তিনি বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সকলকে সাশ্রয়ী হবার আহবানও পুণর্ব্যক্ত করেন।সড়কে অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা বন্ধ করে সকলকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহবান পুণর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চালকদেরকে মনস্তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে।যারা আমাদের বাস, ট্রাক বা গাড়ি চালায় রাস্তায় তাদের যে একটা অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা, ওভারটেক করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। এ জন্য চালকদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার পরপর বাস ও ট্রাকের চালক ও যাত্রীরা যাতে একটু বিশ্রাম নিতে পারে, সে জন্য বিশ্রামাগার করে দিতে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে কয়েকটা জায়গায় নির্মাণ হয়েছে, পর্যায়ক্রমে আমরা আরও করে দেবো। কেননা গাড়ি চালাতে যেমন পেট্রল লাগে, যাকে দিয়ে চালাবেন তারও তো পেট্রল দরকার। সেওতো একটা মানুষ, তারতো বিশ্রাম দরকার। বিশ্রামের সুযোগ দিতে হবে, তাদের যত্ন নিতে হবে। ড্রাইভারদের বলবো, দুর্ঘটনায় শুধু মানুষের জীবন যায় তা না, নিজেরও তো ক্ষতি হয়। গতি মেনে চলতে হবে। সড়কে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে।’সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা তাদের সহায়তা করছি।’এসময় কক্সবাজার প্রান্তে সংযুক্ত ছিলেন জেলা প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো শাহে আরেফিনসহ সরকারি বিভন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ ছিলেন। পরে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
সড়ক বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, মাতামুহুরী সেতুর তিন লেনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের শুরুতে যানবাহন চলাচলের জন্য প্রাথমিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। তিন লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরুর পর ভেঙে ফেলা হয় পুরনো দুই লেনের জরাজীর্ণ সেতুটি। ওই স্থানে শুরু করা হয় বাকি তিন লেনের নির্মাণকাজ। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে মাতামুহুরীসহ চারটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড ইমপ্রুভমেন্ট নেটওয়ার্কের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপক জুলফিকার আহমেদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়কের চারটি সেতুর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছয় লেনের মাতামুহুরী সেতুর কাজ শুরু করা হয়। অনেক আগে সেতুটি শতভাগ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইন্টারন্যাশনালের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ছয় লেনের সেতুগুলোর মধ্যে মাঝখানের চার লেনে চলাচল করবে দূরপাল্লার ও দ্রুতগতির যানবাহন। বাকি দুই লেন দিয়ে চলবে ধীরগতির তথা স্থানীয় যানবাহন। এছাড়া এই দুই লেনে (উভয় পাশে) ফুটপাত হিসেবে ব্যবহারের জন্য এক মিটার করে উন্মুক্ত থাকবে। তিনি জানান, মাতামুহুরী সেতুর পূর্ব প্রান্তে মহাসড়কের জিদ্দাবাজার পর্যন্ত (কাকারা রাস্তার মাথা) এবং পশ্চিম প্রান্তে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কার্যালয় পর্যন্ত অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
এদিকে সচেতন মহল বলছেন, ডেল্টা প্ল্যানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ছয় লেনের এই সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়। এতে করে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। চকরিয়া পৌর শহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র চিরিঙ্গায় দূরপাল্লার যানবাহনের চাপ কমে এসেছে।