হানিফ সাকিব, হাতিয়া :
হাতিয়া উপজেলায় জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ব্র্যাকের আয়োজনে টিবি, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি এবং কোভিড-১৯ কার্যক্রমের উপর ওরিয়েন্টশন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে সোনাদিয়া ইউনিয়নের চরচেঙ্গা বাজারে হোসেন এ. রব পাঠাগারের সেমিনার কক্ষে এই ওরিয়েন্টশন সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে টিবি, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি ও কোভিড-১৯ কার্যক্রম এবং সচেতনতা তৈরির উপর আলোচনা করেন হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা: খালেদ সাইফুল্লাহ ফয়সাল, যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসুচির ব্রাক হাতিয়া শাখার প্রোগ্রাম অর্গানাইজার মো: ইব্রাহিম খলিল, সংস্থাটির প্রোগ্রাম অর্গানাইজার ইরাক উদ্দিন, মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, প্রোগ্রাম অফিসার আনোয়ার ইসলাম রুবেল।
ওরিয়েন্টেশনে ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ ও গ্রাম্য চিকিৎসকরা অংশ নেন। সভায় বিভিন্ন বক্তারা বলেন, দেশে এখনো বড় একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যক্ষা। এ রোগে শুধু যে নিম্নআয়ের মানুষেরাই আক্রান্ত হচ্ছে, তা কিন্তু নয়, যে কারোরই হতে পারে যক্ষা। করোনার চেয়ে বেশি ভয় যক্ষা, এইচআইভি ও ম্যালেরিয়ায়।
কর্মশালায় বলা হয়, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার চিত্র বদলে দিয়েছে। কিন্তু করোনার চেয়েও বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে আরেকটি রোগ, যার নাম যক্ষা। ওরিয়েন্টশন সভায় তথ্য প্রকাশ করে জানানো হয়, বিশ্বে প্রতিবছর যক্ষায় মারা যায় ৪০ হাজারের বেশি মানুষ। বিশ্বে যক্ষায় আক্রান্ত মোট রোগীর দুই-তৃতীয়াংশ যে আটটি দেশে আছে, তারই একটি বাংলাদেশ। এদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩ লাখ মানুষ যক্ষায় আক্রান্ত হন এবং এর মধ্যে ৭০ হাজার রোগী মারা যান।
করোনাভাইরাস আসার আগ পর্যন্ত যক্ষার আরো দুটি ভয়ংকর বন্ধু হিসেবে ছিল এইচআইভি ও ম্যালেরিয়া। গত এক দশকের মধ্যে ২০১৮ সালে এ দুটি রোগে মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড গড়েছিল। তবে বর্তমানে করোনাভাইরাস ধাক্কা দিয়েছে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে। ফলে যক্ষা, এইচআইভি ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে অবহেলা দেখানোয় এগুলো বড় হুমকি হয়ে উঠে আসতে পারে। কাজেই একমাত্র সচেতনতা ও যথাসময়ে সুচিকিৎসাউ পারে যক্ষা, এইচআইভি ও ম্যালেরিয়া থেকে রক্ষা পেতে।
ওরিয়েন্টশন সভায় টানা তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি, শুকনো কিংবা কফযুক্ত, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, বুকে ব্যথা, ওজন হ্রাস, অবসাদ, অরুচি, সন্ধ্যায় বা রাতে হালকা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর (৯৯-১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট) কিংবা রাতে ঘাম হলে অবশ্যই যক্ষা সন্দেহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত।
এতে বলা হয়, চিকিৎসায় যক্ষা সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়। দুই ধরনের ক্যাটাগরিতে যক্ষার চিকিৎসা দেওয়া হয়। একটি ক্যাটাগরিতে ছয় মাস ধরে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। অপর ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে ৮-৯ মাস ধরে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়।
যক্ষা প্রতিরোধে জন্মের পরপরই প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়া উচিত। হাঁচি, কাশি ও কফের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। তাই রাস্তা-ঘাটে হাঁচি-কাশি এলে মুখে রুমাল চাপা দেওয়া উচিত এবং যত্রতত্র কফ-থুথু ফেলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
যক্ষায় আক্রান্ত রোগীকে যথাযথ পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। শ্লেষ্মায় জীবাণুবাহী যক্ষার ক্ষেত্রে রোগীকে অন্তত ২ সপ্তাহ আলাদা রাখতে হবে এবং রোগীর মুখে সব সময় মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। চিকিৎসা চলাকালীন রোগীকে নিয়মিত ফলোআপে রাখা জরুরি।