@ সালেহ আহমদ স’লিপক @
মাধবপুর ট্যুরিজম ক্লাব (এমটিসি) ২০২২ সালের ১৮ মার্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত অনেকগুলো ইভেন্ট সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এর প্রতিষ্ঠাতা ভ্রমণ পিপাসু কায়সার হামিদ। যিনি এমটিসি প্রতিষ্ঠার অনেক পূর্ব হতেই বিভিন্ন নামে বেনামে, ব্যানারে বা ব্যানার ছাড়াও দেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এলাকায় চষে বেড়িয়েছেন। কখনো একা, কখনো দু’চার জন বন্ধুবান্ধব, আবার কখনো বিশাল টিম নিয়ে।
এমটিসি ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে কায়সার হামিদ প্রতিষ্ঠাতা ও গ্রুপ এডমিনের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও অ্যাডভাইজারের দায়িত্বে আছেন কেশব রায়। রাজু চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম শামীম, সোহেল খান ও আরিফুল সুমন কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কায়সার হামিদ হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা শহরে বসবাস করেন। তার পিতা ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের একজন এসআই। আউয়াল দারোগা নামে তাকে সবাই চিনেন। পিতার চাকুরী সূত্রে ছোটবেলা থেকেই কায়সার বিভিন্ন জেলায় ঘুরেছেন, থেকেছেন এবং পড়াশোনা করেছেন। আউয়াল দারোগা যখন চাকুরীসূত্রে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় বদলি হয়ে এলেন, তখন কায়সার সদ্য কৈশোরে পা রাখা টগবগে এক কিশোর।
সেই কিশোর বয়স থেকেই কায়সার হামিদ ভ্রমণ পিপাসু। প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্যগুলো তাকে কাছে ডাকতো। পড়াশোনার পাশাপাশি একটু সময় সুযোগ পেলেই কায়সার বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়তো পাহাড় পর্বত দর্শনে। কিংবা বাসার পাশে কুশিয়ারা নদীতে নৌভ্রমণে।
সেই দুরন্তপনা সময়েই কায়সারের সাথে আমার পরিচয় ঘটে। সে সুযোগ পেলেই মৌলভীবাজার ছুটে আসতো আমার কাছে। কখনো আমাকেই যেতে হতো ফেঞ্চুগঞ্জ তাদের কোয়ার্টারে। সেখান থেকে বেড়িয়ে পড়তো আমাকে নিয়ে অজানাকে জানার উদ্দেশ্যে। অনেক রাত কাটিয়েছি তার সাথে। অনেক খেয়েছি তাদের বাসায়। অনেক জ্বালিয়েছি বাসার সবাইকে। কেউ কোনদিন রাগ করেনি। তার মা, ভাইবোনের আদর সোহাগ আজও ভুলিনি।
কায়সার মৌলভীবাজার এসেই প্রথমে আমাকে নিয়ে যেতো ম্যানেজার স্টলে। সেখানে দই-মিষ্টি খেয়ে আমরা রওয়ানা দিতাম বিভিন্ন পাহাড় বা মনোরম প্রাকৃতিক কোন স্থানে। সেখান থেকে ফিরে আমাকে বাসায় দিয়ে সে ফেঞ্চুগঞ্জ কোয়ার্টারে ফিরতো। এতো দুরের পথ কায়সার কখনো বাসগাড়িতে আবার কখনো মোটরসাইকেলে যাতায়াত করতো। সে মাধবপুর স্থায়ীভাবে বসবাসের পরও আমি ওখানে অনেকবার যাতায়াত করেছি। সময়োভাবে এখন আর আগের মতো যেতে পারিনা। তবুও আমাদের বন্ধুত্ব এখনও অটুট আছে, ঠিক আগের মতো। মুঠোফোনের কল্যাণে এখনও নিয়মিত যোগাযোগ হয়। এ সম্পর্ক থাকবে আমৃত্যু।
কায়সার হামিদ মাধবপুরে প্রথমে কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৯৯ইং সালে। যার নাম ছিল কম্পিউটার গার্ডেন। পরে ইসলামপুর কলেজে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় জাতীয় যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (ফার্মগেট) প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারি টেলিকম “ইতিসালাত” এ সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দুই বছর কাজ করেন। সেখান থেকে ইস্তফা দিয়ে কিছুদিন পর দেশের স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান সায়হাম গ্রুপের প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের সহকারি ব্যবস্থাপক পদে ২০১১ইং সালে যোগদান করেন । গত ২০২১ সালের জুন মাসে স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসর নেন। যার হৃদয়ে মিশে আছে ভ্রমণের পিপাসা, সে কি বন্দী থাকতে পারে কোন এক নিদ্রিষ্ট গন্ডিতে! কায়সারের বেলাও তা-ই হয়েছে। সায়হাম গ্রুপের চাকুরী থেকে ইস্তফা দেয়ার পর ২০২২ সালের ১৮ মার্চ ভ্রমণপিপাসু কায়সার প্রতিষ্ঠা করেন মাধবপুর ট্যুরিজম ক্লাব (এমটিসি)।
বাংলাদেশের কিছু উল্লেখযোগ্য স্থানে ভ্রমণ পিপাসুরা সবসময় ভ্রমণ করে থাকেন। যেমন কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, বান্দরবান, রাঙামাটি, জাফলং, ভোলাগঞ্জ, সাজেক, মাধবকুণ্ড, মাধবপুর লেক, কোটবাড়ি, কুয়াকাটা, সুন্দরবন ইত্যাদি। এসব স্থানগুলোতে এমটিসির নিয়মিত ইভেন্ট থাকলেও মাঝেমধ্যে টুরিস্টদের ভিন্ন কিছু জায়গা ভ্রমণ করানোর পরিকল্পনা করে থাকে এমটিসি।
মাধবপুর ট্যুরিজম ক্লাব (এমটিসি) এ পর্যন্ত মোট ৩০টি ইভেন্ট সম্পন্ন করেছে। যেসব স্থান পরিভ্রমণ করা হয়েছে তার একটি প্রোফাইল তুলে ধরা হলো- প্রথম ইভেন্ট সেন্টমার্টিন মাত্র ৫জন, ২য় জাফলং ৪৫জন ১টি বাস, ৩য় বান্দরবান ৪৫জন ১টি এসি বাস, ৪র্থ রাঙ্গামাটি ৪৫জন ১টি এসি বাস, ৫ম কুয়াকাটা ৪০জন ১টি এসি বাস, ৬ষ্ঠ মেঘালয় (ভারত) ভ্রমণ ৫জন, ৭ম ভোলাগঞ্জ ৪৫জন ১টি বাস, ৮ম সাজেক ৪৫জন ১টি এসি বাস, ৯ম কক্সবাজার ৪৬জন ১টি স্লিপার এসি বাস, ১০ম সোনারগাঁ ৪৫জন ১টি বাস, ১১তম লেমন গার্ডেন ৪০জন ১টি বাস, ১২তম ভোলাগঞ্জ ৪৭জন ১টি বাস, ১৩তম সুন্দরবন ৮০জন ২টি এসি বাস, ১৪তম সোনারগাঁ ১২০জন ৩টি বাস, ১৫তম সোনারগাঁ ৪০জন ১টি বাস, ১৬তম মাওয়া পদ্মা সেতু ২০৫জন ৪টি বাস, ১৭তম ভোলাগঞ্জ ৪৫জন ১টি বাস, ১৮তম সিকিম দার্জিলিং ৮জন, ১৯তম সেন্টমার্টিন ১০০জন ২টি এসি বাস, ২০তম কক্সবাজার ৪৫জন ১টি বাস, ২১তম জাফলং ৪৫জন ১টি বাস, ২২তম আগরতলা ৫ জন, ২৩তম ড্রিম হলিডে পার্ক ৪৫জন ১টি বাস, ২৪তম রাজশাহী ৪০জন ১টি এসি বাস, ২৫তম ভোলাগঞ্জ ৫০জন ১টি বাস, ২৬তম বান্দরবান ও কক্সবাজার ৮০জন ২টি এসি বাস, ২৭তম ভোলাগঞ্জ ১০৫জন ২টি বাস, ২৮তম সাজেক ৪০জন ১টি এসি বাস, ২৯তম চাঁদপুর ইলিশ ইভেন্ট ৩০জন ১টি বাস ও ৩০তম কুয়াকাটা ৪০জন ১টি বাস।
এর মধ্যে রয়েছে ৮টি কর্পোরেট ট্যুর। কর্পোরেট ট্যুরগুলো হচ্ছে- ১) মাধবপুর উপজেলা প্রেসক্লাব ১টি বাস, ২) আইএফআইসি ব্যাংক ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখা ১টি বাস, ৩) উপজেলা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ৩টি বাস, ৪) বাংলাদেশ কিন্ডার গার্ডেন এসোসিয়েশন মাধবপুর উপজেলা শাখা ১টি বাস, ৫) মাধবপুর উপজেলা ফার্মাসিটিক্যালস ম্যানেজারস ফোরাম ১টি বাস, ৬) আসামপাড়া মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ১টি বাস, ৭) মাধবপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক পরিবার ৪টি বাস এবং ৮) সায়হাম গ্রুপের ১০৫জন সদস্য নিয়ে ভোলাগঞ্জ ট্যুর।
“ভ্রমণ মানুষের মনের খোরাক যোগায় আর এই খোরাক মানুষকে বাঁচতে শেখায়”, “ঘুরে দেখি নিজের দেশ, কত সুন্দর বাংলাদেশ” ও “মনে প্রশান্তি আনার জন্য এবং দুঃখ-কষ্ট ভুলার জন্য নেশা নয়, বেশি বেশি ভ্রমণ করুন” এইসব স্লোগান নিয়ে পথচলা মাধবপুর ট্যুরিজম ক্লাব (এমটিসি) ইতিমধ্যে রাজশাহী আমবাগানের একটি ইভেন্ট সম্পন্ন করেছে। যা ভ্রমণপিপাসুদের মাঝে সাড়া ফেলে দিয়েছে। কিছুদিন আগে চাঁদপুরে সরাসরি নদী থেকে কিভাবে ইলিশ মাছ ধরা হয় তা নিয়ে একটি ইভেন্ট করেছে তারা। আগামীতে আরও কিছু ব্যতিক্রমী ইভেন্ট আসছে খুব শীঘ্রই। যেখানে মাধবপুরের অনেকের-ই ভ্রমণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন এমটিসি এর প্রতিষ্ঠাতা স্বত্ত্বাধিকারী কায়সার হামিদ।
৩১তম ইভেন্ট আগামী ১২ অক্টোবর ৪০জন নিয়ে কক্সবাজারে। এমটিসির প্রথম ইভেন্ট ছিলো ৫জন ট্যুরিস্ট নিয়ে সেন্ট মার্টিনে। যাত্রার তারিখ ছিলো ২২ মার্চ ২০২২ সাল। হাটিহাটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছে মাধবপুর ট্যুরিজম ক্লাব (এমটিসি)। অজানাকে হচ্ছে জানা, অচেনাকে হচ্ছে চেনা, অদেখাকে হচ্ছে দেখা। স্বল্প সময়ে তাদের পথচলায় ক্রমান্বয়ে দীর্ঘ হচ্ছে ভ্রমণ তালিকা। এমটিসির এ ভ্রমণ তালিকার ক্রমিক নম্বর শত থেকে হাজারের ঘর অতিক্রম করুক এ প্রত্যাশা আমাদের।
সালেহ আহমদ (স’লিপক): সাংবাদিক, গীতিকার, আহবায়ক- আমরা মাদক নিবারণ করি (আমরা মানিক)।