ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষার গন্ডি না পেরিয়ে মাওলানা পরিচয়, জনমনে বিভ্রান্তি

সালেহ আহমদ (স’লিপক), সিলেটঃ

 

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর গ্রামে কোন রকম ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করা বাপ ছেলে সনদ বা সার্টিফিকেট বিহীন মাওলানা পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমন অভিযোগের ঢাকনা খুলছে আব্দুল জলিল ও তার বড় দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। তারা কোন মাদ্রাসায় কামিল বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাস না করেই মনগড়া নামের সাথে লিখছেন মাওলানা। মাওলানা হতে বা নামের সাথে ব্যবহার করতে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ রয়েছে মাদ্রাসায় কামিল যা বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সমমান পাসের বেলায়। সম্বোধনের জন্য ব্যবহৃত হয় মাওলানা। এলাকায় এমন সম্মানী যোগ্যতার অপব্যবহার নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের কারণে প্রকৃত মাওলানারা প্রতিনিহত হচ্ছেন নানা প্রশ্নের সম্মুখীন। ভ্রান্ত ধারণা বিরাজ করছে জনমতে।

 

এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, আব্দুল জলিলকে স্কুল মাদ্রাসায় খুব একটা বেশিদিন লেখাপড়া করতে দেখেননি কেউ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার আত্মীয় এক মহিলা (ফখরুলের মা) জানান, তার কাছ থেকে ইসলামী শিক্ষা নিয়ে পড়েছিলেন কিছু দিন। তারপর মুদির দোকান খোলে ব্যবসায় মনযোগী হন জলিল মোল্লা। পরে কালাপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা নামক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করে এর প্রতিষ্টাতা হন তিনি। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। কোন শিক্ষক ছাড়াই বাপ ছেলের শিক্ষকতায় চলছে হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থীদের নিয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি।

 

২০১৪ সালে হাজী আলফত মিয়া এতিমখানা নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। এখানেও ডালপালা মেলে গজিয়ে উঠে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি। এতিম ছাড়াই চলতে থাকে এতিখানা। এলাকার অধিকাংশ বাচ্চাদের জীবিত পিতাদের অজান্তে মৃত দেখিয়ে এতিম বানিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠে বাপ ছেলের উপর। এমন লেবাসের আড়ালে রয়েছে বাপ ছেলের চড়াও সুদের রমারমা ব্যবসা।

 

কালাপুর গ্রামের লোকমান মিয়া জানান, আব্দুল জলিল মোল্লার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা এনেছিলেন। বিনিময়ে ৫ মাস পর সুদ দেন ৯০ হাজার টাকা। এব্যাপারে এলাকায় অনেক সালিশ বৈঠকও হয়েছে।

শ্রীমঙ্গল শহরের পোস্ট অফিস রোডস্থ সাইফুর রহমান সুপার মার্কেটে রয়েছে তার বড় ছেলে দেলোয়ার হোসেনের সুদের কারবারে জন্য মোটা অঙ্কের টাকার বিনিয়োগ। প্রতি মাসে ১ লাখ টাকায় তিনি সুদ নেন ৩ হাজার টাকা।

 

শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য অজয় সিং বলেন, জলিল নুরী সাহেবের ছেলে দেলোয়ার হোসেনের নিকট থেকে আমি কিছু টাকা এনেছিলাম। ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্থ হলে আমি আসল টাকা এবং লাভের কিছু টাকা পরিশোধ করার পরও আরও লাভের টাকার জন্য আমাকে চাপ দেয়া হয়। পরে তার পিতার উপস্থিতিতে ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ কামাল হোসেনের অফিসে সালিশ হয় এবং আরও কিছু সুদের টাকা আমি পরিশোধ করি।

 

এব্যাপারে শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ কামাল হোসেন শালিসের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমার অফিসে দেলোয়ার হোসেনের সাথে অজয় সিং এর একটি বিচার বৈঠক হয়েছে।

 

এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ব্যবসায়ীরা দেলোয়ার হোসেনের সুদের ব্যাপারে জানান। কিন্তু মুখ খুলতে সাহস পাননি কেউ। তার বিরোদ্ধে মুখ খুললে হামলা মামলার স্বীকার হতে হয়। তার এমন তথ্যের বিষয় নিয়ে কথা বলায় জলিল মোল্লার মালয়েশিয়া প্রবাসী ছেলে এর বউকে মিথ্যা পরকিয়ার অপবাদ তোলে ৩ বছরের শিশু সন্তানসহ মারধর করে ঘর ছাড়া করেন।

 

এ ব্যাপারে তার পুত্রবধু ঝুমি আক্তার বাদী হয়ে মৌলভীবাজার আদালতে মামলা দায়ের করেন মামলা নং ২৪৩/২৩। মামলা দায়ের করে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন তিনি। এই মামলায় তার ছেলে আজমান হোসেন ১ মাস ৪ দিন হাজত বাস করে। তারপর জামিনে বের হয়ে এসে ফেইসবুকে নানা অপপ্রচার করছে। মামলা দায়ের পর ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যের উপর পরপর ৩টি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন আব্দুল জলিল।

 

তার পুত্রবধু ঝুমি আক্তার আরও জানান, টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে শমশেরনগর থেকে মহিলা এনে আমার পরিবারের বাবা ভাইদের উপর মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা করেছেন আমার শ্বশুড়। এমন তথ্য জানান কালাপুর গ্রামের সুনু মিয়ার মেয়ে ভুক্তভোগী ঝুমি আক্তার।

 

এব্যাপারে কালাপুর মাদ্রাসা ও এতিমখানার পরিচালক আব্দুল জলিলের কাছে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কামিল পাস করছেন এমন সনদপত্র বা সার্টিফিকেট আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেন নি। এর বাহিরে কতটুকু লেখাপড়া করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি।

 

জলিল নূরীর ছেলেরা লেখাপড়া করেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিরাজনগর গাউছিয়া জালালিয়া মমতাজিয়া ছুন্নীয়া ফাযিল (ডিগ্রী) মাদরাসায়। এব্যাপারে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শেখ শিব্বির আহমদ বলেন, আব্দুল জলিল খুব সম্ভবত সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন বলে শুনেছি। তার পুত্র দেলোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য ছেলেরা আমাদের মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিলেন। তারা কেউ দাখিল পাশও করেননি। এর আগেই লেখাপড়া ছেড়ে দেয়।

 

কালাপুর এলাকার স্থানীয়রা দীর্ঘদিন যাবৎ মাওলানা মনে করে অনেকে আব্দুল জলিল নূরী ও তার ছেলেকে তাজিম সম্মান করতেন। তাদের এমন কীর্তিকলাপ প্রকাশ হলে মানুষের মধ্যে কানাঘুঁষা বিরাজ করছে।

 

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪