বিশেষ প্রতিনিধি:
কুলসুম বেগম তার তিন সন্তানকে উদ্ধারে টাঙ্গাইলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গেল ১৭ আগষ্ট একটি মামলা (১২২২/২৩) দায়ের করেন। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী থেকে জানা যায়, তার ৩ সন্তানকে জোরপূর্বক আটকে রেখেছে তার দেবর আজমত আলী, আবুল এবং ননদ ফাতেমা খাতুন। এছাড়াও স্থানীয় আ’লীগ নেতা আব্বাস আলীকেও মামলায় আসামী করা হয়। কুলসুম তার তিন সন্তানের মধ্যে কন্যা অনিক ( ১১), পুত্র কাউসার (১০) ও ওসমান (৭) কে আটকে রেখেছে মর্মে ১০০ ধারায় আসামীদের কবল থেকে উদ্ধারের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর আসামীদের আদালতে উপস্থিত হয়ে জবাব দিতে আদেশ প্রদান করেন।
জানা যায়, প্রায় ২০ বছর পূর্বে মুক্তাগাছা উপজেলার খাজুলিয়া এলাকার মৃত: জাবেদ আলী মন্ডলের পুত্র আছর আলীর সাথে মধুপুর উপজেলার আউশনারা চুনিয়াপাড়া এলাকার আবু মুসার কন্যা কুলসুম আক্তারের বিয়ে হয়। এর আগে খাজুলিয়া এলাকার মৃত ঈমান আলীর কন্যা মুর্শিদাকে বিয়ে করেছিলেন আছর আলী। আছর আলী ও মুর্শিদা দম্পতির ঘরেও এক ছেলে এবং এক কন্যা সন্তান রয়েছে। মুর্শিদা অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার পর আছর আলী পূনরায় কুলসুমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আছর আলী ও কুলসুম দম্পতির ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করে ৪ সন্তান। ২ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তান নিয়ে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন তিনি।
২০২২ সালে আছর আলী মারা যান। এরপর স্বামীর বাড়িতেই সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছিলেন কুলসুম। স্বামী মারা যাওয়ার মাস তিনেক পর কুলসুম ঢাকায় চলে যান কাজের সন্ধানে। ঢাকায় গিয়ে আবারো অন্যত্র বিয়ে করেন কুলসুম। বিয়ের কিছুদিন পর পূর্বের স্বামীর বাড়িতে থাকা জিনিসপত্র নিতে আসেন। বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হলে নড়েচড়ে বসেন তার স্বামীর বাড়ির লোকজন। যেহেতু কুলসুম আবার বিয়ে করে ফেলেছেন তাই তার স্বামীর যা কিছু আছে তা সন্তানদের মাঝে সমানভাবে বন্টন করে দেওয়ার কথা বলেন স্থানীয় মাতব্বররা কিন্তু কুলসুম তা মানতে নারাজ ছিলেন। সবকিছুই নিজের কাছে নিতে মুক্তাগাছা থানায় একটি অভিযোগ করেন। তাতেও জিনিসপত্র উদ্ধারে ব্যর্থ হন। সবশেষে বাচ্চা আটকে রাখার ঘটনা সাজিয়ে টাঙ্গাইলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এবিষয়ে মৃত আছর আলীর ভাই ও মামলার ১ নং আসামী আজমত আলী জানান, আমার ভাই প্রথমে বিয়ে করেছিলেন সেই ঘরেও ২ সন্তান রয়েছে। মাতব্বররা আমার ভাইয়ের রেখে যাওয়া আসবাবপত্রসহ সবকিছু তার সন্তানদের মাঝে সমহারে বন্টন করে দেওযার কথা বললে কুলসুম তাতে রাজি না হয়ে তার তিন সন্তানকে নিজের কাছে রেখেই উল্টো বাচ্চাদের উদ্ধারে আদালতে মামলা করেন। আমি, আমার ভাই আবুল ও বোন ফাতেমা এবং আ’লীগ নেতা আব্বাস আলীকে মামলায় আসামী করা হয় ।
এবিষয়ে জানতে সরেজমিনে কুলসুমের পিত্রালয়ে গেলে কুলসুম বলেন, ‘মামলা করছি, পোলাইপাইন চলে আইছে, এহন জিনিসপাতি আনমু।’আপনি তো সন্তানদের উদ্ধারে মামলা করেছেন তাহলে জিনিসপত্র আনবেন কীভাবে’ এমন প্রশ্নের জবাবে কুলসুম বলেন, জিনিসপত্র উদ্ধারের কথাও মামলায় আছে।’
এবিষয়ে কুলসুমের বাবা আবু মুসা বলেন, ‘মামলা করেছে আমরা আগে জানিনা। পরে শুনেছি।’কুলসুম ও আছর আলী দম্পতির ৩ সন্তান তার নিজ বাড়িতেই আছেন বলেও জানান আবু মুসা।
আউশনারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে আউশনারা চুনিয়া পাড়া তার ইউনিয়ন পরিষদের আওতাভুক্ত কিনা তা জানেন না বলে জানান। পরবর্তীতে থানায় মিটিংয়প আছেন বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে দাওগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার জামাল উদ্দিন বাদশা বলেন, ‘মৃত আছর আলীর স্ত্রী কুলসুম বাচ্চা উদ্ধারে মামলা করেছেন বলে শুনেছি। তবে বাচ্চাগুলো নিজের কাছে রেখে যদি মামলা করে থাকেন তাহলে এটা খুবই ঘৃনিত কাজ করেছে।’