ই-পেপার | শুক্রবার , ১৪ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই, থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি, ফরিদপুর

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গ্রীন (প্রাঃ) হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অমি আক্তার (১৮) নামের এক প্রসুতীর সিজারের সময় পেটের মধ্যে গজ রেখে সেলাই দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার বিকেলে (২৭ আগষ্ট) এ বিষয়ে ভুক্তভোগির স্বামী তুষার মিয়া ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় অভিযোগ দেন। তবে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষের কে.এম মফিজুর এ বিষয়ে ফোনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ মার্চ বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তারঁ স্ত্রীকে সিজারের জন্য ভাঙ্গা গ্রীন (প্রাঃ) হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করান। সেখানে ডাক্তার তামান্না হাসান ও ডাক্তার গোপাল দাসের তত্বাবধানে তাঁর স্ত্রীর অপারেশন করা হয়। এসময় তাঁর একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। তারপর ২৭ মার্চ তার স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হলে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়িতে চলে যান। কিছুদিন পর তাঁর স্ত্রীর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে গ্রীন হসপিটালের সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রীকে পুনরায় হসপিটালে নেওয়া হয়। এসময় আবারো কিছু পরিক্ষা-নিরীক্ষা করেন তারা। কিন্তু এতে রোগীর সঠিক কোন সমস্যা নির্ণয় করতে না পেরে বরং তুষারকে বলা হয় তাঁর স্ত্রীর থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরে সেখান থেকে ফরিদপুরের এক অভিজ্ঞ ডাক্তারকে দেখানো হলে তিনি জানান, তাঁর স্ত্রীর থাইরয়েডের কোন সমস্যা নাই। এভাবেই কয়েকমাস যাবত তাঁর স্ত্রীর পেটের যন্ত্রনায় ভোগেন। একপর্যায়ে, গত ২৩ আগষ্ট তাঁর স্ত্রী মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার ল্যাবএইডে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরিক্ষা-নিরীক্ষার পর অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তাঁর স্ত্রীর সঠিক সমস্যা নির্ণয় করতে সক্ষম হন এবং তাঁর স্ত্রীর পেটের মধ্যে গজ ও মলমূত্র রয়েছে বলে জানান। এরপর সেখানে পুনরায় তাঁর স্ত্রীকে অপারেশন করার মধ্য দিয়ে পেটে থাকা গজ ও মলমূত্র বের করা হয়। এতে তুষার সামাজিক, মানষিক ও অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হন। পরবর্তীতে, এ ঘটনায় তাঁর পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে গ্রীন হসপিটালের সেবার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিলে তিনি জানতে পারেন, ওই প্রতিষ্ঠানে যে সকল ডাক্তারদের নাম বলে সিজার করানো হয়, সেসব চিকিৎসক দ্বারা রোগীদের অপারেশন না করিয়ে অনভিজ্ঞ ডাক্তার ও নার্স দিয়ে সিজার করানো হয়। যেমনটি তাঁর স্ত্রীর বেলায় ঘটেছে বলেও অভিযোগ করেন তুষার মিয়া

 

এ ঘটনায় উল্লেখিত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থাসহ সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান তুষার ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

 

এবিষয়ে অভিযুক্ত ডাক্তার তামান্না হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ও একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির মালিক পক্ষের কে,এম মফিজুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে এবিষয়ে মুঠোফোনে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অভিযোগের কোনো সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান তিনি।

 

এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রাণেশ পন্ডিত জানান, একটি অভিযোগ পেয়েছি, এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন জানান, অভিযোগের সত্যতা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বিষয়টির তদন্তকারী কর্মকর্তা, থানার উপপরিদর্শক গোলাম কিবরিয়া জানান, ঘটনার তদন্তে তিনি সরেজমিনে কাজ করছেন।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার শাহজাহান জানান, এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪