নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার:
ঘুষ- দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে রামু সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। সাব রেজিস্ট্রার সাহেদ হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে উঠেছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। তিনি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যোগ দেওয়ার পর থেকেই নানা অনিয়মে জড়িয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রেজিস্ট্রি দলিলে সরকারিভাবে প্রতি লাখে পে-অর্ডার করতে হয় সাড়ে ৭%। কিন্তু দলিল গ্রহীতার কাছ থেকে ৯ থেকে ১০% হারে টাকা আদায় করা হচ্ছে। অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব এ্যাটর্নিতে পে-অর্ডার করতে হয় মাত্র ২ থেকে ৩ হাজার। অথচ গ্রহীতার কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা । এছাড়া কমিশনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করতে ৪০-৫০হাজার টাকা নিয়ে থাকেন।
এছাড়া সরকারী নির্ধারিত পে-অর্ডার ছাড়া অতিরিক্ত সাব-কবলা থেকে ১ হাজার, প্রতিটি দলিলের চালান থেকে হাফ%, রেজিস্ট্রার্ড বায়না নামা থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা, হেবা দলিল থেকে ২০ হাজার টাকা, ব্যাংকের মর্গেজ দলিল থেকে ২০ হাজার টাকা, এওয়াজ নামা, অংশনামা দলিল থেকে অতিরিক্ত ৫০ থেকে ১ লক্ষ টাকা ঘুষ নেন এবং সুযোগ বুঝে অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞা, জাতীয় পরিচয়পত্র আরএস পর্চার সাথে নামের অক্ষর ভুল সংশোধনের অজুহাতে ও ধমক দিয়ে প্রতিটি দলিল থেকে ৫০ থেকে ১ লক্ষ টাকা আদায় করেন। এসব অনৈতিক ঘুষ বাণিজ্যে সহযোগিতা করেন অফিসের মোহরার সঞ্জিত ও অফিস সহকারী কৃষ্ণা। না হলে সাব-রেজিস্ট্রার সাহেদ হোসেন চৌধুরী দলিল রেজিস্ট্রি করেন না। মোটা অঙ্কের ঘুষ ছাড়া এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে ফাইল আদান প্রদানও হয় না বলে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ রয়েছে।
জমি রেজিস্ট্রি বাবদ সাব-রেজিস্ট্রারের বেধে দেয়া নির্ধারিত অংকের টাকা না পেলে দলিলে স্বাক্ষর করেন না তিনি। সচেতন মহলের কেউ অতিরিক্ত টাকা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে ডকুমেন্টপত্রে ভুল-ত্রুটিসহ নানা অজুহাতে দলিল প্রত্যাখ্যান করেন, তাই উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দলিল সম্পাদন করতে হয় ভুক্তভোগীদের।
জানা গেছে , দলিল লেখক সমিতির পদে থাকা দুই চার জন আছেন যারা নিজ সুবিধা ভোগের কারণে সাব-রেজিস্ট্রারকে নানা সহযোগিতা ও সাহস যুগিয়ে থাকেন, আর এই সাহসে টাকার নেশায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন সাব-রেজিস্ট্রার সাহেদ হোসেন চৌধুরী । এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রামুর সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা জালাল আহমদ বলেন, সাব- রেজিস্ট্রারের সংকেত ছাড়া কোনো দলিল নিবন্ধন হয় না। সরকারি আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে তিনি তার মনগড়া আইন তৈরি করে হয়রানি করছেন।
সাব-রেজিস্ট্রারের এসব কর্মকাণ্ডে দলিল লেখক থেকে শুরু করে দলিল দাতা ও গ্রহীতারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। ফলে সরকার বিশাল অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, তার নিষ্কণ্টক জমি, তারপরও সাব-রেজিস্ট্রারের জন্য আলাদা করে ঘুষ দিতে হয়। জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দলিল লেখক বলেন, দলিল মূল্যে লাখ প্রতি ৯ -১০% আদায়কৃত অর্থে সাড়ে ৭% সরকারি পে-অর্ডার, দেড়% সাব-রেজিস্ট্রারকে দিতে হয়।
সচেতন মহলের দাবি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়ম ও দূর্নীতি অনেকটা ওপেন সিক্রেট। টাকার নেশায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন রামু সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তারা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রামুর সাধারণ মানুষ।
এদিকে দলিল রেজিস্ট্রিকারি ভূমি মালিকরা দুপুর ৩টার মধ্যে না আসলে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা হারে অতিরিক্ত ফি নিয়ে থাকেন। এবিষয়ে দুর্নীতি কমিশন দুদুক ও অডিট কমিটি গোপনে তদন্ত করলে সাব-রেজিস্ট্রারসহ তার অফিসের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসল মুখোশ উন্মোচন হবে।
জানতে চাইলে রামু সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সহকারী কৃষ্ণা ও মোহরার সঞ্জিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। এবিষয়ে জানতে সাব রেজিস্ট্রার সাহেদ হোসেন চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি কোন ধরনের সাড়া দেননি।