হোসেন বাবলা, চট্টগ্রাম :
চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত (মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়ক) নগরীর দ্বিতল সড়ক হিসেবে পরিচিত এই অংশে র্যাম্প নির্মাণে গাছ কাটার সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামজুড়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এ নিয়ে গত শনিবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়তে থাকেন নেটিজনরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি সশরীরে উপস্থিত হয়ে গতকাল ২রা এপ্রিল,সোমবার পোস্টার হাতে মানববন্ধন করেছেন সচেতন নগরবাসী।
সেখানে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে- এমন কয়েকটি সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তারা বলছেন, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে র্যাম্প নির্মাণের প্রয়োজন নেই। যদিও র্যাম্প নির্মাণে কোন শতবর্ষী গাছ কাটা হবে না বলে দাবি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালকের।
লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত পতেঙ্গামুখী র্যাম্প নির্মাণের জন্য ১৪ শতক জায়গা ব্যবহারে রেলওয়ের কাছে অনুমতি চেয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। গত ২৫ মার্চ সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে অনুমোদন চাওয়া হয়।
এসব গাছ কাটতে ইতোমধ্যে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে প্রস্তুতিও চ‚ড়ান্ত করেছে সিডিএ। এতে সাত প্রজাতির গাছ নিধনের পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন সড়কটিও নষ্ট হবে বলে মনে করছেন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী ও বিশেষজ্ঞরা। গাছগুলো না কেটে দৃষ্টিনন্দন সড়কটির সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন রেখে র্যাম্প নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভ‚-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী বলেন, টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড অংশে সিডিএ র্যাম্প নির্মাণের জন্য আমাদের কাছে ১৪ শতাংশ জায়গা চেয়ে আবেদন করেছে। আর গাছ কাটার বিষয়টি আমাদের না। সেটি পরিবেশ অধিদপ্তর বা বন বিভাগ মতামত দেবে।
এদিকে, বন বিভাগ থেকে গাছ কাটার অনুমতি সনদ পেয়েছে সিডিএ। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, সিডিএ র্যাম্প নির্মাণে কয়েকটি ছোট গাছ এবং গাছের ডাল কাটার জন্য আমাদের কাছে অনুমতি চেয়েছিল। ওখানে যেহেতু কোন শতবর্ষী গাছ নেই, আর বড় গাছগুলোর শুধু ডাল কাটবে বলে ওনারা উল্লেখ করেছেন, তাই আমরা তাদের অনুমতি দিয়েছি।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, নগরীর সিআরবি থেকে টাইগারপাসমুখী র্যাম্প নির্মাণে কোন শতবর্ষী গাছ কাটা হবে না। আমরা যে ৪৪টি গাছ কাটার অনুমতি চেয়েছি সবগুলো ছোট গাছ। যা দুই থেকে তিন বছর আগে লাগানো হয়েছে। শুধুমাত্র টাইগারপাস মোড়ের একটি শতবর্ষী গাছের ডালপালা কাটা হবে। তবে কোন গাছ কাটা হবে না।
উল্লেখ্য, গতবছরের ১৪ নভেম্বর নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৫ দশমিক ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুরুতে ফ্লাইওভারটির নাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থাকলেও পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে করা হয়। প্রায় সাড়ে চার মাস আগে নগরীর দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করা হলেও নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় এখনও যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়নি।
বিমানবন্দরকেন্দ্রিক যানজট নিরসনে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সিডিএ। তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে যার ব্যয় বেড়ে হয় ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
সর্বশেষে জানা গেছে যে, গতকাল সোমবার বিকেলে সিডিএ গাছ কাটার সিদ্ধান্ত সাময়িক স্থগিত করেছেন সিডিএ দপ্তরের সূত্র জানায়।